প্রকল্প থেকে বাদ যাচ্ছে হিজরা খাল সংস্কার
Published: 20th, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড়সংলগ্ন হিজরা খাল। অবৈধ দখলে সরু ও ভরাট হয়ে যাওয়া খালটি লালখানবাজার থেকে পাঁচলাইশ আবাসিক হয়ে মিশেছে চাক্তাই খালে। পাঁচলাইশ আবাসিকের তিন নম্বর সড়কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাড়ি।
জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প থেকে হিজরা খালের সংস্কার কাজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। শুধু হিজরা খাল নয়, নগরের রাস্তার পাশের ৪৮০ কিলোমিটার নালা সংস্কার এবং ১২টি সিলট্র্যাপ নির্মাণও বাতিল হচ্ছে।
সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রকল্প সংকুচিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিডিএ। বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম নগরে ৫৭টি খাল রয়েছে। সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির আওতায় ৩৬টি খাল খনন ও সংস্কার করা হচ্ছে। বাদ পড়েছে ২১টি খাল। হিজরা খাল খনন বাদ দেওয়ার ফলে ড.
বিষয়টি স্বীকার করে সিডিএ চেয়ারম্যান নুরুল করিম বলেন, ‘দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের সক্ষমতা সিডিএর নেই। সরকার বরাদ্দ দিতে রাজি না হওয়ায় হিজরা খাল ও ৪০০ কিলোমিটার ড্রেনের সংস্কার বাদ দিতে হচ্ছে। ফলে প্রধান উপদেষ্টার বাড়ি পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকাসহ নগরের বৃহৎ অংশে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে না।’
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে পাস হয়। ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। মেগা প্রকল্পটি নেওয়ার আগে কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই করেনি সিডিএ। ফলে কাজ শুরুর পর নানা অসংগতি ধরা পড়ে। ২০১৮ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনী। তারা নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পূর্ণাঙ্গ জরিপ ও সমীক্ষা করে। এতে মূল ডিপিপির কাজের নকশা থেকে শুরু করে ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে।
এর মধ্যে ৭১২০ কোটি টাকা সরকার অনুদান ও ৭৫৩ কোটি টাকা ২০ বছর মেয়াদে ঋণ দেবে। বাকি ৭৫৩ কোটি টাকা সিডিএকে নিজস্ব তহবিল থেকে জোগাড় করতে হবে– এমন শর্তে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর সংশোধিত প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়।
সিডিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নিজস্ব তহবিলের ৭৫৩ কোটি ও ৭৫৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করার সামর্থ্য সিডিএর নেই। এ জন্য অর্থ বিভাগের শর্তে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয় জানিয়ে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা অনুদান হিসেবে বরাদ্দের জন্য অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থ বিভাগ তাতে সম্মতি দেয়নি। তাই গৃহায়ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প সংকুচিত করতে বলা হয়।
পাঁচলাইশ আবাসিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সেলিম বলেন, ‘হিজরা খাল ভরাট থাকায় একটু বৃষ্টিতে বুক সমান পানি জমে। প্রধান উপদেষ্টার বাড়িও ডুবে যায়। খালটি খনন বাদ দেওয়া হলে, জলাবদ্ধতা থেকেই যাবে।’
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরের ৪০ শতাংশ জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। এখন হিজরা খাল বাদ দেওয়ায় হার আরও কমবে। নগরের বৃহৎ এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত হবে না। সরকারের উচিত এ টাকা সিডিএকে অনুদান দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।’
দেড় হাজার কোটি টাকার কাজ বাতিল
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প থেকে হিজরা খালের ৬৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার কাজ বাদ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে– ভূমি অধিগ্রহণ, স্থাপনার ক্ষতিপূরণ, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, খালের মাটি খনন ও গভীরতা বাড়ানো, পিসি গার্ডার ব্রিজ তৈরি ও আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ। ২৮৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২টি সিলট্র্যাপ নির্মাণের কাজ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পের শুরুতে ৪২টি সিলট্র্যাপ নির্মাণের কথা ছিল। সংশোধিত ডিপিপিতে ১৫টি বাদ দেওয়া হয়। এখন আরও ১২টি সিলট্র্যাপ বাদ দেওয়া হলে জলাবদ্ধতা সমস্যা থেকেই যাবে। কারণ চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা। বৃষ্টির সময় পাহাড় থেকে বালু ও মাটি নালা-নর্দমা-খালে নেমে ভরাট হয়ে যায়।
এ ছাড়া নতুন সাইড ড্রেন নির্মাণ, বিদ্যমান রোড সাইড ড্রেন পরিষ্কার, মেরামত ও সম্প্রসারণ, খালের পাড়ে হাঁটার ফুটপাত নির্মাণ, কয়েকটি খালের পাড়ের রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং স্ট্রিট লাইট স্থাপনে ৫৮৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকার কাজ বাদ দেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প ন রসন সরক র নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় সামরিক অভিযান বাড়ানোর ঘোষণা ইসরায়েলের
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ অংশে শিগগিরই ‘জোরালোভাবে’ সামরিক অভিযান বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকার দক্ষিণে একটি ‘নিরাপত্তা অঞ্চলের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এটা রাফা ও খান ইউনিস শহরকে পৃথক করেছে।
এরই মধ্যে খান ইউনিস ও আশপাশের এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে আকাশপথে হামলার কড়া জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও হামাস কোনো হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
টানা দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় হামাসের ওপর আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে তারা গাজায় আরও বড় এলাকা দখল করেছে। হাজারো গাজাবাসীকে নতুন করে বাস্তুচ্যুত করেছে।
শনিবার কার্তজ বলেন, রাফা ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী সাবেক ইহুদি বসতি ‘মোরাগ এক্সিস’ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্পন্ন করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এর মধ্য দিয়ে গাজার খান ইউনিস থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাজা উপত্যকার প্রায় এক–পঞ্চমাংশ ভূমিজুড়ে রয়েছে রাফা।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, শিগগির গাজার আরও বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হামলা জোরদার করবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এসব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে মানুষদের সরিয়ে নিতে হবে। হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের মুক্ত করে আনা এবং যুদ্ধের অবসানের এটাই শেষ মুহূর্ত।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিতে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করে গাজায় আনা হয় ২৫১ জনকে। ইসরায়েলের সরকারি তথ্য এটা।
এর জবাবে ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, যা এখনো চলছে। নির্বিচার হামলায় উপত্যকাটিতে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গড় ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর নিহত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ জন।