চলছে রোজার মাস। সারাদিন রোজা রেখে এ সময় অনেকেরই মাথাব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিনের রুটিনের অভ্যাস পরিবর্তন, শরীরে পানিশূন্যতার কারণেও মাথা যন্ত্রণা হয়। আবার যাদের ঘন ঘন চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে, তারাও রোজা রেখে এসব পানীয় খেতে পারেন না। এ কারণেও মাথা যন্ত্রণা হয়। ২০১১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রমজান মাসে রোজা রেখে অনেক ব্যক্তি মাইগ্রেনের শিকার হয়েছেন কিংবা যারা মাইগ্রেনে আক্রান্ত তাদেরও সেই ব্যথা বেড়েছে। রোজা রেখে মাইগ্রেন বা মাথাব্যথার সমস্যা কমাতে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন। যেমন-

পর্যাপ্ত পানি পান করুন : বিশেষজ্ঞদের মতে, রমজান মাসে মাথাব্যথার অন্যতম কারণ কম পরিমাণে পানি খাওয়া। যেহেতু সারাদিন পানি পানের সুযোগ নেই তাই সেহেরি ও ইফতারের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। তা না হলে শরীরের পানিশূন্যতার কারণে অনেকের মাথাব্যথা হয়।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইফতার ও সেহরির সময় কমপক্ষে ৮ থেকে ৯ গ্লাস পানি খান। তাহলে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হবে। মাথাব্যথা হবে না। পাশাপাশি শরীরকে হাইড্রেট রাখতে প্রচুর পরিমাণে শশা, তরমুজ ও তরল খাবার খান। 
ক্যাফেইন জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত চা, কফি পানি এড়িয়ে চলুন। তা না হলে শরীরে পানির ঘাটতি হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে ব্যক্তির চা বা কফির প্রতি নেশা রয়েছে, তবুও তারা এই রোজা রাখার সময় চা যেহেতু খেতে পারছেন না কিংবা কোনও কারণে তারা প্রচুর পরিমাণে টেনশন করছেন, তাদের মাথাব্যথা বাড়তে থাকে। তাই এই সময়ে আপনাকে খুব সাবধানে রোজা রাখতে হবে।

মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিন: ইফতারের পর অবশ্যই শরীরকে হাইড্রেট রাখার চেষ্টা করুন। তাই প্রচুর পরিমাণে ফলের রস, জল এবং শরবত খাবার চেষ্টা করুন। রোজা রাখার সময় অনেকেরই রক্তে শর্করা মাত্রা উঠানামা করে। এর ফলে মাথাব্যথা হয়। এ কারণে রোজার ভাঙার পর প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় কোনও খাবার খাবেন না। এতে ক্লান্ত লাগবে, মাথা ঘুরবে, মাথাব্যথাও হবে। 

যেসব খাবার খাবেন: সেহেরি ও ইফতারের সময় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন জাতীয় খাবার খান। চিনি যুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। খুব বেশি চা, কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান: রমজান মাসে ঘুমের সময় এলোমেলো হয়। এজন্য অনেক সময় মাথাব্যথা হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাবার চেষ্টা করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস ভালোভাবে নিন। মানসিক চাপ কমান। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইফত র র সময

এছাড়াও পড়ুন:

আ’লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে একাত্মতা জানালেন বিএনপি নেতা হাবিব

ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব।

তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এটি একটি ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী সংগঠন। তাই আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে।”

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে আওয়ামী লীগ ও মিত্র দলগুলো নিষিদ্ধের দাবিতে ৩৬ দিন ধরে চলা ছাত্র-জনতার গণঅবস্থান কর্মসূচির সমাপনী সমাবেশে তিনি একাত্মতা জানিয়ে এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

হিন্দু ধর্ম নিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীর কটূক্তি অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

‘নিরাপত্তা শঙ্কায়’ ঢাবিতে আরেফিন সিদ্দিকের দোয়া মাহফিল স্থগিত

তিনি বলেন, “গত ৩৬ দিন ধরে রাজু ভাস্কর্যে যে দাবিতে ছাত্র-জনতা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। কারণ আওয়ামী লীগ বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা ঘটিয়েছে। তারা ১৬২ জনকে হত্যা করেছে, যাদের বয়স ১৮ বছরের কম তথা শিশু। কাজেই এ দলকে আর রাজনৈতিক দল বলা যায় না। তারা ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী সংগঠন। তাই ইতালিতে যেমন ফ্যাসিস্টদের ও জার্মানিতে নাৎসিদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তেমনি আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করতে হবেন।”

১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের সভাপতি ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতা ছিলেন হাবিবুর রহমান। ওই সময়ে গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচারী এরশাদের দল জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে বাধা না দেওয়ার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “আমি, আমানুল্লাহ আমান, নাজিমুদ্দিন আলম বা অন্য কেউ যদি ভুল না করে শুধু বলতাম, তাহলেই কিন্তু জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হয়ে যেত। কাজেই এখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে ভুল করা যাবে না। শুধু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে হবে না। তাদের মিত্র ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপকেও নিষিদ্ধ করতে হবে।”

এ সময় জুলাই শহীদ মো. শাহাদাত হোসেন শাওনের বাবা মো. বাছির আলম বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনাসহ জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়া নির্বাচন করার চেষ্টা হলে শহীদ পরিবার ও ছাত্র সমাজ বাধা দেব।”

তিনি বলেন, “আমার বাসা রাজধানীর পশ্চিম ধোলাইপাড়। গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে আমার ছেলে শাহাদাত হোসেন শাওন শহীদ হয়। আজ পর্যন্ত আমার ছেলের একজন খুনীও গ্রেপ্তার হয়নি। আমার ছেলের খুনী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়নি। আমাদের ন্যায়বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না।”

তিনি আরো বলেন, “আমাদের ছেলেদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যারা ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন করতে হলে আওয়ামী লীগ ও সঙ্গে থাকা সব দলকে নিষিদ্ধে করতে হবে। পাড়া মহল্লায় যেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।”

এদিকে, সমাবেশে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন গণঅবস্থানের সংগঠক বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান।

তিনি বলেন, “গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা মো. ওমর ফারুক ও আবু সাঈদের নেতৃত্বে অনশনের মধ্য দিয়ে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। পরে এতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরাসহ ছাত্র-জনতা সম্পৃক্ত হন।”

তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার এ অবস্থান কর্মসূচি দেশের রাজিনীতিতে এক বিরল ঘটনা। কর্মসূচির প্রথম ১৮ দিন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করে, প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার ভিডিও প্রদর্শনী করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী এমপিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এবং গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে।”

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। তবে দুঃখনজক হলেও সত্য সরকার কোনো সাড়া দেয়নি। পবিত্র রোজার জন্য রাতের বেলা অবস্থান সীমিত করে দিনের বেলা অবস্থান করাসহ প্রতিদিন গণইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।”

সদস্য সচিব আরো বলেন, “ফ্যাসিবাদ নিষিদ্ধ করার দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। গণঅবস্থানের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে এ আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ফ্যাসিস্টদের নিয়ে যেমন আমাদের কোনো বিভ্রান্তি নেই, তেমনি ফ্যাসিস্টদের দমনের বিষয়েও আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা-সংকোচ নেই।”

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, শহীদ শাওনের মা শামসুন্নাহার, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান, সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার ও গালীব ইহসান, কেন্দ্রীয় সদস্য ওয়াসিম আহমদ।

আরো উপস্থিত ছিলেন, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. নাবিল আহমদ, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম ও হামিম হোসাইন শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ ও নিয়াজ আহমদ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ