নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বান্টি এলাকার বাটিক কাপড়ের মার্কেটের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। দেশের প্রায় সব জেলা থেকেই ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। রমজান মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ মার্কেটে বিক্রি বেশ ভালো ছিল। কিন্তু এখন মার্কেটটির সামনের সারির দোকানগুলোকে খুচরা ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও ভেতরের সারির দোকানগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা একেবারেই কমে গেছে।
বাটিক মার্কেটের ব্যবসায়ীদের ধারণা, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসবে, ক্রেতার সংখ্যা আরও কমে যাবে। গতকাল বুধবার দুপুরে এমনটাই জানান হাজী বারেক মোল্লা সুপারমার্কেটের ঝুমু বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, ঢাকার বাইরে থেকে ক্রেতা আসছেন। বিক্রি কম। ব্যবসায়ীরা অনেকে অলস সময় কাটাচ্ছেন। এর কারণ শীতের পর পরই এবারের ঈদ এসেছে। এ জন্য পাইকারি ক্রেতা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। গত বছর রমজান মাসে ২৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি করতে পারলেও এ বছর তিনি এখন পর্যন্ত ১০ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি করতে পেরেছেন।
বুধবার বিকেলে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বান্টি বাজারের বাটিক মার্কেটগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা তেমন নেই। দোকান মালিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেউ আবার দোকান গোছাতে ব্যস্ত। কেউ দোকান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছেন। বান্টি এলাকার প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। মাঝেমধ্যে দু-একজন খুচরা ক্রেতার দেখা মিললেও অনেকে থ্রিপিসের দাম কিছুটা বেশি বলে জানান। এমনই একজন ক্রেতা আব্দুস সালাম জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাটিক মার্কেটে থ্রিপিসের দাম কিছুটা বেশি। বাজারের ব্যবসায়ীরা সুতার মূল্য বেশি হওয়ায় কাপড়ের দামও বেড়েছে বলে জানান।
থ্রিপিস কিনতে আসা ছনপাড়া গ্রামের ক্রেতা লিপি আক্তার জানান, তিনি ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে দুটি থ্রিপিস কিনেছেন। দাম কিছুটা বেশি। দোকানে তেমন ভিড় নেই বলে নিজেই দেখে পছন্দমতো থ্রিপিস কিনতে পেরেছেন।
বান্টি বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাটিক, থ্রিপিসসহ বাটিক কাপড়ের রাজধানী বান্টি বাজার। প্রায় ৪৫ বছর আগে এ এলাকায় বাটিকশিল্পের কাজ শুরু হয়। আবহাওয়াজনিত কারণে এবারের ঈদে সুতি কাপড়ের প্রতিই মানুষের আগ্রহ বেশি। তাই সুতি কাপড়ে বাটিকের কাজ করছেন এখানকার কারিগররা। বাটিকশিল্প ঘিরে বান্টি এলাকায় গড়ে উঠেছে বিশাল মোকাম।
দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজানের ১৬ তারিখ পর্যন্ত বাটিকের মোকামে বেশ ভালোই বিক্রি হয়েছিল। বান্টি এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশে ২০টি মার্কেটে প্রায় দুই হাজার দোকানের প্রতিটিতে একদিনে গড়ে চার-পাঁচ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়ে থাকে। বছরে এখানে গড়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এবারের ঈদে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার কাপড় বিক্রির লক্ষ্য ছিল ব্যবসায়ীদের।
মালিয়া এক্সক্লুসিভ কালেকশনের মালিক জুয়েল মিয়া জানান, এ এলাকার বাটিকের কাপড় ঢাকাসহ দেশের বহু এলাকায় যায়। বান্টির বাটিক দেশ ছাপিয়ে মধ্যপ্রাচ্যেও যাচ্ছে। সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে বাটিকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ বছর তিনি তাঁর পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে রমজানের ১৬ দিনে ৩০ লাখ টাকার থ্রিপিস বিক্রি করতে পেরেছেন। এখন ক্রেতা কম। প্রতিদিন কিছু খুচরা ক্রেতা দোকানে আসেন।
শামীম ফ্যাশন কর্নারের মালিক তরিকুল ইসলাম জানান, ঈদ ঘনিয়ে এলে পাইকাররা এখানে কম এলেও খুচরা ক্রেতার পদচারণায় মুখর থাকত। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। পুরো মার্কেটে তেমন কোনো ক্রেতা নেই।
একই কথা জানালেন সামির থ্রিপিসের মালিক সামির আলী, শামীম ফ্যাশন কর্নারের মালিক তরিকুল ইসলাম, আনাস বাটিক ঘরের মালিক রমজান মিয়া, প্রভা থ্রিপিস অ্যান্ড জিহাদ বুটিকসের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুর হোসেন, মেসার্স আয়েশা থ্রিপিসের মালিক বাচ্চু মিয়া, সানাউল্লাহ শপিংমলের মালিকসহ অন্য ব্যবসায়ীরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ব যবস য় দ র ব যবস য় র এল ক য় রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জীবনে বহু কিছু করার পর ‘ধৈর্য-সহ্যে’ কপাল খুলছে গোলাম রসুলের
সবে সন্ধ্যা নেমেছে শহরের বুকে। খুলনা নগরের সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাতে ছোট একটা দোকানের সামনে বেশ ভিড়। অর্ডার দিয়ে কেউ টুলে বসে আছেন, কেউ আবার প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন। বিক্রেতা দুজনের চার হাত যেন চলছে সমানতালে। একজন ছোট ছোট ফুচকা বানাচ্ছেন, তো আরেকজন ভেলপুরির প্লেট সাজাচ্ছেন। আবার কখনো একজন পেঁয়াজ–শসা কুচি করে নিচ্ছেন আর আরেকজন বিল রাখা বা টিস্যু এগিয়ে দেওয়ায় ব্যস্ত।
নগরের আহসান আহমেদ রোডের সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের একটি ছোট ফুচকা ও ভেলপুরির ভ্রাম্যমাণ দোকানের চিত্র এটি। দোকানের নামটাও বেশ অন্য রকম। ‘ধৈর্য-সহ্য ছোট ফুচকা ও ভেলপুরি স্টোর’। দোকানটি চালান গোলাম রসুল নামের একজন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত চলে এই ভ্রাম্যমাণ দোকান। এই দোকানের ছোট ফুচকা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
গোলাম রসুলের বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের পুরাতন ঘোষগাতী গ্রামে। সাত ভাই–বোনের সংসারে রসুলের বড় ভাই ভাজাপোড়া খাবারের ব্যবসা করতেন। বুঝতে শেখার পর থেকেই তাই এতেই হাতেখড়ি হয় রসুলের। তবে তাতে ঠিক পোষাচ্ছিল না। তাই বছর ৩০ আগে কিছু করার আশায় খুলনা শহরে আসেন গোলাম রসুল। তবে এই শহরে পুরোপুরি থিতু হতে পারেননি। নানা টানাপোড়েনে কখনো খুলনা, কখনো মোল্লাহাট, আবার কখনো ঢাকায় কেটেছে তাঁর সময়। ৪৮ বছরের এই জীবনে নানা রকম কাজ করেছেন। ব্যবসাও করেছেন অনেক কিছুর। তবে সেসব ব্যবসায় কেবল লোকসানই হয়েছে তাঁর। অবশেষে ‘ছোট ফুচকায়’ তাঁর কপাল খুলেছে।
কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই কথা হয় গোলাম রসুলের সঙ্গে। রসুল বলেন, ‘আগে রিকশা চালাইছি। নানা রকম ব্যবসাও করছি। গ্রাম থেকে কিনে মাওয়া ফেরিঘাট আর ঢাকায় ডাব বেচছি। ওই ব্যবসায় অনেক মার খাইছি। মানুষ টাকা দেয় নাই। এখনো ৬০-৭০ হাজার টাকা পাব। ডাব ব্যবসায় মার খেয়ে দুই বছর আগে আবারও খুলনা শহরে আসি কিছু করা যায় কী না সেই জন্যি।’ খুলনা এসে আবারও রিকশার প্যাডেল ঘোরাতে থাকেন রসুল একই সঙ্গে মাথায় ঘুরতে থাকে চিন্তা। এরপর শীতের পিঠা বিক্রি শুরু করেন। শীত শেষ হতে আবারও অনিশ্চয়তা। এখন কী হবে!
গোলাম রসুল বলেন, ‘গরম চলে আসল, কী করব বুঝে পাচ্ছিলাম না। পরে খুলনার ৭ নম্বর ঘাট থেকে কিনে ভেলপুরি বেচছি। কিন্তু এতে হচ্ছিল না। এরপর চিন্তা করলাম আনকমন কিছু করা যায় কি না। গত বছরের কোরবানির ঈদের পর থেকে শুরু করি ছোট ফুচকা বিক্রি।’
দোকানটি চালান গোলাম রসুল নামের একজন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত চলে এই ভ্রাম্যমাণ দোকান