নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় এক ব্যক্তির ওপর প্রতিশোধ নিতে তার সাত বছরের ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা ও লাশ গুম করে দুই প্রতিবেশী। খুনের পর শিশুটির সন্ধান চেয়ে দুই ঘাতক মাইকিংয়েও অংশ নেয়।

প্রায় আড়াই মাস আগের এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিরা হলো ফতুল্লার লামাপাড়া দরগাবাড়ি মসজিদ-সংলগ্ন সালাম মিয়ার ভাড়াটে ওবায়েদউল্লাহ বাবুর ছেলে তানজিল (২৪) ও একই বাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত ফরজুল ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলম (২০)।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গ্রেপ্তার আসামিরা ও নিহত শিশু মুস্তাকিনের পরিবার পাশাপাশি বাসায় বসবাস করত। একটি মোবাইল ফোন নিয়ে তানজিল ও শাহ আলমের সঙ্গে মুস্তাকিনের বাবা হাশিম মিয়ার ঝগড়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তানজিল তাঁর সহযোগী শাহ আলমকে নিয়ে মুস্তাকিনকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে তারা ফতুল্লার ডিআইটি মাঠ থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনে। এর পর ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে প্রথমে চিপস কিনতে শিশুটির হাতে ২০ টাকা দেয় তানজিল। পরে শিশুটির সঙ্গে হেঁটে মূল রাস্তায় মেইন রোডে এসে দুটি চিপস কিনে হাতে দেয়। এর পর অটোরিকশায় করে ফতুল্লা গুদারাঘাট দিয়ে কেরানীগঞ্জের কাওটাইল এলাকায় যায়। সেখানে বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদের পেছনে ঝোপের ভেতরে নিয়ে গিয়ে শিশুটির মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেন শাহ আলম। এ সময় তানজিল তাঁর সঙ্গে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে শিশুটিকে একাধিকবার আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তারা ঘটনাস্থলে শিশুটির লাশ ফেলে রেখে লামাপাড়ার বাসায় চলে যায়।

শিশুটিকে না পেয়ে তার পরিবার সন্ধান চেয়ে মাইকিং করেছিল। ঘাতকরাও সে সময় মাইকিংয়ে অংশ নেয়। দু-তিন দিন পর তারা তাদের নিজ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ চলে যায়। ঘটনার ১৩ দিন পর ১৮ জানুয়ারি দুপুরে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। কোনো পরিচয় না পাওয়ায় লাশটি অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়। পরে ২০ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করে। এর আগে ৬ জানুয়ারি শিশুটির বাবা ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। শিশুটির সন্ধান না পেয়ে তার বাবা গত শুক্রবার ফতুল্লা মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের ৭২ দিন পর গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ময়মনসিংহ নান্দাইল থেকে প্রথমে শাহ আলমকে, পরে দুপুর ১২টার দিকে একই জেলার ফুলবাড়িয়া থানার কাচিজোড়া থেকে তানজিলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ রাত ৮টার দিকে ফতুল্লা থানার লামাপাড়ায় তানজিলের বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার চাকুটি উদ্ধার করে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ‘ক’ সার্কেল হাসিনুজ্জামান জানান, শিশুটির বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতেই শিশুটিকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার তানজিল ও শাহ আলম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কেরানীগঞ্জ থানা থেকে যোগাযোগ করা হলে শিশুটির পরিবার থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে রক্ষিত শিশুর জামাকাপড় দেখে পরিচয় শনাক্ত করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ শ হ আলম

এছাড়াও পড়ুন:

ডিবিপ্রধানের পদ থেকে রেজাউলকে সরিয়ে দেওয়া হলো

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধানের পদ থেকে রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার ডিএমপির কমিশনারের কার্যালয়ের এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

দিন কয়েক আগে মডেল মেঘনা আলমকে আটক করে ডিএমপির ডিবি। পরে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। মেঘনা আলমকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা সঠিক হয়নি বলে আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

রেজাউলকে ডিবিপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আদেশ সই করেছেন ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। আদেশে বলা হয়, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিককে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

আদেশে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক স্বার্থে রেজাউল করিম মল্লিককে তাঁর নামের পাশে উল্লেখিত স্থানে পদায়ন করা হলো।

এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর ডিএমপির ডিবির প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ১৭ তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের কর্মকর্তা রেজাউল ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ডিএমপির ডিবির প্রধান হওয়ার আগে তিনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাইকোর্টের রুল: মেঘনা আলমকে কেন মুক্তি নয়
  • মডেল মেঘনা আলমের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি: আইন উপদেষ্টা
  • মেঘনা আলমকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার, তা ঠিক হয়নি: আইন উপদেষ্টা
  • মেঘনা আলমকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা ঠিক হয়নি: আইন উপদেষ্টা
  • মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে: আসিফ নজরুল
  • মেঘনা আলমকে যে প্রক্রিয়ায় আটক, তা সঠিক হয়নি: আসিফ নজরুল
  • ডিবিপ্রধানের পদ থেকে রেজাউলকে সরিয়ে দেওয়া হলো
  • স্কুলছাত্রী অপহরণের মামলা করায় পরিবারকে হুমকি
  • মডেল মেঘনা আলম কেন নিরাপত্তা হেফাজতে, জানাল পুলিশ
  • মেঘনা আলমকে অপহরণের অভিযোগ সঠিক নয়: পুলিশ