ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ ফতেপুর বেইলি সেতু
Published: 20th, March 2025 GMT
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফতেপুর বেইলি সেতুর ওপর যানজটের কারণে নাকাল মানুষ। তার ওপর আসন্ন ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেতুটি। কারণ ঈদ উপলক্ষে রাস্তায় গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন যানজট লেগে থাকছে ওই এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের ফতেপুর গ্রামে ২০০১ সালে ৯০ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট প্রশস্ত একটি বেইলি সেতু করা হয়। সেতুটি সরু হওয়ায় পাশাপাশি দুটি বড় গাড়ি পার হতে পারে না। এতে প্রায়ই সেতুতে গাড়ি আটকা পড়ে যানজট তৈরি হয়। সেতুর দুই পাশের রাস্তা সরু ও রাস্তার পাশে মাটি না থাকায় গাড়িগুলো রাস্তা দখল করে থাকে। ফতেপুর বেইলি সেতু দিয়ে প্রতিদিন বাঞ্ছারামপুর, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, নবীনগর, হোমনা ও কসবা উপজেলার হাজারো মানুষ কড়িকান্দির মেঘনা নদীর ফেরি দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে থাকেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, শরীফপুর ও ফতেপুর গ্রামের মধ্যে একটি খালের ওপর ৯০ ফুটের মতো লম্বা বেইলি সেতুটি রয়েছে। সেতুর প্রস্থ ১০ ফুটের মতো। সেতুসংলগ্ন রাস্তার দুই পাশে মাটি না থাকায় সরু হয়ে গেছে। যে কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেতুতে যানজট লেগে থাকছে। এখানে যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য নেই কোনো ট্রাফিক পুলিশ বা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ফলে চালকদের মধ্যে আগে যাওয়ার একটা প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। যে কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মাসুদ মিয়া বলেন, ‘এই রুটে যখন যাত্রী নিয়ে আসি তখন আতঙ্কে থাকি কতক্ষণ যেন অপেক্ষা করতে হয় সেতু পার হতে। প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে অথচ রাস্তা প্রশস্ত করলে এ সমস্যা থেকে আমরা কিছুটা হলেও মুক্তি পেতাম।’
ট্রাকচালক সোলেমান মিয়া জানান, এই সেতু পার হওয়ার সময় প্রায়ই যানজটে পড়তে হয়। বিশেষ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের বেপরোয়া চলাচলের কারণে এই যানজট বেশি লাগে। দুই পাশের রাস্তা সরু হওয়ার কারণে গাড়িগুলো ঠিকভাবে রাখা যায় না। তার ওপর অটোরিকশার চালকরা আগে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করেন। এসব কারণেই প্রতিদিন যানজট তৈরি হয়।?
ছয়ফুল্লাকান্দি বাজারের ব্যবসায়ী আল আমিন মিয়া বলেন, ‘ফতেপুর বেইলি সেতুটা আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য একটা দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মালপত্র আনা-নেওয়ার সময় প্রায়ই ট্রাক আটকে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ কারণে ট্রাকচালকরা আসতে চান না। এলেও অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন। এখানে যদি
ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে হয়তো যানজট থাকবে না।’
ফরদাবাদ গ্রামের স্কুলশিক্ষক রুহুল আমিনের ভাষ্য, কোনো কাজে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে যাওয়ার সময় প্রায়ই ফতেপুর বেইলি সেতুতে যানজটে পড়তে হয়। সেতুটি ও রাস্তার প্রস্থ কম হওয়ায় এই যানজট লেগে থাকছে।
সড়ক ও জনপদের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য একটা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তার পরও সেতুর দুইপাশে ইট দিয়ে এসবিবি করে দেওয়ার চেষ্টা করব বরাদ্দ পেলে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা জানান, থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে পুলিশের ব্যবস্থা অথবা গ্রাম পুলিশ দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে করে ঈদ উপলক্ষে মানুষ নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে পারে এই সেতু দিয়ে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য নজট ল গ ব যবস থ ই য নজট র ব যবস র জন য র ওপর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।
কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।
কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।