দেশের বেসরকারি খাতের উত্তরা ব্যাংকের মুনাফা এক বছরের ব্যবধানে ১৫৭ কোটি টাকা বা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দেড় দশকের মধ্যে শেয়ারধারীদের জন্য সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ব্যাংকটি।

গত বছরের জন্য নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ব্যাংকটি ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। গত মঙ্গলবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পর এ লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে গত বছরের লভ্যাংশ ও আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য শেয়ারধারীদের জানিয়েছে ব্যাংকটি। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

কোম্পানিটি জানিয়েছে, গত বছরের জন্য তারা শেয়ারধারীদের সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১৭ শতাংশ বোনাস মিলিয়ে মোট ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে। এর আগে সর্বশেষ ২০০৯ সালে ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাতে প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে একজন শেয়ারধারী পাবেন নগদ ১৭৫ টাকা এবং বোনাস হিসেবে সাড়ে ১৭টি শেয়ার।

উত্তরা ব্যাংক জানিয়েছে, গত বছর শেষে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৭৯ পয়সায়। ব্যাংকটি গত বছর সব ধরনের খরচ বাদ দেওয়ার পর যে মুনাফা করেছে, সেটিকে ব্যাংকটির মোট শেয়ার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এই ইপিএসের হিসাব করা হয়। ইপিএসের এই হিসাব অনুযায়ী, গত বছর শেষে ব্যাংকটির মোট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৭৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩১৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ১৫৭ কোটি টাকা বা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

ব্যাংকটি গত বছরের জন্য যে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার জন্য নগদ লভ্যাংশ বাবদ ব্যাংকটি বিতরণ করবে ১৪৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের মুনাফার প্রায় ৩১ শতাংশ। ২০২৩ সালেও ব্যাংকটি নগদ লভ্যাংশ বাবদ ১৪৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছিল, যা ছিল ওই বছরের মোট মুনাফার প্রায় ৪৬ শতাংশ।

এদিকে দেড় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ লভ্যাংশের ঘোষণায় গতকাল বুধবার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দামও বেড়েছে। ঢাকার বাজারে এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪০ পয়সা বা দেড় শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৫ টাকায়। ভালো লভ্যাংশের ঘোষণায় গতকাল ব্যাংকটির শেয়ারের দামের প্রতিও ছিল বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আগ্রহ। এ কারণে দিন শেষে ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ছিল। এদিন ঢাকার বাজারে ব্যাংকটির প্রায় ১৩ কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ারের হাতবদল হয়েছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জন্য ব্যাংকটি যে নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করবে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাবেন ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ১৪৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৫৩ কোটি টাকা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৪৭ কোটি টাকা, ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা পাবেন ৪৪ কোটি টাকা এবং এই শেয়ারের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন প্রায় ৬০ কোটি টাকা।

উত্তরা ব্যাংক ১৯৮৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটির মোট শেয়ারসংখ্যা ৮২ কোটি ৫৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৪২টি। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ৮২৬ কোটি টাকা। এটি শেয়ারবাজারে ভালো মানের কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১৪৫ ক ট

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ না পাওয়ার অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধীরা বলছেন, অপমানিত বোধ করেছি

জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ময়মনসিংহে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ এনেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা ও মহানগরের নেতারা। আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় থেকে বর্ষবরণেল আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব আলী হোসেন নিমন্ত্রণ পেয়ে অপমানিত বোধ করেছেন বলে জানান।

সকালে শোভাযাত্রা শেষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি আবু বকর সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, বর্ষবরণের এক জমকালো অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে নিমন্ত্রণ করা হয়নি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর শাখার নেতাদের। তারা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে সমন্বয় করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করা হয়েছে, অথচ তাদের কাউকেই বিষয়টি জানানো হয়নি। জেলা প্রশাসনের দাওয়াত না পেয়ে পরে আলাদাভাবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান পালন করেন তারা। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ মহানগরের সদস্যসচিব আল নূর আয়াস বলেন, ‘জেলা প্রশাসন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অথচ আমাদের কাউকেই জানানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। জুলাই-আগস্টে রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আমাদের বাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন।’ 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, ‘বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কাউকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। অনুষ্ঠানটি কিভাবে হবে, এটা জানতে আমি স্বপ্রণোদিতভাবে জেলা প্রশাসককে ফোন করি। তখন তিনি আমাদের অনুষ্ঠানে যেতে বলেন। কিন্তু আমাদের সহযোদ্ধারা এভাবে নিমন্ত্রণ পেয়ে অপমানিত বোধ করেন। তাই তারা কেউ অনুষ্ঠানে যায়নি।’ 

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, ‘বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আমরা কাউকে অফিসিয়ালি দাওয়াত দেইনি। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্যসচিবকে বলা হয়েছিল, সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য। ডিসির পক্ষে সবাইকে আলাদা আলাদা নিমন্ত্রণ করা সম্ভব না। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আরও অনেক অফিসার আছে। তারা সবাইকে দাওয়াত দিতে পারেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ