মেসি–দিবালার পর চোট কেড়ে নিল মার্তিনেজকেও, আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে খেলবেন কারা
Published: 20th, March 2025 GMT
লিওনেল মেসি ও পাওলো দিবালার পর যোগ হলো আরেকটি নাম—লাওতারো মার্তিনেজ। অবস্থা দেখে মনে হতে পারে, এ যেন চোটে পড়া খেলোয়াড় বাছতে আক্রমণভাগ উজাড়!
২০২৬ বিশ্বকাপ দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে চলতি মাসে উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা। চোটের কারণে এ দুটি ম্যাচ থেকে আগেই ছিটকে গেছেন মেসি ও দিবালা। এবার মার্তিনেজও যোগ দিলেন ছিটকে পড়া খেলোয়াড়দের তালিকায়। কারণ ওই একই—চোট। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) জানিয়েছে, হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ভুগছেন ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার।
আরও পড়ুনহামজা চৌধুরী কে, কেমন খেলেন, বাংলাদেশ দল কতটা উপকৃত হবে২ ঘণ্টা আগেগত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলো ফিরতি লেগে ফেইনুর্ডের বিপক্ষে ইন্টারের জয়ের ম্যাচে মাংসপেশিতে চোটের কারণে বেঞ্চে বসে ছিলেন মার্তিনেজ। গত রোববার সিরি ‘আ’তে আতালান্তার ২-০ গোলে ইন্টারের জয়ে গোলও করেন। এরপর আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিলেও চোটের কারণে সরে দাঁড়াতে হলো ২৭ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারকে।
মেজর লিগ সকারে ইন্টার মায়ামির ম্যাচে বাঁ ঊরুতে ব্যথা পাওয়ায় মার্চে বাছাইপর্বের ম্যাচ দুটি খেলা হচ্ছে না মেসির। বাঁ পায়ে মাংসপেশির চোটে ভুগে প্রায় এক মাসের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন এএস রোমা তারকা দিবালা। গঞ্জালো মন্তিয়েল ও জোভান্নি লো সেলসোদেরও চোটের কারণে এ দুটি ম্যাচে খেলা হচ্ছে না।
চোটের কারণে মার্তিনেজও ছিটকে পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে, আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে কাদের দেখা যাবে। কোচ লিওনেল স্কালোনির হাতে অবশ্য বিকল্প আছে। আতলেতিকো মাদ্রিদ তারকা হুলিয়ান আলভারেজের ম্যাচের শুরু থেকে খেলার সম্ভাবনা বেশি। মার্তিনেজের জায়গায় দেখা যেতে পারে আতলেতিকোর ফরোয়ার্ড জুলিয়ানো সিমিওনেকে। নিকোলাস গঞ্জালেস, নিকো পাজ ও থিয়াগো আলমাদাও ভালো বিকল্প হয়ে উঠতে পারেন স্কালোনির।
আরও পড়ুনব্রাজিলিয়ান ক্লাবগুলোকে টারজানের শিম্পাঞ্জির সঙ্গে তুলনা করে ক্ষমা চাইলেন তিনি১৩ ঘণ্টা আগেমার্তিনেজের ছিটকে পড়া নিয়ে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের এক্স হ্যান্ডলে বলা হয়, ‘বাঁ হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ায় মার্চের দুটি ম্যাচের স্কোয়াড থেকে ছিটকে পড়েছেন লাওতারো মার্তিনেজ।’
আগামীকাল বাংলাদেশ সময় ভোরে মন্টেভিডিওতে স্বাগতিক উরুগুয়ের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। এরপর ২৬ মার্চ বুয়েনস এইরেসে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের মুখোমুখি হবে স্কালোনির দল। দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইয়ে ১২ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আর্জেন্টিনা। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে উরুগুয়ে। ১২ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট পাওয়া ব্রাজিল টেবিলের পাঁচে।
পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ ছয় দল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে সরাসরি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পাবে। সপ্তম দলটিকে খেলতে হবে প্লে–অফ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন ইন ট র
এছাড়াও পড়ুন:
ফাহামিদুলের বাদ পড়া এবং কিছু প্রশ্ন
জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার ইচ্ছাতেই সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ক্যাম্পে ডাকা হয়েছিল ইতালি প্রবাসী ফুটবলার ফাহামিদুল ইসলামকে। তবে দল যখন ক্যাম্প শেষ করে বাংলাদেশে ফিরল (১৮ মার্চ, ২০২৫) তখন দলের সঙ্গে দেখা গেল না ফাহামিদুলকে! সৌদি থেকে ইতালিতে ফেরত পাঠানো হয় এই ১৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডারকে।
গোটা দেশ যখন হামজার হোমকামিংয়ে মজে ছিল, তখন জন্ম নেয় বিশাল এই বিতর্কের। হ্যাঁ, বিতর্কই বটে। কারণ, ফাহামিদুলকে স্কোয়াডে না রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠলেও কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি ফুটবল দল সংক্রান্ত কেউই।
আরো পড়ুন:
‘মেসির সঙ্গে’ পরিচয় করিয়ে দিলেন জামাল, ছেত্রীর সঙ্গে তুলনায় দিলেন অন্যরকম উত্তর
আসিফের হুঁশিয়ারি
বাফুফেতে সিন্ডিকেটের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে সরকার
দলের ম্যানেজার আর কোচের কথার সুর প্রায় একই, ফাহামিদুল দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি, তবে তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনায় আছেন। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, তারা যখন এই উত্তরগুলো দিচ্ছিলেন, মনে হচ্ছিল না তারা নিজেরাই বিশ্বাস করছেন! তাছাড়া অতীতে নর্দার্ন আইরিশ টপ ডিভিশনে খেলা রিয়াসাত ইসলামের সাথেও এক দশক আগে ফাহামিদুলের মতো একই কাজ করা হয়েছিল।
আজ বুধবার (১৯ মার্চ, ২০২৫) দুপুর ১টা নাগাদ যখন ভারত ম্যাচের পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন চলছিল ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে, তখন বাইরে চৈত্রের তাপ উপেক্ষা করে সারাদেশ থেকে আসা ফুটবল সমর্থকরা করছিল প্রতিবাদ। তাদের মতে, ফাহামিদুলের সাথে যা ঘটেছে তা এক কথায় অন্যায়। এই সমর্থকরা দাবি করছে বহুদিন ধরেই একটা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ ফুটবল।
প্রতিবাদীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য একটা অংশ হচ্ছে ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠী ‘বাংলাদেশ ফুটবল আল্ট্রাসের।’ গতকাল বিকেল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর রাজপথে এই প্রতিবাদী সমর্থকগোষ্ঠীর স্লোগান ছিল, ‘জনে জনে খবর দে, সিন্ডিকেটরে কবর দে।’ আন্দোলনের স্ফূলিঙ্গের মাঝেই দুই একজন জানালেন, সিন্ডিকেটের মানুষদের জন্যই যোগ্য ফুটবলাররা খেলতে পারেন না একাদশে। অনেক সময় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দারুণ খেলা ফুটবলারদের রাখা হয় না স্কোয়াডেও।
এই আন্দোলনরত ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠীর দাবি, রিয়াসাত এবং ফাহামিদুলের বাদ পড়ার পেছনে সেই সিন্ডিকেটেরই প্রভাব আছে। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, প্রস্ততি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার পড়ও কিভাবে বাদ পড়ে? এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বয়ং বাফুফের পোস্ট করা একটা ভিডিওর প্রসঙ্গ টেনে আনলেন তারা। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিরি’ডিতে খেলা ফাহামিদুলের ড্রিবলিংয়ের সামনে রীতিমত খাবি খাচ্ছিলেন দেশের স্বনামধন্য ডিফেন্ডাররা।
যদিও বাংলাদেশ দলের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাহামিদুলের বাদ পড়ার পেছনে কোচের কৌশলগত কারণই বারবার সামনে আসছে। বাদ দেওয়ার কারণ নিয়ে কোচ কাবরেরা বলেন, “তার বয়স ১৮ বছর। সে আমাদের বিবেচেনায় আছে। কিন্তু এই মুহুর্তে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত না। সে আমাদের সঙ্গে থাকবে ভবিষ্যতে।”
এই বয়সের যুক্তি কতখানি ধোপে টিকে? এই কাবরেরার স্বদেশী লামিনে ইয়ামাল যখন জার্মানিতে ২০২৪ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে স্পেনকে শিরোপা জেতান, তখন তার বয়স মাত্র ১৬! জার্মানির আইন অনুযায়ী শিশু হওয়াতে, স্পেন দলকে গুনতে হয়েছিল মোটা অঙ্কের জরিমানাও।
অন্যদিকে কাবরেরা যখন জামাল ভূঁইয়া ও হামজা চৌধুরীকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, তখন প্রেস কনফারেন্স রুমের শেষদিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার স্বদেশী ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী কোচ ডেভিড গোমেজ। তাকে সামনে পেয়ে প্রশ্ন করার লোভ সামলাতে পারলাম না। প্রস্ততি ম্যাচে ফাহামিদুল হ্যাটট্রিক করেছিল কিনা জানতে চাইলে ব্যাচারা একদম হতবম্ভ হয়ে পড়ে। একদমই আশা করেনি এমন প্রশ্ন। অপ্রস্তুতভাবেই একগাল হেসে জবাব দিলেন, ‘‘আমি না ঠিক মনে করতে পারছিনা। নিশ্চিত না এই ব্যাপারে।’’
ডেভিডের উত্তরটা খুবই অনুমেয় ছিল। এরপর কিছুটা নিপাট ভদ্রলোকের মতোই যোগ করলেন, ‘‘আমি আসলে উত্তর দিতে পারব না। কোড অব কন্ডাক্টের বাইরে যেতে পারব না।’’
জাতীয় দলের ম্যানেজার, কোচ এবং সহকারী কোচ, সবার কথা একই সুতোয় গাঁথা, সব জায়গাতেই আছে সমন্বয়। তবে একটু জিজ্ঞাসু কিংবা অনুসন্ধানী চোখে তাকালেই লক্ষ্য করা যায় অদ্ভুত এক রহস্য, কি জানি এক লুকোচুরি, কোথায় জানি বড্ড বেখাপ্পা। ফাহামিদুলের বাদ পড়াটা কেন জানি বারবার জন্ম দিচ্ছে কিছু অস্বস্থিকর প্রশ্নের।
শেষ করা যাক বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পের শুরুর দিকের এক ঘটনা দিয়ে। এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকার বাবা ক্যামেরনের এবং মা আলজেরিয়ার। তবে এমবাপ্পে বিশ্বজয় করেছেন ফ্রান্সের জার্সিতে। এই উইঙ্গার যখন মোনাকোর সিনিয়র দলে সুযোগ পেলেন, তখন তার বাবা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্যামেরুন জাতীয় দলের ট্রায়ালে। ছোট্ট এমবাপ্পে সহজেই জয় করলেন সবার হৃদয়। তবে ক্যামেরুন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই একজন কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে বসলেন উঠতি তারকার বাবার কাছ থেকে।
তাতেই বেঁকে বসল এমবাপ্পে ও তার পরিবার। তারা ফ্রান্সে ফিরে যায়। এই ব্যাপারটা পরে জানাজানি হলে ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশন ফেরাতে চান এমবাপ্পেকে। তবে তিনি আর ফিরেননি। গোটা ক্যামেরুনের সৌভাগ্য হলো না, এমন একজন বিস্বয়কর ফুটবলারকে তাদের জার্সিতে দেখার। এরপর ফ্রান্সের নীল জার্সিতে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জয় করে আগমনী বার্তা জানান দেন এমবাপে। পরের বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে লিওনেল মেসির হাত থেকে প্রায় একাই বিশ্বকাপটা ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন, একটুর জন্য হয়নি সেবার।
তবে ক্যামেরুনের ফুটবলে আজীবনের আফসোস থাকবে এমবাপ্পেকে পেয়েও না পাওয়ার গল্প, কিছু হটকারী কর্মকর্তার জন্য। বাংলাদেশের ফাহামিদুলের গল্পটাও কি সেদিকেই যাচ্ছে? এই প্রশ্ন তোলা থাক।
ঢাকা/আমিনুল