সিলেটে ঠিকাদারের কাছ থেকে ৮৭ কোটি টাকার একটি কাজ বাগিয়ে নিতে তাঁকে ডেকে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ হোসাইনের বিরুদ্ধে। নির্যাতিত ঠিকাদার শফিকুল ইসলামের ফোনে পুলিশ এলে আজাদকে পালাতে সহযোগিতা করেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা। গতকাল বুধবার সিলেট নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার ক্রিস্টাল হোটেলে এ ঘটনা ঘটে।

আজাদ হোসাইন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি তাহিরপুর উপজেলার বালুজড়ি ইউপি চেয়ারম্যানও। অন্যদিকে ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম নগরীর সুবিদবাজারের বাসিন্দা। তাঁর মূল বাড়ি সুনামগঞ্জে।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ডিসেম্বরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সুনামগঞ্জের আওতাধীন সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের উন্নয়নকাজে ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার কার্যাদেশ পায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজটি সম্পাদনের দায়িত্ব পান শফিকুল ইসলাম। তিনি সহযোগিতার জন্য আজাদ হোসাইনকে অর্ধেক অংশীদারিত্ব দিয়ে চুক্তিনামা করেন। কাজ চলা অবস্থায় বুধবার দুপুরে ক্রিস্টাল হোটেলে শফিককে ডেকে নেন আজাদ। স্ট্যাম্প পেপার বের করে অংশীদারিত্ব ছেড়ে দিতে তাতে শফিককে সই দিতে চাপ দেন আজাদ ও তাঁর সহযোগীরা। শফিক রাজি না হলে তাঁকে গালাগাল ও মারধর করা হয়। শরীরের পোশাক টেনে ছিঁড়ে ফেলেন হামলাকারীরা। খবর পেয়ে পুলিশ হোটেলে অবস্থান নেয়। বিপদ আঁচ করতে পেরে আজাদ মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান সাদিক, দলীয় কর্মী মিলটন ও হোটেল মালিক নিশু দাসকে ফোন করেন। তারা এসে আবারও সমঝোতার কথা বলে আজাদকে কৌশলে হোটেল থেকে পালাতে সহায়তা করেন। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বিএনপি নেতারা আজাদকে পালাতে সহায়তা করেছেন।

এ ঘটনায় আইনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘কাজের জন্য আজাদকে অংশীদার করেছিলাম। তিনি এখন এককভাবে কাজটি কবজায় নিতে ডেকে এনে মারধর করলেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজাদকে হোটেল থেকে পালাতে সহায়তা করেছে একটি চক্র।’

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ হোসাইনের মোবাইল নম্বরে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বিএনপি নেতা সাদিকুর রহমান জানান, তাঁর এলাকায় হোটেলটির অবস্থান। বের হওয়ার পথে ঝামেলা দেখে এগিয়ে যান। আওয়ামী লীগ নেতাকে পালাতে কারা সহায়তা করেছে, তা তিনি জানেন। এ বিষয়ে পুলিশ ভালো বলতে পারবে বলে জানান সাদিক।

ঘটনাস্থলে যাওয়া কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক শামসুল হাবিব জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে বিএনপির কারা ছিলেন, তা জানেন না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ব এনপ স ন মগঞ জ আজ দ হ স আওয় ম ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

মার্জিন ঋণ নিতে বিনিয়োগ লাগবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ নিতে হলে বিনিয়োগ থাকতে হবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। এছাড়া থাকতে হবে নিয়মিত আয়ের উৎস। আর বিনিয়োগের ৬ মাসের আগে ঋণ পাবে না কোনো বিনিয়োগকারী। একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড এবং কোম্পানির হিসাবেও মার্জিন ঋণ দেওয়া হবে না। চূড়ান্ত মার্জিন ঋণ নীতিমালায় এসব সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ প্রসঙ্গে এসব তথ্য তুলে ধরেন পুঁজিবাজার টাস্কফোর্সের সদস্যরা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন এবং পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান।

টাস্কফোর্সের সদস্যরা বলেন, পুঁজিবাজার অংশীজনদের সাথে আলোচনা করেই সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে টাস্কফোর্স। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর ৩ মাসের আগে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে, মার্জিন নিয়ে শেয়ারবাজারে কারসাজি বন্ধ হবে। মার্জিন ঋণ নিয়ে সুশাসন না থাকায় বিপুল অংকের নেগেটিভ ইক্যুইটি সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীর পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পুঁজিবাজার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং মার্জিন খারাপ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। যে কারণে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা টাস্কফোর্সের মূল্য উদ্দেশ্য।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন বলেন, অনেক স্টেকহোল্ডার দাবি করছেন তাদের সাথে বসা হয়নি। অথচ আমরা দেখলাম তাদের সাথে আমরা ৩ বারও বসে ফেলেছি। তবে কেন এরকম মিস কমিউনিকেশন। আমরা অংশীজনদের বাহিরেও যারা বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ তাদের সাথেও আমরা বসেছি। এরপরেও যদি মনে হয় আমরা কিছু বাদ দিয়েছি বা গ্যাপ ছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে জানালে তা আমরা যুক্ত করে দিব। তবে অংশীজনদের থেকে বেশি আমরা সাধারণ মানুষদের থেকে অনেক কিছু পেয়েছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে। যার কারণ বাজার অচল অবস্থায় চলে গেছে। সে অবস্থাটাকে মাথায় রেখে আমরা চিন্তা করেছি, এর অন্যতম কারণ হলো মার্জিন রুলস। কারণ মার্জিন রুলসটা যদি প্ল্যান করে দেওয়া হতো, গভর্নেন্সটা যদি সঠিক থাকতো, তাহলে এ ধরনের অবস্থা তৈরি নাও হতে পারতো। তাই মার্জিন রুলসকে আমরা টপ প্রায়োরিটি আইটেম ধরেছি। পৃথিবীতে মার্জিন রুলসকে শর্টটার্ম ওয়ে হিসেবে নেওয়া হয়। কোথাও কোথাও ১:৩/৪ রেশিওতে মার্জিন ঋণ দেওয়া হচ্ছে৷ এগুলা কিভাবে হয়েছে? এরপর বাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটি ক্রিয়েট হয়েছে। আমরা চাচ্ছি এই জিনিসগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি বাজারে না হয়। মার্জিন নিয়ে আর গ্যামব্লিং করা যাবেনা। মার্জিন নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। এতো পরিমাণ নেগেটিভ ইক্যুইটি না থাকলে বাজারের আজ এই পরিস্থিতি হতো না।

হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন বলেন, আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছে ফোকাস গ্রুপ। মূল কাজ করেছে টাস্কফোর্স। আমরা কাজ করতে যেয়ে পাবলিকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকেও পেয়েছি, তবে পাবলিক থেকে পরামর্শ বেশি এসেছে। এটা খুব ভালো বিষয়। কারণ যত বেশি পরামর্শ আসবে, আমরা তত বেশি রিফাইন করার সুযোগ পাব।

সংবাদ সম্মেলনে একটি উপস্থাপনায় পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আজকে আমার খুবই ভালো লাগছে যে, এই প্রথম বাংলাদেশে আইনি ফরমেশন করতে যাচ্ছি, যেখানে ব্রেইন স্টর্মিং ড্রাফটিং হয়েছে গ্রাউন্ড লেভেল থেকে। এ মার্কেটে যারা কাজ করেন, তাদের আইডিয়াগুলো নিয়েই ড্রাফট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিএসইসির ওয়ার্কিং টিমের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। এছাড়া মার্কেটের বড় বড় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব নিয়ে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করেছি।

এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।

ঢাকা/এনটি/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ