হুথিদের ‘নির্মূলে’ ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
Published: 20th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইয়েমেনের হুথিদের ‘নির্মূল’ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি ইরানকে হুথিদের প্রতি সমর্থন বন্ধ করার আহ্বানও জানান।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন হুথিরা লোহিত সাগর অঞ্চলে আমেরিকান যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলেও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দাবি করেছে।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এর আগে বুধবার ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ হুথিদের শক্ত ঘাঁটিতে আবারও মার্কিন হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমন অবস্থায় ট্রাম্প একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন, বর্বর হুথিদের ওপর হামলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এবং দেখুন এটি ক্রমশ আরও খারাপ হতে চলেছে— এটি এমনকি একটি ন্যায্য লড়াইও নয়, এবং কখনও হবেও না। তাদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা হবে!
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল এবং সেই সময় থেকে লোহিত সাগরে আক্রমণ বন্ধ করে দেয় হুথিরা। কিন্তু ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তার প্রবেশে ইসরায়েলের অবরোধের জবাবে এই মাসের শুরুতে পুনরায় শুরু করে গোষ্ঠীটি।
এছাড়া ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দুই মাস ধরে বজায় থাকা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার পর হুথিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের সরাসরি সামরিক অভিযানও পুনরায় শুরু করে। গাজায় এই সপ্তাহে ইসরায়েলের নারকীয় তাণ্ডবে শত শত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনও ইয়েমেনে হুথিদের অবস্থানগুলোতে বোমাবর্ষণ করেছিল। কিন্তু ওয়াশিংটনের সেসব অভিযান সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর আক্রমণ থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ পরিশোধে বিরতি চান ব্যবসায়ীরা
শুধু বর্তমান সময়ে নয়, অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে তিন বছর ধরেই। তাতে দিন দিন ভালো ব্যবসায়ীরাও ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চান ব্যবসায়ীরা। তাঁরা চান ঋণ পরিশোধে ন্যূনতম ৬ মাসের বিরতি (মোরাটোরিয়াম পিরিয়ড)। তাঁদের দাবি হচ্ছে, সহজ শর্তে ঋণ পুনর্গঠনের জন্য যেন বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেয় সরকার।
সচিবালয়ে আজ বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক্-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা এ দাবি তুলে ধরেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকসহ অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাজেট আলোচনায় বসেন অর্থ উপদেষ্টা।
প্রায় দুই ঘণ্টার আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী ও বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে করজাল সম্প্রসারণ, করব্যবস্থা ডিজিটাল করা, করপোরেট কর আদায় ব্যবস্থা অনলাইন করা এবং ভ্যাটের একক হার নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছেতাসকিন আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বারএ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি সেলিম আর এফ হোসেন প্রমুখ।
সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে করজাল সম্প্রসারণ, করব্যবস্থা ডিজিটাল করা, করপোরেট কর আদায় ব্যবস্থা অনলাইন করা এবং ভ্যাটের একক হার নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয় বলে প্রথম আলোকে জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ। সভা শেষে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম ৬ মাসের বিরতি দরকার—এ কথা আমরা আমাদের পক্ষ থেকে অর্থ উপদেষ্টাকে জানিয়েছি।’
সভা শেষে মোহাম্মদ হাতেম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশা করছি, করব্যবস্থায় এবার একটা পরিবর্তন আসবে। এনবিআর চেয়ারম্যান এ পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘লাভের ওপর কর নেওয়া উচিত; কিন্তু বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে টার্নওভারের ওপর। এনবিআর ১ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) নিচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ কোটি টাকা এআইটি কেটে রাখা হচ্ছে। কিন্তু বছর শেষে দেখা যাচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় কর ২০ লাখ টাকা। তাতে বাকি ৮০ লাখ টাকা ফেরত পাওয়ার কথা; কিন্তু সেই টাকা আর ফেরত দিচ্ছে না এনবিআর।’
আলোচনাকালে বিকেএমইএর পক্ষ থেকে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কবিষয়ক ১১ দফা প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয় অর্থ উপদেষ্টার কাছে। এসব প্রস্তাবনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, পোশাক খাতের জন্য উৎসে কর আদায়কে চূড়ান্ত দায় হিসেবে গণ্য করে পাঁচ বছরের জন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ, রপ্তানি প্রণোদনায় কর অব্যাহতি, বিনিয়োগবান্ধব করনীতি প্রণয়ন, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানিতে কর রেয়াত, এইচ এস কোড ভুলের কারণে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান বাতিল করা, ৮ ডিজিটের বদলে ৬ ডিজিট এইচ এস কোড করা, জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতির ওপর ভ্যাট হার আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ নির্ধারণ ইত্যাদি। এ ছাড়া রপ্তানি প্রণোদনার অর্থ যাতে রপ্তানিকারকেরা সহজে পান সেই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অর্থ উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিকেএমইএ।
সভা শেষে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে তাঁরা প্রস্তাব করেছেন। এ ছাড়া করব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক চর্চা যেন বজায় রাখা হয় সেই অনুরোধও করেন। বিসিআইয়ের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) পর্যায়ে ভ্যাট হার কমানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
এ ছাড়া বিসিআইয়ের পক্ষ থেকে করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারতে করমুক্ত আয়সীমা যেখানে ১২ লাখ রুপি, বাংলাদেশে তা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। উচ্চ করহার নতুন বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে—এ কথাও তিনি অর্থ উপদেষ্টাকে বলেছেন বলে জানান।
আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী আরও বলেন, আয়কর বা এনবিআর–সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর শুনতে চেয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। অন্য বিষয়গুলো তিনি শুনতে চাচ্ছিলেন না। তবে উপদেষ্টাকে খুবই ইতিবাচক মনে হয়েছে। তিনি চান দেশটা এগিয়ে যাক এবং কিছু কিছু জায়গায় এনবিআর যাতে কর আহরণ করতে পারে। এনবিআরের কর আদায় যাতে বাড়ে তার জন্য কঠিন ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক–সংক্রান্ত বিষয় ও আর্থিক সহায়তার বিষয়গুলো লিখিত আকারে চেয়েছেন উপদেষ্টা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছি। আমরা চাই ব্যবসা উপযোগী করনীতি। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের মাধ্যমে সুপারিশ দিয়েছেন। করের ব্যাপারেও মতামত তুলে ধরেছেন। এটা ঠিক যে কিছু কিছু খাতে সুবিধা কম আছে। যে বিষয়ে ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছেন তা হলো করকাঠামোর প্রক্রিয়া যেন অনলাইনে করা হয়। এ ছাড়া পেমেন্ট নিয়ে জটিলতারও সমাধান চেয়েছেন তাঁরা।’
প্রাক্-বাজেট আলোচনায় ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিনিয়োগ ও মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) যেন বাড়ে, ব্যবসায়ীরা সেই প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি তাঁদের বলেছি, আগামী বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব।’ শুল্কবিষয়ক জটিলতা নিরসন নিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।