রেমিট্যান্স হিসেবে ৭২১ কোটি টাকা আনা প্রতীকী গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান দাবি করেছেন, বৈধ আয় থেকেই তিনি এ অর্থ দেশে এনেছেন। তিনি বলেন, যথাযথ কর পরিশোধ করে বৈধ পথেই আনা হয়েছে এ অর্থ। গতকাল বুধবার সমকালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপকালে বিদেশে অবস্থানরত ফারুকী হাসান এমনটিই দাবি করেন। 

ফারুকী হাসান বলেন, ‘কোথা থেকে কীভাবে এত বছর ধরে এই অর্থ দেশে এসেছে, তার সবকিছুই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানত। অথচ এত বছর পর এখন আমার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দু:খজনক।’ এই ঘটনায় তাঁকে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে তিনি। প্রসঙ্গত, গত সোমবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের এক মতবিনিময় সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো.

আব্দুর রহমান খান বলেন, প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে করমুক্ত সুবিধার আইনি সুযোগ নিয়ে এক ব্যক্তি ৭২১ কোটি টাকা দেশে এনেছেন। অর্থাৎ কর ফাঁকি দিয়েছেন তিনি। তবে এনবিআর চেয়ারম্যান তখন ওই ব্যক্তির নাম বলেননি। 

এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে জানা যায়, ব্যক্তিটি প্রতীকী গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। দেশে তাঁর সিরামিক, ডেভেলপার, খাদ্য, এনার্জি ও রিফাইনারির ব্যবসা রয়েছে। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। তবে ২০০১ সাল থেকে তিনি কানাডায় থাকেন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ফারুকী হাসান দেশে একটি হোটেলের মালিক। তাঁর আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স রয়েছে। তিনি একটি ব্যাংকের পরিচালক। দেশে জমির ব্যবসায় বিপুল বিনিয়োগও করেছেন। কানাডায় তিনটি বাড়ি রয়েছে। তবে সেগুলোর তথ্য আয়কর ফাইলে প্রদর্শন করেননি। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুকী হাসান বলেন, বাংলাদেশের নৌ ও সেনাবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ কেনার দরপত্রে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত  ১৩ বছরে চীন থেকে ১৫টি যুদ্ধজাহাজ কিনেছে বাংলাদেশ। এসব জাহাজ আমদানি করা হয়েছে চীন থেকে। চীনের হয়ে বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে রপ্তানি কার্যক্রমে মধ্যস্থতা করেছেন ফারুকী হাসান। অর্থাৎ বাংলাদেশে যুদ্ধজাহাজ রপ্তানির আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া তাঁর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এতে তিনি পরামর্শক ফি বাবদ বৈধ পথে অর্থ আয় করেছেন। পরে প্রবাসী আয় হিসেবে কয়েক ধাপে প্রতীক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে এ অর্থ দেশে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এই অর্থ দেশটির মুদ্রা ইউয়ানে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। বৈদেশিক এই মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংক তার কোম্পানির হিসাবে স্থানান্তর করেছে। চীন সরকার অর্জিত এ অর্থের ওপর কর কেটে রেখেছে। কর পরিশোধের সনদপত্রও দিয়েছে চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। কর ফাইলের সঙ্গে সেই সনদপত্র দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে। নিয়ম অনুযায়ী, আয়ের উৎস দেশে কর কাটা হলে বাংলাদেশে কর দিতে হয় না। 

অভিযোগ উঠেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা-বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের প্রভাব খাটিয়ে কর ফাঁকি দিয়ে এ অর্থ দেশে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুকী হাসান বলেন, পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর হলেও তাঁর জন্ম ঢাকার কলাবাগানে। সেই ছোট বয়স থেকেই তারেক সিদ্দিককে তিনি চিনতেন। তাঁর সঙ্গে বহু বছরের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু অভিযোগটি সঠিক নয়। এখানে প্রভাব খাটানোর কিছু নেই। কারণ কোথা থেকে কীভাবে এত বছর এই অর্থ দেশে এসেছে, তার সবকিছুই এনবিআর জানত। কিন্তু এত বছর পর এখন কর ফাঁকির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। 

ফারুকী হাসান বলেন, ‘গত ১১ মার্চ এনবিআর থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ২০ মার্চের মধ্যে সেগুলো জমা দিতে বলা হয়। তাদের চাওয়া অনুযায়ী কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার আগেই এনবিআর এ ঘটনা ফাঁস করেছে। এতে আমাকে এবং আমার প্রতিষ্ঠানকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। অথচ আমি চারবার সিআইপি হয়েছি। উপার্জিত অর্থে বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছি। এসব কারখানায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মানুষ কাজ করে। প্রতিবছর ৮ থেকে ৯ কোটি টাকা কর দিই।’

তিনি বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। তাঁর দেওয়া পাসপোর্টে এখন দেশ-বিদেশে ঘুরি। কিন্তু ধান্ধাবাজি করিনি কখনও। কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি থাকলেও এখন কোনো দলের পদ-পদবিতে নেই।’ 

ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংকে তাঁর প্রায় ১০০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত স্থগিত করেছে এনবিআর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বছরে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা জাকাত দিতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক হিসাব স্থগিত করায় জাকাত দেওয়ার অর্থও তোলা যাচ্ছে না। এসব বিষয়ে সমাধানের জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ স ন বল ন এত বছর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাভেল বা নেক পিলো ঠিকমতো ব্যবহার করছেন তো

ট্রাভেল পিলো মূলত একধরনের বালিশ বা কুশন, যা দেখতে অনেকটা ইংরেজি ‘সি’ বা ‘ইউ’ বর্ণের মতো। দীর্ঘ যাত্রায় ঘুম কিংবা আরামের জন্য সিটে ঘাড় এলিয়ে দেন অনেকে। কিন্তু প্রচণ্ড ঝাঁকুনি ও সিটে ঠিকমতো মাথা রাখতে না পারায় তৈরি হয় অস্বস্তি। টানা অস্বস্তি ঘাড় ও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি পেশিতে টানও লাগে। ট্রাভেল পিলো মূলত এ ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচায়। ঘাড় ও মাথাকে রাখে আরামদায়ক অবস্থানে। ফলে পেশিতে টান লাগে না। তবে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে এই ট্রাভেল পিলোর কারণে তৈরি হতে পারে বিভিন্ন সমস্যা।

বিভিন্ন ধরনের ট্রাভেল পিলো

ট্রাভেল পিলো ব্যবহারের আগে সঠিক ট্রাভেল পিলো বেছে নেওয়া জরুরি। বাজারে এখন বেশ কয়েক ধরনের ট্রাভেল পিলো পাওয়া যায়।

কিছু পিলো আছে, বাতাসে ফুলিয়ে ব্যবহার করা হয়। এসব সহজে বহনযোগ্য। দীর্ঘ যাত্রা শেষে লাগেজে ভাঁজ করে রাখা যায়।

মেমোরি ফোমের তৈরি কিছু পিলো আছে, যা তুলনামূলক ভারী হলেও কাঁধ ও ঘাড়ের জন্য বেশ ভালো।

৩৬০ ডিগ্রি ‘র‌্যাপ অ্যারাউন্ড পিলো’ পাওয়া যায়, যা একই সঙ্গে গলা, কাঁধ ও ঘাড়ের জন্য আরামদায়ক।

এর মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দসই বা উপযোগী ট্রাভেল পিলো।

আরও পড়ুনদীর্ঘ যাত্রায় ব্যায়াম১৯ ডিসেম্বর ২০১৯সঠিক ব্যবহার

ট্রাভেল পিলো কেনার আগে ঘাড়ে সঠিকভাবে সেঁটে যাচ্ছে কি না, তা দেখে নেবেন। শুরুতে ঘাড়ের মাঝবরাবর পিলো সেট করে নিন। যাতে পিলোটা ঘাড়ের দুই পাশে সমান অংশজুড়ে থাকে। খুব শক্ত করে পিলো সেট করবেন না। ঘাড় ও মাথা সহজে নড়াচড়া করার জায়গা রাখুন।

পিলো ঠিকভাবে সেট করতে না পারলে মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে থাকবে। এতে অস্বস্তি তৈরি হবে। খুব শক্ত করে বসালে ঘাড় দ্রুত আড়ষ্ট হয়ে যাবে, ফলে ঘাড়ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। সুবিধা অনুযায়ী পিলো হালকা শক্ত বা নরম করে নিতে পারেন।

আরও পড়ুনবেড়াতে যাচ্ছেন? ৫-৪-৩-২-১ নিয়মে ব্যাগ গোছান  ২৮ নভেম্বর ২০২৪

পিলো ঠিক করে সেট না হলে ঘাড় একদিকে বাঁকা হয়ে থাকবে। অথবা ঘাড় সামনের দিকে ঝুঁকে থাকবে। এমন হলে ঘাড়ের পেশি দ্রুত আড়ষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য ঘাড়ে পিলো সেট করেই ঘুমানোর পজিশন ঠিক করা দরকার। জানালার পাশে সিট থাকলে জানালায় হেলান দিয়ে ঘুমাতে পারেন। তখন জানালার দিকে পিলো সামান্য নরম করে নেবেন। এতে ঘুম ভালো হবে।

যানবাহনের আইল সিটে সিট বসলে চেষ্টা করবেন সিটে হেলান দিয়ে ঘুমানোর। তখন ঘাড়ের দুই পাশে সমান করে করে পিলো সেট করে নিতে হবে।

আপনার স্বাভাবিক ঘুমের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ট্রাভেল পিলো বেছে নিতে পারেন। যদি এক পাশে মাথা দিয়ে ঘুমান, তবে আপনার জন্য র‌্যাপ অ্যারাউন্ড পিলো উপযোগী।

ট্রাভেল পিলোর যত্ন

ভ্রমণপিপাসু না হলে ট্রাভেল পিলো ব্যবহার করা হয় কালেভদ্রে। বাকি সময় জিনিসটা যেনেতনভাবে ফেলে রাখবেন না। ট্রাভেল পিলো টেকসই করতে হলে যত্নের বিকল্প নেই। ভ্রমণ থেকে বাড়ি ফিরে কাপড়ের সঙ্গে একবার পরিষ্কার করে নিন। এতে ময়লা-জীবাণু জমে থাকবে না। ভ্রমণ শেষে পিলোতে কোনো সমস্যা আছে কি না, দেখে নিন। কোনো সমস্যা হলে তা ঠিক করে নিন। মেমোরি ফোমের ট্রাভেল পিলো পানিতে পরিষ্কার করবেন না। বরং ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিতে পারেন। এ ছাড়া সংরক্ষণের ব্যাপারেও আলাদা নজর দিতে হবে। চেষ্টা করবেন যাতে পিলোটি ভারী কিছুর নিচে চাপা না পড়ে। ঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে একটা পিলো অনেক দিন ব্যবহার করা যায়।

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনগাড়িতে চড়লেই বমি পায়? জেনে নিন সমাধান১৭ মার্চ ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ