সুনিতা উইলিয়ামস সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন?
Published: 20th, March 2025 GMT
সুনিতা উইলিয়ামস পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে এখন এক বিষ্ময়ের নাম। ১৯৬৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ওহিওতে জন্ম নেন সুনিতা। ছোটবেলা থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি প্রথমে মার্কিন নৌবাহিনীতে যোগ দেন এবং একজন হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল আরও বড়, আরও উচ্চতায় পৌঁছানোর। নাসার মহাকাশচারী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর, সুনিতা তার স্বপ্ন পূরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান।
সুনিতা উইলিয়ামসের কিছু উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব: এই নভোচারী মহাকাশে ৩২২ দিনের বেশি সময় কাটিয়েছেন। মহাকাশে সাতটি স্পেসওয়াক করেছেন সুনিতা। যা নারীদের জন্য একটি রেকর্ড। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সুনিতা ১৯৮৩ সালে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অ্যানাপোলিসে যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৮৭ সালে তাকে র্যাংক দেওয়া হয় এবং নৌ বিমান চলাচল প্রশিক্ষণ কমান্ডে বিমানচালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এরপর ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে জঙ্গি হেলিকপ্টারের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। নেভাল টেস্ট পাইলট হিসেবে ১৯৯৩ সালে কাজ শুরু করেন। এরপরে তিনি টেস্ট পাইলট প্রশিক্ষক পদে উন্নীত হন তিনি। সুনিতা ৩০টির বেশি উড়োজাহাজ চালাতে সক্ষমতা অজর্ন করেন। তার ফ্লাইং সময় ছিল ২ হাজার ৭৭০ ঘণ্টা। যখন তিনি মহাকাশ কর্মসূচির নভোচারী হিসেবে নির্বাচিত হন, তখন তিনি ইউএসএস সাইপানে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১৯৯৮ সালে নভোচারী প্রশিক্ষণ শুরু করেন। সুনিতা ২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর মহাকাশযান ডিসকভারিতে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস)-এ যান। সেখানে তিনি এক্সপেডিশন ১৪ ও ১৫–এ ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। ওই সফরে মহাকাশ স্টেশনে থাকার সময় সুনিতা চারবার মহাকাশে হাঁটেন। সব মিলিয়ে ২৯ ঘণ্টার বেশি সময় তিনি মহাকাশযানের বাইরে কাটান। এবং মহাকাশে ১৯৫ দিনেরও বেশি সময় অতিবাহিত করেন। তিনিই প্রথম নারী নভোচারী হিসেবে দুটি রেকর্ড করেন।
সুনিতা ২০১২ সালের ১৫ জুলাই সয়ুজ টিএমএ–০৫এম–এ চড়ে আবারও মহাকাশ স্টেশনে যান। ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি এক্সপেডিশন ৩২-এর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পান। ওই দফায় তিনি তিনবারের বেশি মহাকাশে হেঁটে বেড়ান। এতে সময় লাগে ২১ ঘণ্টারও বেশি। ১২৭ দিন মহাকাশে কাটানোর পর ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর পৃথিবীতে ফিরে আসেন সুনিতা। দুটি মহাকাশ সফরে ৩২১ দিনেরও বেশি সময় সেখানে কাটিয়েছেন তিনি।
আরো পড়ুন:
হঠাৎ ত্বক স্পর্শকাতর হয়ে পড়লে করণীয়
ঈদের আগে চুলের যত্নে যা করতে পারেন
আইএসএসের প্রথম পরীক্ষামূলক ক্রু স্টারলাইনার ফ্লাইটের জন্য ২০২২ সালে সুনিতাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ জুন ওই যান চালু হয়েছিল। ওই মিশনে বেরি উইলমোর কমান্ডার ছিলেন আর সুনিতা ছিলেন পাইলট। মিশন শুরুর পরদিনই স্টারলাইনার মহাকাশ স্টেশনে অবতরণ করেন। এক সপ্তাহ থাকার কথা থাকলেও কারিগরি জটিলতার কারণে তারা সেখানে আটকা পড়েন। প্রায় ৯ মাস মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছেন এই নভোচারী।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কম ন ড প ইলট
এছাড়াও পড়ুন:
নয় মাস পর মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরলেন নাসার দুই নভোচারী
প্রায় নয় মাস মহাকাশে থাকার পর, অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন নাসার দুই নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়ামস। তাদের স্পেসএক্স ক্যাপসুলটি দ্রুত ও উত্তপ্ত পুনঃপ্রবেশের পর চারটি প্যারাশুটের সাহায্যে ফ্লোরিডার উপকূলে নিরাপদে সমুদ্রে অবতরণ করে।
অবতরণের সময় ক্যাপসুলের চারপাশে একটি ডলফিনের ঝাঁক ঘুরছিল। উদ্ধারের পর, নভোচারীরা হাসিমুখে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। তাদের সঙ্গে ছিলেন আরও দুই ক্রু সদস্য, নাসার নভোচারী নিক হেগ ও রুশ মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গরবুনভ।
প্রথমে উইলমোর ও উইলিয়ামসকে মাত্র আট দিনের জন্য বোয়িং-এর স্টারলাইনার মহাকাশযানে পাঠানো হয়েছিল। তবে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এটি আইএসএস-এ (আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন) রাখা হয় এবং নিরাপত্তার কারণে তাদের ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
ফলে, তারা পরবর্তী উপলভ্য মহাকাশযানের জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য হন। সেপ্টেম্বরে স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুল আইএসএস-এ পৌঁছানোর পর, তাদের জন্য আসন খালি রাখা হয়, যা অবশেষে তাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে।
নাসার ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো বলেন, "তাদের ধৈর্য এবং অভিযোজন ক্ষমতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এটি একটি অবিশ্বাস্য যাত্রা ছিল।"
১৭ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার পর, পৃথিবীতে ফিরে আসার পর নভোচারীদের স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়, যা দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রার পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে তাদের শারীরিক অবস্থার নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হবে।
ব্রিটিশ নভোচারী হেলেন শারম্যান বলেন, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, তারা অবশেষে পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। যেসব উৎসব ও মুহূর্ত তারা মিস করেছেন, এখন হয়তো সেগুলো পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
পৃথিবীতে ফেরার আগে এক সাক্ষাৎকারে সুনি উইলিয়ামস বলেন, আমি আমার পরিবার, আমার কুকুর এবং সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
দীর্ঘ মহাকাশ ভ্রমণ মানুষের শরীরে নানা প্রভাব ফেলে। হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, পেশি দুর্বল হয় এবং রক্ত সঞ্চালনে পরিবর্তন আসে।
ব্রিটিশ নভোচারী টিম পিক বলেন, পৃথিবীতে ফিরে আসার পরের দুই-তিন দিন শরীরের জন্য কঠিন হয়। মহাকাশে ব্যায়াম করা জরুরি, কারণ এটি মহাকাশের জন্য নয়, বরং পৃথিবীতে ফেরার জন্য প্রয়োজন।
তবে, উইলমোর ও উইলিয়ামস তাদের মিশনের অতিরিক্ত সময়কে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়েছেন। তারা বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা করেছেন, মহাকাশে হাঁটাহাঁটি করেছেন এবং এমনকি সান্তা ক্যাপ ও রেনডিয়ার হ্যাট পরে ক্রিসমাস উদযাপন করেছেন।
অবশেষে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারা পৃথিবীতে ফিরেছেন। এখন তাদের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো—পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো এবং শারীরিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা।