রাজধানীর খিলক্ষেতে ধর্ষণের শিকার শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। সেখানে তার প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। সেগুলোর প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা, শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তার শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটা ভালো। এ ঘটনায় গণপিটুনিতে আহত ধর্ষণে অভিযুক্ত কিশোর রবিউল ইসলাম ওরফে জান মিয়া (১৬) শঙ্কামুক্ত নয়।
খিলক্ষেত থানার ওসি কামাল হোসেন সমকালকে বলেন, শিশুটির বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। পুলিশি তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন কিশোরকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় এরই মধ্যে দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন মোবারক হোসেন সজীব ও মো.
এর আগে মঙ্গলবার খিলক্ষেতের মধ্যপাড়ায় ছয় বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। বিকেলে ধর্ষণে অভিযুক্ত রবিউলকে আটকে মারধর করে এলাকাবাসী। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখান থেকে তারা অভিযুক্ত কিশোরকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়ার পথে বাধার মুখে পড়ে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে খিলক্ষেত বাজার এলাকায় কিছু লোকজন পুলিশের গাড়ির সামনে ব্যারিকেড দেয়। তারা বলেন, ধর্ষণের কোনো বিচার হয় না, যা করার আমাদেরই করতে হবে। এর পর তারা পুলিশের গাড়ি থেকে রবিউলকে ছিনিয়ে নিয়ে বেধড়ক পেটায়। তখন বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তাদের মারধরে খিলক্ষেত থানার পরিদর্শকসহ (তদন্ত) সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনের আঘাত গুরুতর। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের গাড়িটিও ভাঙচুর করেছে।
ওসিসির সমন্বয়ক ডা. সাবিনা ইয়াসমিন জানান, শিশুটির ফরেনসিক, এক্স-রেসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। সেগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে বলা যাবে। তবে শিশুটি এখন ভালো আছে। ভুক্তভোগী শিশুটির মা একটি এনজিওতে চাকরি করেন, বাবা পেশায় পিকআপ চালক। তারা সারাদিন বাসায় থাকেন না বলে শিশুটি অদূরে তার নানির বাসায় থাকে। তার নানি জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সে নানির বাসায় এসেছিল। পাশের একটি বাসায় মায়ের সঙ্গে থাকে রবিউল। তাদের দোতলার বাসায় কেউ ছিল না। এই সুযোগে সে শিশুটিকে আটকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে তারা বিষয়টি জানতে পারেন। তারা চাইছিলেন, এ ঘটনা যেন কেউ জানতে না পারে। এ কারণে গোপনে শিশুটিকে স্থানীয় দুটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে ধর্ষণের ঘটনা জানার পর চিকিৎসক তাদের ঢামেক হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শেষে বাধ্য হয়ে ঢামেক হাসপাতালে যাওয়ার সময় কোনোভাবে লোকজন ঘটনাটি জানতে পারে। তবে রবিউলের মা মাহফুজা বেগমের দাবি, ছেলে এ ঘটনায় জড়িত নয়। তার বয়স মাত্র ১১ বছর।
সে কিশোরগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তিন মাস আগে সে ঢাকায় মায়ের কাছে এসেছে। এখানে একটি স্যানিটারি সামগ্রীর দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে। মঙ্গলবার দুপুরে সে দোকান থেকে বাসায় ফিরে গোসল সেরে নামাজ পড়ে আবার দোকানে যায়। ওই সময় তার (মাহফুজা) বোনের মেয়ে ও ভুক্তভোগী শিশুটি খেলছিল। খেলার একপর্যায়ে মজা করে শিশুটির পায়জামা খুলে ফেলে অন্য শিশু। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে শিশুটির স্বজনরা চলে আসে। ধর্ষণের অভিযোগ তোলা হয়। তখন রবিউল দোকান থেকে বাসায় এসেছিল। তাকে আটকে মারধর করা হয়।
মাহফুজার দাবি, ভুক্তভোগী শিশুটির দুরন্তপনা নিয়ে তার নানির সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে বাগ্বিতণ্ডা হয় তার। এর জের ধরে রবিউলকে ফাঁসানো হয়েছে।
অভিযুক্ত কিশোরের খালাতো বোন জানান, দুই বছর আগে ময়লা ফেলা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জের ধরে তার বোনকে মারধর করে ভুক্তভোগী মেয়েটির স্বজনরা। এ ঘটনায় নারী নির্যাতন মামলা করা হয়। সেই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে রবিউলকে ফাঁসানো হয়।
পুলিশের ওপর হামলার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক দলের কর্মী দেলোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা লোক জড়ো করে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের নাম না জানলেও চেহারা পরিচিত। ভিডিও দেখে তাদের শনাক্ত করা যাবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আলম ও খলিল নামে স্থানীয় দুই প্রভাবশালী শুরুতে সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি নিষ্পত্তির চেষ্টা চালান। তারা রবিউলকে চড়থাপ্পড় মেরে মারধরের সূত্রপাত করে। পরে অন্যরাও এতে যোগ দেয়। এদিকে পল্লবীতে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার এনামুল হক গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকে এবং একই ঘটনায় গ্রেপ্তার হামিদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভুক্তভোগী নারী কয়েকজনের সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলছেন। তিনি সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং সেখানে অনুসন্ধান করতে গেছেন বলে জানাচ্ছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ল শ র ওপর ঘটন য় ম রধর এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাল যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, বিশ্বের যেকোনো দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা বা অসহিষ্ণুতার নিন্দাও জানায় ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার (১৯ মার্চ) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস।
সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আরো পড়ুন:
সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যু
তুলসীর কথার পর পিটার্স বললেন, যুক্তরাষ্ট্রে মিথ্যা তথ্য পৌঁছেছে
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক: প্রধান উপদেষ্টা
বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে ট্যামি ব্রুস কাছে এক প্রশ্নকারী বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানের এই মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চান।
ওই প্রশ্নকারী বলেন, “মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। যদিও তিনি সরাসরি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দোষারোপ করেননি, তবে তিনি উদ্বেগগুলোকে তীব্রভাবে অস্বীকার করেছেন এবং এগুলোকে অসত্য বলে অভিহিত করেছেন। গতকালই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাফতের পক্ষে একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। চলমান এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র কি ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বিবেচনা করছে?”
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “আমরা যেকোনো দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতি সহিংসতা বা অসহিষ্ণুতার যেকোনো ঘটনার নিন্দা জানাই এবং বাংলাদেশের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানাই। আমরা এটাই দেখছি। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। এবং এটাই অব্যাহত থাকবে।”
ঢাকা/ফিরোজ