বিভিন্ন সময়ে ভারতে পাচার হওয়া শিশুসহ ২১ জন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করে।

যাঁরা ফেরত এসেছেন, তাঁদের মধ্যে ১ জন তরুণ, ১ জন তরুণী, ১০ জন মেয়েশিশু ও ৯ জন ছেলেশিশু। শিশুদের বয়স ১ বছর ৭ মাস থেকে ১৮ বছরের নিচে। দুই তরুণ ও তরুণীর বয়স যথাক্রমে ১৯ ও ২০ বছর। তাঁদের বাড়ি যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, নড়াইল, ফরিদপুর, ঢাকা, কক্সবাজার, নাটোর ও রাজবাড়ী জেলায়।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, এসব তরুণ-তরুণী রোজগারের আসায় দালালের মাধ্যমে এবং শিশুরা তাদের মা-বাবার সঙ্গে সীমান্ত পথে ভারতে গিয়েছিল। পরে সেখানে কাজ করার সময় সে দেশে অবৈধভাবে বসবাস করার অভিযোগে পুলিশ তাঁদের আটক করে জেলহাজতে পাঠায়। সেখান থেকে সে দেশের একটি সংগঠন তাঁদের কারাগার থেকে ছাড়িয়ে এনে নিজস্ব শেল্টার হোমে রাখে। গতকাল বেলা ৩টা ৫৫ মিনিটে ভারত সরকারের দেওয়া বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে তাঁদের বেনাপোল বন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

বেনাপোল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহিম আহমেদ বলেন, বিশেষ ট্রাভেল পারমিটে ফেরত আসা বাংলাদেশি শিশু ও তরুণ-তরুণীদের বেনাপোল বন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখান থেকে দুটি প্রতিষ্ঠান তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে।

বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল মিয়া বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁদের দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি তাঁদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ঢোকার অনুমতি পায়নি চার ট্রাক তৈরি পোশাক, গন্তব্য ছিল স্পেন

ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করায় পেট্রাপোল কাস্টমস তৈরি পোশাকবোঝাই চারটি ট্রাককে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি (কারপাস) দেয়নি। এতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে গতকাল বুধবার ট্রাকগুলো ঢাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা দিতে ২০২০ সালের ২৯ জুন আদেশ জারি করেছিল ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) গত মঙ্গলবার সেই আদেশ বাতিল করে।

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক তিনটি প্রতিষ্ঠান চারটি ট্রাকে পণ্য বোঝাই করে বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসে। ট্রানজিট নিয়ে ওই পণ্য কলকাতার দমদম বিমানবন্দর হয়ে স্পেনে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে ট্রাকগুলো প্রবেশের অনুমতি পায়নি। এতে পণ্যগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে নিয়েছে।

বেনাপোলে এই পণ্যের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট ছিল পদ্মা ট্রেডিং। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক অনিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। এর আগেই ট্রাকবোঝাই এসব পণ্য বেনাপোল বন্দরে চলে আসে। পণ্য ঢুকতে না দেওয়ায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’ তিনি জানান, এই সুবিধা বাতিলের এক দিন আগেও ২০ ট্রাক তৈরি পোশাক তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের ট্রানজিট ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। সাধারণত তৈরি পোশাকের রপ্তানি গ্রীষ্মে বাড়ে। এখন রপ্তানির ভরা মৌসুম। এই মুহূর্তে ভারতের এই সিদ্ধান্তে তাঁরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘যে রপ্তানিকারকের পণ্য ফিরে গেছে, তাদের কোনো প্রতিনিধি আমাদের কিছু জানাননি। তবে আমরা জেনেছি, ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে কারপাস দেওয়া হয়নি। যে কারণে পণ্য ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

২০২০ সালের ২৯ জুন এক আদেশে ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ভারতের কলকাতা বন্দর, নবসেবা বন্দর ও কলকাতা বিমান কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছিল সিবিআইসি। এখন সে সুবিধা প্রত্যাহার করল ভারত।

বিবৃতিতে ভারত দাবি করেছে, এসব পদক্ষেপে ভারতের সীমান্ত দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে না।

বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বেনাপোল দিয়ে ভারতের ট্রানজিট নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়, তার বেশির ভাগ যায় ইউরোপের দেশগুলোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেনাপোল ও পেট্রাপোল দিয়ে স্পেন ও সুইজারল্যান্ডে বেশি যায়। এই বন্দর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানি কম হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  •  ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের প্রভাব পড়েনি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে
  • ভারতে ঢোকার অনুমতি পায়নি চার ট্রাক তৈরি পোশাক, গন্তব্য ছিল স্পেন