আবারও নেতজারিম করিডোরের নিয়ন্ত্রণ নিল ইসরায়েল
Published: 20th, March 2025 GMT
উত্তর গাজাকে দক্ষিণ থেকে বিভক্তকারী নেতজারিম করিডোরের ফের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। গাজায় যুদ্ধের ‘বাফার জোন’ সম্প্রসারণের কথা বলে এ ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের জন্য ‘শেষ সতর্কতা’ জারি করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
এক্সে একটি পোস্টে ইসরায়েলি বাহিনী লিখেছে, গাজা উপত্যকার কেন্দ্র এবং দক্ষিণে একটি কেন্দ্রীভূত স্থলে অভিযান শুরু করেছে তারা। গত ২৪ ঘণ্টা ধরে ‘নিরাপত্তা এলাকা সম্প্রসারণ এবং উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে একটি আংশিক বাফার অঞ্চল তৈরির লক্ষ্যে এ অভিযান চলছে। এরই অংশ হিসেবে ফের নেতজারিম করিডোরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে।’ গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে এই করিডোর থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি হামলার শিকার রাফায় একটি গাড়ির ভেতরে মানুষের ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ দেখে হতবাক একটি চিকিৎসক দল। তারা বলেন, আল-ইয়াসমিন মলের সামনে হামলার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। আমরা অবাক হয়ে যাই, লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি গাড়ি। যানবাহনটিতে বেসামরিক নাগরিকদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ বলেন, ‘গাজার বাসিন্দাদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরামর্শ অনুসরণ এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের প্রত্যাবর্তন ও হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। গাজার বাসিন্দারা, এটি আপনাদের জন্য শেষ সতর্কবার্তা।’
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে রাতভর বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত ২৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। পবিত্র রমজান মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে দখলদার ইসরায়েলের গাজায় চালানো নির্বিচার হামলায় গত দু’দিনে অন্তত ৯৭০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৫৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া মঙ্গলবার ভোরে গাজায় ফের বোমাবর্ষণে নিহত ৪৩৬ জনের মধ্যে ১৮৩ শিশু রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হামাস কর্মকর্তা তাহের আল-নোনো বলেছেন, গাজা উপত্যকায় নতুন করে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ সত্ত্বেও তারা আলোচনার দরজা বন্ধ করেননি। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, স্বাক্ষরিত চুক্তি থাকলে নতুন চুক্তির প্রয়োজন নেই।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার রাতে বলেছেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে আবার যুদ্ধ শুরু করেছে তাঁর দেশ। ‘এটা কেবল শুরু।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল কর ড র মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
দখলদারদের তালিকা হলেও দুই যুগেও নেই উচ্ছেদ
দখল ও দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে কুমিল্লার শহরের পাশ দিয়ে এক সময়ের প্রবহমান গোমতী নদী। মরা নদী নামেই এই নদীটি এখন বেশি পরিচিত। যে নদী হতে পারত নগরবাসীর জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র, সেখানে এখন পা ফেলার জায়গা নেই। সর্বত্র
উৎকট গন্ধ। মানচিত্রে নদীর আয়তন বিশাল থাকলেও দুই তীরের জলাধার দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনসহ নানা স্থাপনা। ২০০৩ সাল থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ তালিকা করা হলেও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে আজও আলোর মুখ দেখেনি। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন দখলদার।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীপারের বাসিন্দাদের বাড়িঘরের ময়লা, শহরের ড্রেনের দূষিত আবর্জনা, মানববর্জ্য, কচুরিপানায় একাকার হয়ে নদীর পানি কালো-দুর্গন্ধময় ও বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন মরা নদীর দুই পারের বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় কুমিল্লা শহর ঘেঁষে প্রবহমান ছিল গোমতী নদী। তখন বর্ষাকালে বন্যায় নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পেলে বাঁধ ভেঙে শহর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করত। তাই শহর রক্ষার জন্য ষাটের দশকে এ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। এর পর থেকে শহরের উত্তর প্রান্তের কাপ্তানবাজার থেকে পূর্ব প্রান্তের শুভপুর এলাকা পর্যন্ত নদীর প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ পুরাতন বা মরা গোমতী নদী নামে পরিচিতি লাভ করে। নদীর এপারের শহরের মানুষের সঙ্গে ওপারের যোগাযোগের জন্য কাপ্তানবাজার, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, থানা রোড, হারুন স্কুল সড়ক ও চকবাজার এলাকায় পাঁচটি আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া হয়। এই নদীর কূলে রয়েছে কুমিল্লা নগরীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড।
সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয়দের অনেকে প্রভাব খাটিয়ে মরা নদীর বিভিন্ন স্থানের দুই পার ও পানির অংশ ধীরে ধীরে অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ভরাট করে বহুতল ভবন, আধাপাকা বাড়িঘর ও দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে মরা নদীর দুই পারে ঘনবসতি গড়ে উঠেছে এবং দখলযজ্ঞে নদীটি সরু খালের আকার ধারণ করেছে।
থানা রোডে পশ্চিমাংশে নদীতে বর্তমানে বেশির ভাগ অংশ কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরে আছে। অন্য অংশগুলো মাছ চাষ করতে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হচ্ছে। গাংচরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, সরকারি একটি নদী শুধু দখলই নয়, নদীর পানিতে মরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, কুকুর-বিড়াল, পশু-পাখি ছাড়াও কচুরিপানা ও আবর্জনা ফেলা হয়। এখন দূষিত কালো পানি থেকে অস্বাস্থ্যকর গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাউবো
কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল নেই। জেলা-পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করে নদীর সম্পত্তি দখলমুক্ত করা হবে।
আদর্শ সদর উপজেলা ভূমি অফিসের একটি সূত্র জানায়, ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুরাতন গোমতী নদীর দুই পারের ৭৭২ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা করা হয়। তাদের উচ্ছেদের জন্য বিগত ২১ বছরে কয়েক দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নদীর মোট ২৫৮ একর জমি দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে তথ্য দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু উচ্ছেদ হয়নি।
তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, গত ২১ বছরে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদীপারের চাঁনপুর এলাকার ষাটোর্ধ্ব এক বাসিন্দা বলেন, তাদের পূর্বপুরুষরা নদীপারে বসবাস করে আসছে। সরকার উচ্ছেদ করতে চাইলে আমাদের পুনর্বাসন করে উচ্ছেদ করলে আপত্তি থাকবে না। অন্যথায় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই প্রাকৃতিক জলাধারটি দখল-দূষণে অনেকটা বিলীনের পথে। এর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সভা-সেমিনার ও নানা কর্মসূচি পালনসহ স্মারকলিপি দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। তবে নদীর জায়গা দখলমুক্ত করে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে
ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তোলা গেলে এ মরা নদী পর্যটনের এক নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটাতে পারে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলম বলেন, পুরাতন গোমতী নদীসহ কুমিল্লা নগর এলাকার বহুমাত্রিক উন্নয়নের জন্য ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর একনেক সভায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশ কিছু মেগা প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু নদী দখলমুক্ত না করে প্রকল্প শুরু করা যাচ্ছে না। নদীর জায়গা দখলমুক্ত করে সৌন্দর্য প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে কাজ চলছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রাচীন এ শহরের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে।