বয়স মাত্র ৯ বছর। সার্জিক্যাল গ্লাভস পরে তার ছোট্ট হাতে ভারী ট্যাটু গান ধরাটা বেশ কষ্টকর। তবে কম বয়সের এ বাধা তাকে আটকাতে পারেনি। নাপাত মিটমাকোর্ন তার ছোট্ট হাতে একজন পুরুষের ঊরুতে বেশ দক্ষতার সঙ্গে নিবিষ্ট মনে ট্যাটু বা উল্কি আঁকছিল।

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ট্যাটু এক্সপোতে নিজের বুথে বসে নাপাত বলছিল, ‘আমি ট্যাটুশিল্পী হতে চেয়েছিলাম। এ জন্য আমি ট্যাটু পারলার খুলেছি। আমি শিল্প পছন্দ করি। সুতরাং আমি উল্কি আঁকা পছন্দ করি।’

এক্সপোতে নাপাতকে নিয়ে সবার বেশ আগ্রহ। সে যখন সেবাগ্রহীতার উল্কি এঁকে দিচ্ছিল, তখন সেখানে অনেকে ভিড় করছেন। অনেকে তার কাজের ভিডিও করছিলেন।

থাইল্যান্ডে উল্কি কয়েক শতাব্দীর প্রাচীন ঐতিহ্য। দেশটির সব জায়গায় ট্যাটু পারলার দেখা যায়। এসব পারলারে প্রাচীন ও আধ্যাত্মিক উল্কির পাশাপাশি আধুনিক ও নিষিদ্ধ উল্কিও আঁকা হয়ে থাকে।

নাপাতের বাবা নাট্টাবুট স্যাংটঙ্গ বলেন, তাঁর ছেলের আরেকটি ডাকনাম আছে ‘নাইট’। শৈশবেই তিনি ছেলেকে প্রথাগত বিষয়ের বাইরে গিয়ে ট্যাটুশিল্পের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

৩৮ বছর বয়সী নাট্টাবুট বলেন, ‘আমি ছেলেকে কেবল মোবাইল থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলাম। কারণ, সে মোবাইলে গেম খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েছিল। অন্য কোনো কিছুর প্রতি তার তেমন মনোযোগ ছিল না।’

নাট্টাবুট নিজেও মোটামুটি উল্কি আঁকতে পারেন। বাবা-ছেলে মিলে টিকটক টিউটোরিয়ালস থেকে উল্কি আঁকার বিষয়টি আরও ভালোভাবে শিক্ষা নেন। সে অনুযায়ী কাগজে-কলমে অনুশীলন শুরু করেন। এরপর তাঁরা মানুষের ত্বকে উল্কি আঁকার আগে কৃত্রিম চামড়ার ওপর উল্কি আঁকার ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।

শিশু নাইট বলে, সে খুব দ্রুত উল্কি আঁকার কৌশল রপ্ত করতে পেরেছিল। কারণ, স্কুলে আঁকাআঁকির বিষয় ছিল তার সবচেয়ে প্রিয়। সন্তানের মেধার স্বীকৃতি দিয়ে নাট্টাবুট বলেন, তাঁর ছেলে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন দুই ঘণ্টা করে এখনো প্রশিক্ষণ নেয়।

নাট্টাবুট বলেন, এটি শুধু উল্কি আঁকার প্রশিক্ষণ নয়, এটি ধ্যানের বিষয়ও। বাবা-ছেলে মিলে টিকটক চ্যানেলও চালান, যার নাম ‘দ্য ট্যাটু আর্টিস্ট উইথ মিল্ক টিথ’। এই চ্যানেলে নাইটের উল্কি করার কাজ সরাসরি দেখানো হয়। প্রতিটি ভিডিওতে বেশ ভালো ভিউ পাওয়া যায় বলে জানান নাট্টাবুট।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পরদিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় এক ঘণ্টার এ আলাপচারিতা ‘বেশ ভালো ছিল’ বলে জানান তিনি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে জেলেনস্কি জোর দিয়েছেন– এটা কেবল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।

জেলেনস্কি জানান, তিনি ও ট্রাম্প জাপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র মার্কিন তত্ত্বাবধানে রাখার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে থাকা ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হতে দুই বছর সময় লাগবে। ইউরোপ ও ইউক্রেনের জন্য এ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা খুবই জরুরি।

বৃহস্পতিবার বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইউরোপের নেতারা। এ উপলক্ষে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে বৃহস্পতিবার ওসলো পৌঁছান জেলেনস্কি। একই দিনে লন্ডনে ২০ দেশের শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। ইউক্রেনের সমর্থনে গঠিত কোয়ালিশন অব উইলিংয়ের অংশ হিসেবে এ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা অংশ নিচ্ছেন।
 
ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে সৃষ্ট ফাটল আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য। কিন্তু সেখানেও রাজনীতিকরা এখন ভিন্নমত পোষণ করছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই সামনে এগোনোর কথা বলছেন। ইইউ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ব্রিটেনের রক্ষণশীল এমপি তোবাইস এলউড বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই আমাদের ভাবতে হবে। ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সাবেক এ সদস্য বলেন, ‘আমাদের সেই পৃথিবীর কথা চিন্তা করতে হবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পেছনে নেই।’

এদিকে ট্রাম্প-পুতিনের যে ফোনালাপ হয়েছে, তাতে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বে এ বছরই স্থায়ী শান্তি অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। জেলেনস্কি ট্রাম্পকে জানান, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে আংশিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি।

গত মাসের শুরুতে হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সফরের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদকে ঘিরে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, ফোনালাপের পর পরিস্থিতি তাঁর থেকে ভিন্ন বলে মনে করা হচ্ছে। ওভাল অফিসে বৈঠকের পর বুধবারই প্রথমবারের মতো দুই প্রেসিডেন্ট সরাসরি কথা বললেন।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানান, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আংশিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি। ইউক্রেন নতুন করে আরও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেয়েছে। তবে কতগুলো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান তারা পেয়েছে, তা জানাতে চাননি তিনি। ২০২৪ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান প্রথমবার পায় ইউক্রেন। সেগুলো ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস দিয়েছিল।

রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনে আংশিক যুদ্ধবিরতির কারিগরি বিষয় নিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ওয়াশিংটন ও কিয়েভের প্রতিনিধি দল সৌদি আরবে বৈঠক করবে। ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এ তথ্য জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেছেন, আংশিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও আওতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরি দিক সমাধানে আমাদের প্রতিনিধি দলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন ও ইউক্রেনীয় দল দ্রুতই সৌদি আরবে এক বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের ১৭৫ বন্দি বিনিময়
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ১৭৫ বন্দি বিনিময় হয়েছে। বুধবার তারা যুদ্ধের এক অন্যতম বৃহৎ বন্দি বিনিময় করেছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে গুরুতর আহত সেনা ও যোদ্ধা ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে রাশিয়ায় আটক রাখা হয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ