নরসিংদীতে এনআইডির তথ্য বিক্রির অভিযোগে নির্বাচন কার্যালয়ের দুই কর্মচারী গ্রেপ্তার
Published: 20th, March 2025 GMT
জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য বিক্রির অভিযোগে নরসিংদীর রায়পুরার উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের দুই অপারেটরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দালালের মাধ্যমে ও অর্থের বিনিময়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন ও হস্তান্তর করতেন তাঁরা। গত ছয় মাসে ওই দুজনের বিকাশ নম্বরে ১৪ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন রায়পুরা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের স্ক্যানিং অপারেটর আশিকুল আলম ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নাহিদুল ইসলাম। গতকাল বুধবার দিনভর তদন্ত শেষে উপজেলার নির্বাচন কার্যালয়ে রাত আটটার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা দ্বীন মোহাম্মদ রাসেল।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রায়পুরা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের দুই অপারেটরের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে ও দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিক্রির অভিযোগ ছিল। এ ঘটনা তদন্তে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রধান করা হয় কমিশনের আইডিইএ প্রকল্পের আইটি পরিচালক সাদ ওয়ায়েজ তানভীরকে। গতকাল তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের থানা-পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।
সাদ ওয়ায়েজ তানভীর জানান, অভিযুক্ত আশিক ও নাহিদুল এনআইডি তথ্য বিক্রির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাঁদের বিকাশ নম্বর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৬ মাসে ১৪ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শুধু আশিকুল আলমের বিকাশ নম্বরেই ১২ লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত দুই কর্মচারী বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে এনআইডি সংশোধন ও গোপন তথ্য হস্তান্তর করে এসব অর্থ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
জানতে চাইলে রায়পুরার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দ্বীন মোহাম্মদ রাসেল জানান, ‘তাঁরা দুজন দালালের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য বিক্রি করছিলেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গতকাল রাতেই আমি তাঁদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদিল মাহমুদ জানান, এ ঘটনায় ওই নির্বাচন কর্মকর্তার দেওয়া লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। আজই তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত উপজ ল তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু সকাল ৯টায়, পরা যাবে না মুখোশ
আগামীকাল পয়লা বৈশাখ। চারুকলা অনুষদের আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও বের হবে শোভাযাত্রা। তবে শোভাযাত্রায় পরা যাবে না কোনো ধরনের মুখোশ এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সঙ্গে নিতে হবে পরিচয়পত্র।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' শুরু হবে।
রবিবার(১৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সব জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামীকাল সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হবে।
বিজ্ঞপ্তির বর্ণনায় বলা হয়, সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। শেষ প্রান্ত দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪ এর চেতনাকে ধারণ করে আরো বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এবছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিবৃন্দ অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এ বছর থাকবে ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, পয়লা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ থেকে প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইট, চারুকলা অনুষদ সম্মুখস্থ ছবির হাটের গেইট এবং বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
শৃঙ্খলা বজায়ের স্বার্থে যানবাহন সম্পর্কিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, ক্যাম্পাসে নববর্ষে সব ধরনের অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে।
নববর্ষ উপলক্ষে আজ ১৩ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোন ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
নববর্ষ উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পয়লা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এ কর্মসূচি। তবে বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন ‘মঙ্গল শোভযাত্রা’ নামটি এবারের আয়োজনে থাকছে না। এই শোভাযাত্রার নাম থেকে ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাদ দিয়ে নতুন নামকরণ হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
ঢাকা/সৌরভ/ইভা