সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় কমলো নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ
Published: 20th, March 2025 GMT
প্রজনন মৌসুমে বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৬৫ থেকে কমিয়ে ৫৮ দিন করেছে সরকার। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে মৎস্য গবেষক, জেলে ও ব্যবসায়ীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। এতদিন ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখা হতো। তবে ভারতে প্রতিবছর মাছ ধরা বন্ধ থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত। মিয়ানমারে নিষেধাজ্ঞার এই সময় ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। বাংলাদেশের জেলেরা যখন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রাখেন, তখন প্রতিবেশী দেশের জেলেরা এ দেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরেন। এ কারণে মৎস্যজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে নিষেধাজ্ঞার সময় সমন্বয়ের দাবি করে আসছিলেন। তাছাড়া ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে আসছিলেন জেলে, মাছ ব্যবসায়ী ও গবেষকরা। তাদের দাবি মেনে এবার সেই নিয়ম প্রত্যাহারের কথা বলা হলো নতুন প্রজ্ঞাপনে।
ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের জলসীমায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিন্যাস করার বিষয়টিকে যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের সাবেক গবেষক ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, এটা দেশের সামুদ্রিক মৎস্য খাতের জন্য সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন দাবি করে আসছিলাম। কারণ, আগে সরকার যে উদ্দেশ্যে এই নিষেধাজ্ঞা দিত, তা দু’দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় প্রতিবেশী দেশকে লাভবান করত। এটা আমাদের মৎস্য সম্পদের জন্য একটি বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইলিশের দাম যেন ঠিক থাকে, তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না: উপদেষ্টা ফরিদা
ইলিশকে গ্লোবাল ফিস উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘যে ১১টা দেশে ইলিশ পাওয়া যায় তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। ইলিশ বিশ্বের মধ্যে একটা সম্পদ, যা বাংলাদেশে আছে। ইলিশের ব্যবস্থাপনা ঠিক মতো করতে পারলে বিশ্বের কাছে তা পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব। তাই ইলিশকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে হবে। জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে তখন যেন দামটা ঠিক থাকে। তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না।’
শনিবার সকালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনার ‘ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রজনন সাফল্য নিরুপণ, জাটকা সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এখনই আমরা ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের যেতে চাই না। তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম প্রজনন আমাদের প্রাণিসম্পদের খুব বেশি উপকার করেনি। এটা আমাদের বুঝতে হবে। ইলিশ প্রকৃতি থেকে আসা একটা মাছ। এটা প্রাকৃতিকই রাখা ভালো। একই সঙ্গে জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে তখন যেন দামটা ঠিক থাকে তা আমাদের দেখতে হবে। তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না।
পরিবেশ ওপর গুরুত্বরোপ করে উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততার প্রভাবতো আছেই, সেই সঙ্গে বৃষ্টি হওয়া না হওয়ার সঙ্গে ইলিশের ডিম ছাড়ার একটা সম্পর্ক আছে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা কী করতে পারি তা দেখার জন্য গবেষকদের আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, আমরা যদি যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। তাহলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। আর ৯৫ ভাগ জেলেরা যদি ইলিশ ধরা বন্ধের সময় তারা না ধরে তাহলে কেন আমরা বাকি কাজটা করতে পারব না। জেলারা যেখানে মাছ ধরতে যায়, সেখানে দস্যুরা আক্রমণ করে। তাদের চিহ্নিত করে ধরতে হবে। আমরা যে মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকি তা যেন জেলেরাই পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
ইলিশের অর্থনৈতিক মূল্যের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মৌসুমে দেশ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ইলিশ রপ্তানি করা সম্ভব। আমরাও ইলিশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারি। তবে আগে আমাদের দেশের মানুষকে ইলিশ খাওয়াতে হবে।
পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, যারা ইলিশ খায় তাদের বুঝতে হবে ইলিশ আর জাটকা এক নয়। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। একদিন পরেই পহেলা বৈশাখে তখন যারা পান্তা-ইলিশ খাবেন তারা মূলত জাটকা খাবেন।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন। গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন প্রফেসর ড. ইয়ামিন চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী।