হাওরের পরিবেশ বিনাশের যাবতীয় বন্দোবস্ত থেমে নেই। নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে হাওর অঞ্চলকে এমনেই সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে, সেখানে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি প্রকল্প। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরের বুক চিরে নির্মাণ হচ্ছে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। প্রকল্পটি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে নেওয়া হয়েছিল। বাস্তবিক অর্থে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণের উপকার বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।

পানি আইন ২০১৩-তে স্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ বা উহার প্রবাহে বাধা সৃষ্টি বা উহার গতিপথ পরিবর্তন বা পরিবর্তনের চেষ্টা করিতে পারিবে না।’ এই প্রকল্পের এই আইনের স্পষ্ট ব্যত্যয় ঘটছেই বলতে হয়। এ ছাড়া কৃষকদের মতামত নেওয়া হয়নি, জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে, অথচ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। এই রাস্তা শুধু কৃষকদের জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, বরং হাওরের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাহত করবে, যার কারণে উজানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।

কৃষকদের অভিযোগ অনুযায়ী, যখন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, তখন তাঁরা বাধা দিয়েছিলেন, কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁদের চাপে ফেলেন। এখন ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও একই কৌশল ব্যবহৃত হচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ নয়, বরং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সুবিধা নিশ্চিত করা।

এখানে আরও বড় প্রশ্ন হলো, প্রকল্পটি আদৌ কতটা প্রয়োজনীয়? হাওর এলাকার বিশেষ প্রকৃতি এবং পরিবেশগত গুরুত্ব বিবেচনায় না নিয়েই কীভাবে একটি সড়ক নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হলো? সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেই হাওরের বুক চিরে সড়ক নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন। অথচ তাঁরই একান্ত ইচ্ছায় একই ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

যে টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যয় হওয়ার কথা, তা ক্ষমতাধর ব্যক্তির ইচ্ছাপূরণে ব্যয় হওয়ার চক্র থেকে মানুষের মুক্তি কি আদৌ ঘটবে? স্থানীয় প্রশাসন যদিও বলছে, প্রকল্পের বিষয়ে তারা খোঁজখবর রাখছে। বাস্তবতা হলো, কৃষকদের ক্ষতির কোনো প্রতিকার এখনো হয়নি। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা অর্থায়ন করছে। জাইকা যদি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করে, তবে তাদের উচিত প্রকল্পটির পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব পুনর্মূল্যায়ন করা। একই সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত প্রকল্পটি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা এবং স্থানীয় জনগণের মতামত নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি, পরিবেশবান্ধব এবং কৃষকদের ক্ষতি না করে এমন কোনো সমাধান বের করা। আর তা শুধু সাংহাই হাওর নয়, সমগ্র হাওর অঞ্চলেই যেন কার্যকর হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ষকদ র প রকল প পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

দুই ছাত্রীকে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম

নরসিংদীর চর‌আড়ালিয়ায় ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর বাঘাইকান্দি গ্রামের কাজীবাড়ির মোড়ে রায়পুরা উপজেলার চর‌আড়ালিয়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে এ মানববন্ধন হয়।
ধর্ষণের অভিযোগে ইমরান, রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, সাইফুল মিয়া, রমজান, কাইয়ুম ও তার দুই সহযোগীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে এত ধর্ষণ হচ্ছে কিন্তু অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না। পুলিশ কী করে? অনতিবিলম্বে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন তারা। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তা না হলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে। আলটিমেটাম দিয়ে তারা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষকদের আইনের আওতায় আনা না হলে রামপুরা থানাসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন চরআড়ালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জহিরুল ইসলাম জাজু, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু মুসা, জেলা ছাত্রনেতা সাব্বির ভূঁইয়া, সাবেক চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান সরকার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকেল ৩টার দিকে দুই বান্ধবী চরআড়ালিয়া গ্রামের কাইয়ুম ও মুন্নার সঙ্গে ঘুরতে বের হয়। তারা সারা বিকেল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে বাঘাইকান্দি এলাকা থেকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া-দাওয়া করে। পূর্ব থেকেই কাইয়ুম ও মুন্না তাদের বন্ধুদের পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থাকতে বলে। সে অনুযায়ী অন্য বন্ধুরা স্কুলের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে অটোরিকশাযোগে তাদের নিয়ে পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে যায় কাইয়ুম ও মুন্না। সেখানে যাওয়ার পর এক ছাত্রীকে জোর করে স্কুলের পাশে নিক্সন মেম্বারের বাড়ির ছাদে নিয়ে যায় ইসরাফিল, সাইখুল, রমজান ও কাইয়ুম এবং অপর ছাত্রীকে মুন্না, ইমরান, রাজ্জাক, আব্দুর রহমান নদীর পারে নিয়ে যায়। সেখানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় অভিযুক্তরা। এ সময় ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী চিৎকার দিতে চাইলে ইট হাতে নিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার হুমকি দেয়। পরে দুই ছাত্রী বাড়ি ফিরে গেলে অবস্থা দেখে স্বজনরা জানতে চাইলে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় রায়পুরা থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে দুটি মামলা করা হয়েছে।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খোলপেটুয়ার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেনাবাহিনীর
  • ‘শুধু সরকার ও দল নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক চায় চীন’
  • ঢাকার সমাবেশ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে: ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত
  • মডেল মেঘনার পূর্ব পরিচিত ব্যবসায়ী সমির রিমান্ডে
  • জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টির ৩ নেতার পদত্যাগ
  • জাতীয় পার্টি ছাড়লেন খুলনার সাবেক এমপিসহ ৩ নেতা
  • অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ দাবি জনগণের: আলী রীয়াজ
  • দুই ছাত্রীকে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম
  • ফ্যাসিস্টরা নানাভাবে অভ্যুত্থানকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে: জোনায়েদ সাকি
  • কিছু উপদেষ্টার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জন্মেছে: রিপন