সংযুক্ত আরব-আমিরাত (দেশটির প্রসিদ্ধ শহর দুবাই) প্রতিবছর বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ সোনার বার রপ্তানি করে। দেশটি থেকে সোনার বার রপ্তানির শীর্ষ ১০ গন্তব্যের একটি বাংলাদেশ। অবশ্য বাংলাদেশের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, আবর আমিরাত থেকে বাংলাদেশে সোনা আমদানি হয় খুব সামান্য।

দুই দেশের সোনা-বাণিজ্যের হিসাবে এই গরমিলের কারণ, বেশির ভাগ সোনার বার আসে ‘অবৈধভাবে’। অবৈধ সোনা-বাণিজ্যের কারণে বাংলাদেশ রাজস্ব হারায়। অন্যদিকে অপরাধ ও চোরাচালানে ব্যবহার করা হয় অবৈধভাবে আসা সোনা।

জাতিসংঘের পশ্চিম এশিয়াবিষয়ক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইএসসিডব্লিউএ) তথ্যভান্ডারে থাকা হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩৬৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের সোনা রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে। তাদের এই তথ্যের সূত্র জাতিসংঘের পণ্য বাণিজ্যের তথ্যভান্ডার ইউএন কম ট্রেড ও আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বব্যাংকের বছরভিত্তিক গড় মূল্য ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, দুবাই থেকে আনা সোনার পরিমাণ ৭৮ টন বা ৭৮ হাজার কেজির বেশি। ডলারের গড় দাম অনুযায়ী এই পরিমাণ সোনার দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, এই ১০ বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বৈধ পথে মাত্র ৮২ লাখ ডলার মূল্যের সোনা আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ ৩৬৫ কোটি ৮২ লাখ ডলারের সোনা বৈধভাবে দেশে ঢোকেনি।

বিশ্বব্যাংকের বছরভিত্তিক গড় মূল্য ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, দুবাই থেকে আনা সোনার পরিমাণ ৭৮ টন বা ৭৮ হাজার কেজির বেশি। ডলারের গড় দাম অনুযায়ী এই পরিমাণ সোনার দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, এই হিসাবের মধ্যে যাত্রীরা নিয়ে আসা সোনার বার বা গয়না অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

নাম প্রকাশ নাম করার শর্তে দেশের একজন সোনা ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে সোনা যে অবৈধভাবে আসে, তার বড় অংশ ভারতে পাচার হয়, সেটা সবার জানা। আরব আমিরাত সোনা রপ্তানির হিসাব ঠিকই রাখে। কিন্তু বাংলাদেশে অবৈধভাবে আসে বলে এ দেশের সরকারি সংস্থার হিসাবে তা থাকে না।

বড় গরমিল

সংযুক্ত আরব-আমিরাত থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়। এনবিআরের হিসাবে, ২০২৩ সালে আমিরাত থেকে আমদানি পণ্যের শীর্ষে ছিল সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার। এ সময়ে দেশটি থেকে ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ক্লিংকার আমদানি হয়। তবে দেশটি থেকে ওই বছর কোনো সোনা আমদানি হয়নি। তবে ইএসসিডব্লিউএর তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। জাতিসংঘের এই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে আমিরাত থেকে বাংলাদেশে শীর্ষ রপ্তানি পণ্য ছিল সোনা। এই বছর দেশটি থেকে ৫৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের সোনা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। ক্লিংকার ছিল দ্বিতীয় শীর্ষ আমদানি পণ্য।শুধু ওই এক বছরই নয়, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের মধ্যে ৯ বছরই আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে সোনা।

ইএসসিডব্লিউএ আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির যে হিসাব দিয়েছে, তাতে সোনা ছাড়া অন্য পণ্যের বাণিজ্যের হিসাব কাছাকাছি। রপ্তানি পণ্য পাঠানো এবং আমদানি পণ্য খালাসের পর বাংলাদেশের হিসাবের ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধানের কারণে হিসাবে কিছুটা কম-বেশি হয়।

ইএসসিডব্লিউএর হিসাবে আমিরাত বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সোনা রপ্তানি করেছে ২০১৯ সালে। ডলারের হিসাবে তা ৬০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশে ওই বছর বৈধ পথে কোনো সোনা আমদানির রেকর্ডই নেই।

বাংলাদেশে সহজভাবে বৈধভাবে সোনা আমদানি শুরু হয় ২০২০ সালে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে সোনা আমদানির লাইসেন্স দেয়। এরপর ২০২০ সালের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে সোনা আমদানি শুরু হয়। এর আগেও সোনা আমদানি করার সুযোগ ছিল। তবে কঠিন শর্তের কারণে বৈধভাবে সোনা আমদানি হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে ১০ টন সোনা কিনেছিল আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) থেকে, যা এখন পর্যন্ত এক বছরে সর্বোচ্চ আমদানির রেকর্ড। অথচ ইএসসিডব্লিউএর হিসাবে আমিরাত বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সোনা রপ্তানি করেছে ২০১৯ সালে। ডলারের হিসাবে তা ৬০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশে ওই বছর বৈধ পথে কোনো সোনা আমদানির রেকর্ডই নেই।

বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ইএসসিডব্লিউএর কার্যালয়ের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির বাণিজ্য দলের কর্মকর্তা মাজেদ হামুদেহ ই-মেইলে পাঠানো বক্তব্যে বলেন, ইএসসিডব্লিউএর তথ্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অফিশিয়াল (আনুষ্ঠানিক) উৎস থেকে পাওয়া। সোনার তথ্যও সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। আমদানি-রপ্তানিকারকভিত্তিক বিস্তারিত তথ্যের জন্য তিনি আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশে সোনার বাজার দেশের বাইরে থেকে আসা সোনার ওপর নির্ভরশীল। দেশে এই সোনা আসে তিনভাবে—এক.

যাত্রীদের হাত ধরে। দুই. বৈধভাবে ব্যবসায়ীদের আমদানির মাধ্যমে। এবং তিন. অবৈধভাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কারা এই সোনা রপ্তানি করল, বাংলাদেশের কারা আমদানি করল—এমন বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে আরব আমিরাতের ‘ফেডারেল কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস সেন্টার’ কার্যালয়কে গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ই-মেইল করা হয়। তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি আরব অঞ্চলের দেশ কুয়েত থেকেও সোনা আমদানির তথ্য রয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাটির তথ্যভান্ডারে। সেখানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে কুয়েত থেকে বাংলাদেশে ১৯ লাখ ডলারের সোনা রপ্তানি হয়। তবে বাংলাদেশের সরকারি হিসাবে কুয়েত থেকে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এক তোলা সোনা আমদানির রেকর্ড নেই।

সোনা আসে তিনভাবে

বাংলাদেশে সোনার বাজার দেশের বাইরে থেকে আসা সোনার ওপর নির্ভরশীল। দেশে এই সোনা আসে তিনভাবে—এক. যাত্রীদের হাত ধরে। দুই. বৈধভাবে ব্যবসায়ীদের আমদানির মাধ্যমে। এবং তিন. অবৈধভাবে।

আনুষ্ঠানিক আমদানির বাইরে যাত্রীদের হাত ধরে সোনার বার আসে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রীদের হাত ধরে আনা সোনা আনুষ্ঠানিক আমদানি হিসেবে গণ্য হয় না। যাত্রীদের মাধ্যমে সোনা আসা বেড়েছে মূলত গত চার বছরে (২০২১-২০২৪)। এর আগে বছরে তিন থেকে পাঁচ টন করে সোনা এনেছিলেন যাত্রীরা, যার বড় অংশ আমিরাত থেকে এসেছে। এই তিন বছরের আগে যাত্রীরা যে পরিমাণ সোনা এনেছিলেন, তার চেয়ে বাংলাদেশে আরব আমিরাতের রপ্তানি ছিল বেশি।

যেমন ২০১৯ সালে আরব আমিরাত রপ্তানি করেছে ৬০ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের সোনা। এ সময়ে যাত্রীরা এনেছেন ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলার মূল্যের প্রায় সাড়ে তিন টন সোনা।

সাত স্টেশনের মধ্যে শুধু ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বৈধ পথে সোনা আমদানির তথ্য রয়েছে। তা-ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে আমদানি শুরুর পর। সব মিলিয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৯৪ লাখ ডলার মূল্যের মোট ১৫৪ কেজি সোনা আমদানি হয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে। আরব আমিরাত থেকে এসব সোনা এনেছে ৯টি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে অন্য শুল্কস্টেশন দিয়ে বৈধভাবে সোনা আনা হয়নি।

তাহলে কোন পথে আসছে সোনা

এনবিআরের তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি পণ্য আসার প্রধান পথ চট্টগ্রাম বন্দর। মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট—এই তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েও আরব আমিরাত থেকে পণ্য আসছে। রূপপুর এলসি স্টেশনেও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আরব আমিরাত থেকে কিছু পণ্য আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ আমিরাত থেকে যা আমদানি হচ্ছে, তা এই সাতটি জায়গা দিয়েই খালাস হয়।

এই সাত স্টেশনের মধ্যে শুধু ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বৈধ পথে সোনা আমদানির তথ্য রয়েছে। তা-ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে আমদানি শুরুর পর। সব মিলিয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৯৪ লাখ ডলার মূল্যের মোট ১৫৪ কেজি সোনা আমদানি হয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে। আরব আমিরাত থেকে এসব সোনা এনেছে ৯টি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে অন্য শুল্কস্টেশন দিয়ে বৈধভাবে সোনা আনা হয়নি।

অবশ্য অবৈধভাবে আনা সোনা জব্দের ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। ২০২৩ সালে তিন বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের জব্দ করা সোনার পরিমাণ ৮৮৪ কেজি। সোনা ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধারণা, যে পরিমাণ সোনা ধরা পড়ছে, তা অবৈধভাবে আনা সোনার সামান্য অংশ। এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানও গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সোনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, ‘আমরা ১০০টার মধ্যে একটা ধরতে পারি। ৯৯টা আমরা ধরতে পারি না নানা কারণে।’

জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) গত বছরের ৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ধারণার ভিত্তিতে দাবি করেছিল, বছরে ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার সোনা ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে।

সোনার শেষ গন্তব্য কোথায়

স্বর্ণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে নতুন সোনার চাহিদা ১৮-৩৬ টন। অর্থাৎ গড় হিসাবে বছরে নতুন সোনার চাহিদা ২৭ টন। তবে তিন বছরে (২০২১-২০২৩) যাত্রীদের হাত ধরে গড়ে বছরে প্রায় ৪৪ টন সোনা এসেছে। এর মানে হলো, যাত্রীদের আনা সোনাও দেশে থাকছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অবৈধভাবে আনা সোনা দেশে থাকে না।

বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্ত দিয়ে ভারত ও মিয়ানমারে পাচারের সময় নিয়মিত সোনা জব্দ করে। বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি সোনা জব্দ করা হয়েছে ২০২৩ সালে, পরিমাণ ২৬০ দশমিক ৫৬ কেজি। সব মিলিয়ে গত চার বছরে গড়ে প্রতিবছর ১৫৯ কেজি সোনা জব্দ করা হয়েছে।

আমদানিতে সময় লাগে বেশি, যে কারণে বৈধ পথে আমদানি কম। আমদানির প্রক্রিয়া ও খালাস কার্যক্রম সহজ করা গেলে বৈধ পথে আমদানি বাড়বে।বাজুস সেক্রেটারি জেনারেল বাদল চন্দ্র রায়

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে সোনা রপ্তানির বিষয় তুলে ধরে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সেক্রেটারি জেনারেল বাদল চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। বৈধ-অবৈধ পথে আসা সোনা দেশের বাজারে থাকে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাত্রীদের মাধ্যমে ও অবৈধ পথে যেসব সোনা আসছে, সেগুলোর কিছু হয়তো দেশে থাকে, তবে বেশির ভাগই পাচার হয়ে যায়। বাংলাদেশের যাঁরা জড়িত, তাঁরা হয়তো বাহক হিসেবেই কাজ করছেন।

বাদল চন্দ্র বলেন, আমদানিতে সময় লাগে বেশি, যে কারণে বৈধ পথে আমদানি কম। আমদানির প্রক্রিয়া ও খালাস কার্যক্রম সহজ করা গেলে বৈধ পথে আমদানি বাড়বে।

অবৈধ বাণিজ্য বিশ্বজুড়ে, পথ বাংলাদেশও

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘সুইসএইড’ গত বছরের ৩০ মে আফ্রিকার সোনা নিয়ে ‘অন দ্য ট্র্যায়াল অব আফ্রিকান গোল্ড’ নামে সমীক্ষা প্রকাশ করে। তাতে আফ্রিকার সোনা-বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে দুবাইকে (আমিরাতের শহর) চিহ্নিত করা হয়। সমীক্ষায় বলা হয়, আফ্রিকা থেকে উড়োজাহাজে করে দুবাইয়ে সোনা পাচার করা হয়। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত ফ্লাইট বা ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয়। আমিরাতে সোনা শোধনাগার শিল্প রয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন দেশে সোনা রপ্তানি হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সোনার বাজারবিষয়ক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ভারতের অবৈধ পথে আসা সোনার ৪০-৫০ শতাংশ আসে পশ্চিমবঙ্গ, মণিপুর ও মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে। এই অবৈধ সোনার বড় উৎস বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন।

অবৈধ লেনদেন অবৈধ সোনায়

বিশ্বজুড়ে অবৈধ বাণিজ্যের লেনদেন ও নানা দেশে সশস্ত্র গোষ্ঠীর অর্থায়নে সোনা ব্যবহার করা হয়। দু-তিন কেজি সোনা লুকিয়ে বহন করা যত সহজ, সে তুলনায় সমমূল্যের মুদ্রা সহজে লুকিয়ে বহন করা যায় না। এ কারণে অবৈধ লেনদেন ও আমদানি বাণিজ্যে আন্ডার ইনভয়েস (কম মূল্য ঘোষণা) করা পণ্যের দাম পরিশোধে সোনা ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েস সবচেয়ে বেশি হয় ভারতের সঙ্গে। যেমন এ বছর ভারত থেকে মাত্র ৪ টাকা ৮৮ পয়সায় গেঞ্জি, ২১০ টাকায় পাঞ্জাবি আমদানির রেকর্ড আছে এনবিআরে। শুল্ক কর্তৃপক্ষের হিসাবে এই দর অনেক কম। সে জন্য শুল্ক কর্তৃপক্ষ পাঁচ গুণ বেশি দাম ধরে পণ্যের শুল্কায়ন করেছে। এত কম টাকায় অনেক পণ্য আমদানি হচ্ছে, যা পরে নানাভাবে পরিশোধ করা হয়।

‘জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করা দরকার’

২০২৪ সালের ১৩ মে কলকাতায় খুন হন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। খুনের ঘটনাটির তদন্তে বেরিয়ে আসে, সোনা চোরাচালান নিয়ে বিরোধেই খুন হন আজীম। তখন প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সোনা চোরাকারবারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন আজীম।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে যে পরিমাণ সোনা রপ্তানি হচ্ছে, তা বাংলাদেশের হিসাবে নেই—এটা খুবই উদ্বেগজনক তথ্য। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করা দরকার। এ জন্য আমিরাত থেকে তথ্য নিতে হবে। আমিরাতের কারা এই সোনা রপ্তানি করল, বাংলাদেশের কারা আমদানি করল, কোন পথে আমদানি হলো, ঋণপত্র খোলা হয়েছে কি না, ঋণপত্র খোলা হলে সঠিক ঘোষণা ছিল কি না—সবকিছুই অনুসন্ধানের আওতায় আনা দরকার। তিনি বলেন, আমিরাতে অর্থ পাচারের সঙ্গে সোনা চোরাচালান জড়িত হয়ে আরেকটি চক্র কাজ করেছে কি না, সেটারও তদন্ত করা দরকার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমদ ন র র কর ড ব যবস য় দ র ব আম র ত র পর ম ণ স ন ২০২৩ স ল প রথম আল ২০১৯ স ল শ হজ ল ল এই স ন ন ত কর ব ধ পথ র পর ম অন য য় সরক র ব যবহ র বছর বছর র তদন ত সবচ য় দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিটিবির কমিটি থেকে রাখাল রাহারঅপসারণ দাবি

সাজ্জাদুর রহমান ওরফে রাখাল রাহাকে এনসিটিবির পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর।

আট দাবি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলের গণবিরোধী নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলে আমাদের লড়াই ছিল আপসহীন। ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে রাখাল রাহা শুধুই লিখিত বক্তব্য পড়েন। অথচ পরে কমিটিতে রাখতে চাপ দেন তিনি। এক পর্যায়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের তোপে স্থগিত হয়।

জাহাঙ্গীর বলেন, ২০২৩ সালে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কবীর, কাজী সাইফুল হক পনিরসহ চারজন এনসিটিবির মামলায় গ্রেপ্তার হলেও রাখাল রাহার কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। অথচ সংগঠন ব্যবহার করে তিনি এনসিটিবিতে ঢুকে পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী গ্রাফিতি, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা বইয়ের পেছনে ছাপা, দরপত্র কেলেঙ্কারি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ না বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছেন।
‘রাখাল রাহার নেতৃত্বে অভিভাবকদের আন্দোলনের কারণেই শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন’– এনসিটিবি চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসানের এ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সভাপতি কাজী সাইফুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, জেসমিন, ডা. রিপা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মা, আমি ক্লান্ত, মরে যেতে চাই’: ইসরায়েলি আগ্রাসনে মানসিক বিপর্যয়ে শিশুরা
  • গাজায় এবার স্থল অভিযান শুরু করলো ইসরায়েল
  • ‘মা, আমি মরতে চাই’
  • এবার ‘বৈয়াম পাখি' গানে জেফারের কণ্ঠ, অভিনয়েও রয়েছেন তিনি
  • এবারের `বৈয়াম পাখি' গানে জেফারের কণ্ঠ, রয়েছেন অভিনয়েও
  • এনসিটিবির কমিটি থেকে রাখাল রাহারঅপসারণ দাবি
  • ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ জালিয়াতি করে চাকরি স্থায়ীকরণের অভিযোগ
  • বিচারে দীর্ঘসূত্রতা, কুমিল্লায় বাড়ছে নারী ও শিশু ধর্ষণ
  • নাটোরে গ্রেপ্তার যুব মহিলা লীগ নেত্রীকে আদালতে প্রেরণ