ঈদকে কেন্দ্র করে ক্রেতা–বিক্রেতার মিলনমেলা হয়ে ওঠে ঢাকার ব্যস্ততম পোশাক কেনাবেচার স্থান ঢাকা নিউমার্কেট ও এর আশপাশের এলাকা। ইসলাম ম্যানশন, নুর ম্যানশন, চিশতিয়া সুপারমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, চাঁদনী চকসহ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি মার্কেট। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক স্থান এই মার্কেটগুলো। এর মধ্যে পাইকারি দামে নারীদের পোশাক থেকে গয়না কেনাকাটার জন্য গাউছিয়া মার্কেট নারীদের অন্যতম পছন্দের মার্কেট।

১৯৬০ সালের দিকে নিউমার্কেটের বিপরীতে গাউছিয়া মার্কেট ও নূর ম্যানশন মার্কেটের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৬৫ বছর আগে নিজস্ব জায়গায় মো.

ইউসুফ সরদার গাউছিয়া মার্কেট গড়ে তোলেন। অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি নিঃসন্তান হওয়ায় তাঁর এই সম্পত্তি মৃত্যুর আগে ওয়াক্ফ হিসেবে দান করে যান। পরে মো. ইউসুফ সরদারের নামে ওয়াক্ফ ই লিল্লাহ এস্টেট নামে একটি সংস্থা বানিয়ে মার্কেটটি পরিচালনা করা হয়।

গাউছিয়া মার্কেটে দেশি–বিদেশি নারীদের পোশাক, জুয়েলারি, কসমেটিকস, অন্তর্বাসসহ নানা ধরনের পণ্য। মূলত নারীদের জন্য এই মার্কেট বিশেষায়িত হলেও কিছু কিছু দোকানে ছেলেদের পাঞ্জাবি ও টুপি পাওয়া যায়। প্রায় ২০ হাজার বর্গফুটের গাউছিয়া মার্কেটে মোট ৫৫০টি দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানে ঈদ মৌসুমে গড়ে ৫০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। সেই হিসাবে প্রতিদিন এই মার্কেটে অন্তত ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বেচাকেনা হয়।

গাউছিয়ার বিক্রেতা মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সারা বছর আমরা এই এক মাসের দিকেই তাকিয়ে। আগে রোজার মাসে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি কোনো ব্যাপার ছিল না। তবে এখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা প্রতিদিন বিক্রি করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

কালের পরিক্রমায় মার্কেটের দোকানগুলো এত বেশি হাতবদল হয়েছে যে এখন পুরোনো মালিকদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক দোকানের পুরোনো নাম রয়ে গেছে; কিন্তু মালিকানা পরিবর্তন হয়ে গেছে। আবার অনেক দোকানমালিক নতুন করে ভাড়া দিয়েছেন। প্রকার ও জায়গাভেদে একেকটি দোকানের জন্য ৪০ হাজার থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হয়।

প্রতি তিন বছর পরপর দোকানমালিকদের ভোটে নির্বাচিত করা হয় নতুন কমিটি। কথা হয় গাউছিয়া মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মালিক কবিরের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই মার্কেটে দেশি পোশাকের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান ও চীন থেকে আমদানি করা পোশাক পাওয়া যায়। মার্কেটের মোট দোকানের ৮০ শতাংশ দোকানই দেশি–বিদেশি পোশাকের।

ঢাকা শহরের সব পাড়ামহল্লায় গড়ে উঠেছে ছোট–বড় বিভিন্ন মার্কেট। তাই ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে এখন ঢাকাবাসীর নিয়মিত গাউছিয়া কিংবা নিউমার্কেট যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। আবার অনলাইনে পণ্য কেনার সুবিধা হওয়ায় মার্কেটে না গিয়েও ঘরে বসেই পণ্য হাতে পাচ্ছেন ক্রেতা।

কী কী পাওয়া যায়

জুয়েলারি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ব্যবহারের পণ্য, পোশাক, প্রসাধনীসহ নারীদের প্রয়োজনীয় সাধারণের পণ্য এই মার্কেটে পাওয়া যায়। রাজধানীর অন্যান্য মার্কেট, বড় শপিংমলের তুলনায় গাউছিয়ায় সাশ্রয়ী মূল্যে পাইকারি ও খুচরা কেনাকাটা করা যায় বলে এখানকার জনপ্রিয়তা বেশি। মূলত নারীদের সাধারণের কাপড়ের জন্য প্রসিদ্ধ গাউছিয়া মার্কেট।

নিচতলায় কসমেটিকস, জুয়েলারি, দেশি-বিদেশি শাড়ি, লেহেঙ্গা, থান ও ওড়নার কাপড় পাওয়া যায়। জুয়েলারি বাজারে ভারতীয় গয়নার আধিক্য বেশি। রুপার ওপরে মিনাকারির কাজ, কৃত্রিম মুক্তা, পাথর দিয়ে সাজানো গলার মালা, কানের দুল ও চুড়ি। আয়না, কাপড় ও সুতার তৈরি নানা ধরনের গয়না আছে। ধাতু ও কাঠের তৈরি আংটিগুলোর দাম শুরু ১০০ টাকা থেকে। ২৫০ থেকে ৪০০ টাকার ভেতরেই পাওয়া যাবে গলার মালা ও কানের দুল।

এখানে প্রধানত শাড়ি, থ্রিপিস, সালোয়ার-কামিজ, গজ কাপড়, লেস-ফিতা, অন্তর্বাস–জাতীয় পোশাক, বাচ্চাদের পোশাক, কসমেটিকস, জুয়েলারি ও বুটিক রয়েছে। এখানে খুচরা ও পাইকারি পণ্যের শত শত দোকান রয়েছে।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে বেচাকেনা আগের বছরের তুলনায় কম। বেচাকেনা নিয়ে কথা হয় ২৮ বছর পুরোনো খুচরা ব্যবসায়ী গোধূলি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী নারায়ণ সাহার সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘করোনার সময় তিনি ১৫ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এখন ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। শেষ বয়সে আছি, ব্যবসা ছাড়া কিছু করার নেই। তাই ব্যবসা নিয়েই পড়ে আছি। গত বছরের তুলনায় বিক্রি ও ক্রেতা দুটিই কম।’

কোথায় পণ্য যায়

গাউছিয়া মার্কেটে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট, বরিশাল, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ভৈরব, রাজশাহী, ফরিদপুর, টঙ্গীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার খুচরা ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন পাইকারিভাবে কাপড় কিনতে। এ দেশে ১৫ রোজার পর থেকে খুচরা দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।
কথা হয় গাউছিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশের দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এখানে এসে কাপড় নিয়ে যাচ্ছেন। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় বিক্রি কিছুটা কম। আমাদের প্রথম দফার বিক্রি শেষ, তবে শেষের দিকে বিক্রিও এখন পর্যন্ত ভালো।

গাউছিয়া মার্কেটের ভেতরে ক্রেতাদের ভিড়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ম র ক ট ব যবস য় র জন য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

নোবিপ্রবি ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শাখা ছাত্রদল নেতা বিরুদ্ধে ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী শিশির পন্ডিত হরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। অপরদিকে, অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতার নাম জাহিদ হাসান।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর দেওয়া ভুক্তভোগীর অভিযোগপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

নোবিপ্রবিতে ২০ মার্চ থেকে ছুটি শুরু, বন্ধ থাকবে হল

নোবিপ্রবিতে ২ ছাত্রদল নেতার জন্য মাস্টার্স চালু

অভিযোগে জানা যায়, ভুক্তভোগীর হলে থাকার বৈধ সিট থাকলেও জাহিদ হাসান নামে ওই ছাত্রদল নেতা নিজেকে ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে নিজের পছন্দের লোক উঠানোর চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে অন্য ছাত্রদল নেতাকর্মীদের দিয়ে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে জেরা করেন তিনি।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, “আমি ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে ৪২৪ নাম্বার রুমের বৈধ শিক্ষার্থী। হলের অ্যালটমেন্ট ফি সময় মতো দেওয়াসহ সবকিছু সময়মত করেছি। আমার উঠতে কিছুদিন দেরি হলে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী আমাকে জানায়, আমার সিট নাকি বাতিল হয়ে গেছে। তাই তারা ওই রুমে নিজেদের জুনিয়রকে তুলবে। পরবর্তীতে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি হল প্রশাসন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওই রুমে হল প্রশাসন পাঁচজন শিক্ষার্থীকে অ্যালটমেন্ট দিলেও সেখানে ছয়টা সিট প্রবেশ করিয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি এবং আমার বন্ধু একাডেমিক কাজে কিছুদিন ঢাকা থাকায় আমাদের সিট নিয়েও ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমার অনুপস্থিতিতে এক জুনিয়র রুমে থাকতে গেলে তাকেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যদিও রুমে অ্যালটমেন্ট না হওয়া অন্য দুজন শিক্ষার্থী থাকলেও তাদের বিষয়ে চেপে গিয়ে আমাদের রুমে থাকতে না দেওয়ার হুশিয়ারি দেওয়া হয়।”

তিনি আরো বলেন, “গত ৯ মার্চ দুপুর ১২.৩৭ মিনিটে আমার মোবাইলে একটি কল আসে এবং জাহিদ হাসান নামের একজন নিজেকে ছাত্রদল সভাপতি পরিচয় দিয়ে আমাদের রুমের বিষয়ে আমাকে জেরা করে। যেখানে তিনি হল প্রশাসনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও আমার এবং আমার বন্ধুর সিট নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে থাকে। পরে ৩০৫ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে একই বিষয় নিয়ে আমাকে ৬-৭ জন ছাত্রদল পরিচয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জেরা করে। বর্তমানে আমি এবং আমার বন্ধু এ বিষয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন।” 

নিরাপত্তাহীনতায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অভিযোগপত্রে হল প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা জাহিদ হাসান বলেন, “অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমার কাছে তথ্য এসেছে যে, শিশির পন্ডিত এবং তার বন্ধু চাকরিজীবী হয়েও তারা হলে সিট নিয়েছে এবং সিটে উঠেনি। হল প্রশাসন একটা নোটিশ দিয়েছে, যারা নির্দিষ্ট সময়ে হলে উঠবে না, তাদের সীট বাতিল বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে প্রভোস্ট মহোদয়ের মৌখিক অনুমতি নিয়ে দুইটা ছেলে ওই রুমে থাকে।”

তিনি বলেন, “শিশির পন্ডিতের পরিচয় দিয়ে তার জুনিয়র সেখানে থাকতে আসে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমি শিশির পন্ডিতকে কল দিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।”

ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয়ের বিষয়ে জাহিদ হাসান বলেন, “আমি এমন কোনো পরিচয় দেইনি। আমি শুধু বলেছি আমি নোবিপ্রবি ছাত্রদল নেতা জাহিদ হাসান।”

নোবিপ্রবি ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক নূর হোসেন বাবু বলেন, “জাহিদ হাসান নামে আমাদের কমিটিতে কোনো নেতা নেই। কেউ যদি ছাত্রদল সভাপতি পরিচয় দিয়ে কোনো অন্যায় কাজ করে, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি হল প্রশাসনকে এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

নোবিপ্রবি ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রাধ্যক্ষ বডি অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী প্রাধ্যক্ষ বলেন, “ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয়ে শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে আমরা হল প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ