ইফতার পার্টি ঘিরে দু’পক্ষের উত্তেজনা, ১৪৪ ধারা জারি
Published: 20th, March 2025 GMT
নান্দাইল উপজেলায় বিএনপির ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা দাওয়া ইটপাটকেল ও ককটেল ছোড়াছুড়িতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার পরপর উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
গতকাল বুধবার বিকেলে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারমিনা সাত্তার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ আদেশ জারি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার নান্দাইল পৌর সদরের সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে ইফতার পার্টির আয়োজন করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত হওয়ার পর থেকে ওই কমিটিকে অবৈধ বলে সেটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মী। একই সময়ে একই স্থানে আরেকটি ইফতার পার্টি আয়োজনের ঘোষণা দেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষই বিকেল ৪টা থেকে কলেজের কাছাকাছি নান্দাইল নতুন বাজার এলাকায় অবস্থান নেন। উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিষয়টি জানতে পেরে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার ও নান্দাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাহিদুল ইসলাম সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে অবস্থান নেন। বিকেল ৫টার দিকে পদবঞ্চিত নেতাকর্মী এবং আহ্বায়ক কমিটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ইটপাটকেল ও কয়েকটি ককটেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মুখে উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে ১৪৪ ধারা জারি করলে পুলিশ তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশীষ কর্মকার জানান, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইয়াসের খান চৌধুরী ও তাঁর সমর্থকরা একটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন। অপরদিকে পদবঞ্চিত বিএনপি নেতাকর্মীরা একই স্থানে আরেকটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। এতে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে সেখানে নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার ১৪৪ ধারা জারি করেন। এর পর থেকে পরিস্থিত স্বাভাবিক রয়েছে।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার জানান, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ ইফত র প র ট পদবঞ চ ত কর মকর ত ন ত কর ম পর স থ ত ১৪৪ ধ র ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়া বিএনপিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ আখ্যা দিয়ে আবার বিক্ষোভের ঘোষণা পদবঞ্চিতের
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা আগামী বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন।
গত ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। তখন তিন মাসের জন্য ওই কমিটি গঠন করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ায় বর্তমান কমিটি দ্রুত বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন পদবঞ্চিত ব্যক্তিরা।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামিমুল হাসান বলেন, ‘বর্তমান কুতুব-জাকির কমিটিকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি বললে ভুল হবে না। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। আর চলতে পারে না, পারে না, পারে না। কুষ্টিয়া বিএনপির রাজনীতিকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। ভঙ্গুর কমিটি বাতিল করতে হবে।’ তিনি ‘বিতর্কিত’ কমিটি ভেঙে যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাদের নিয়ে দ্রুত নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পদবঞ্চিত নেতারা অভিযোগ করেন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কমিটি করা হয়েছে। বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর সার্চ কমিটি গঠনসহ যত কমিটি গঠন করেছে, সব কমিটিতে ত্যাগী বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের নেওয়া হয়েছে। এসব তাদের নিজেদের ‘পকেট কমিটি’।
জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, ‘কুতুব-জাকিরের কমিটি ব্যর্থ কমিটি। এই কমিটির দ্বারা কুষ্টিয়া বিএনপির এক বিন্দু সাংগঠনিক কিছু হয়নি। বরং কুষ্টিয়ায় চারটি আসনে যে শক্ত অবস্থান ছিল তা ভেঙে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে চারটি আসনই হারাতে হবে।’
জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মেজবাউর রহমান বলেন, কমিটি বাতিলের দাবিতে বারবার আন্দোলন করা হচ্ছে। অভিযোগ তুলে ধরা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও জানানো হচ্ছে।
দাবি আদায়ে আগামী বুধবার বেলা ১১টায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেন সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বশিরুল আলম (চাঁদ)। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রঘোষিত এক অনুষ্ঠান কুষ্টিয়ায় হয়। সেই অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে সবাই এক কাতারে ছিলাম। বলা হয়েছিল, অনুষ্ঠানের পর পদবঞ্চিতদের পদ দেওয়া হবে। কিন্তু আর যোগাযোগ করা হচ্ছে না।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া ২০১৯ সালের ৮ মে সৈয়দ মেহেদী আহমেদকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তার আগে ২০১২ সালে গঠিত কমিটিতে এই দুজন একই পদে ছিলেন। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গত ১২ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি বাতিল করা হয়। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না। কমিটি বাতিলের দাবিতে গত ৬ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। একই দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর শহরের এনএস রোডে দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এ ছাড়া ৮ জানুয়ারি দাবি আদায়ে তিন দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এরপর ফেব্রুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলন করে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।