বার্ন ইনস্টিটিউটের ছাদ থেকে লাফিয়ে রোগীর মৃত্যু
Published: 20th, March 2025 GMT
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, পলাশ বিশ্বাস নামের ওই রোগী গত ৬ মার্চ শ্বাসনালি দগ্ধ নিয়ে ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। তিনি আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।
শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত ১৭ মার্চ ষষ্ঠ তলায় এইচডিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ভোরে তিনি একাই জরুরি বাহির দরজা দিয়ে বের হয়ে লিফটে ১৬ তলার ছাদে চলে যান। সেখান থেকে লাফিয়ে নিচে পড়েন। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
আবাসিক সার্জন বলেন, ওই ব্যক্তি গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় ওয়াশিং প্লান্টে কাজ করতেন। সেখানে দুর্ঘটনায় তাঁর শ্বাসনালি দগ্ধ হয়। সেদিনই তাঁকে ঢাকায় এনে ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ১১ দিন আইসিইউতে থাকার পর মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। বিভিন্ন সময় এলোমেলো কথাবার্তা বলতেন। বুধবার তাঁর মানসিক চিকিৎসক দেখানোর কথা ছিল।
মৃত পলাশের ছোট ভাই অলোক বিশ্বাস বলেন, তাদের বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুরের শিবপুর গ্রামে। বাবার নাম জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস। বর্তমানে গাজীপুর টঙ্গী এলাকায় থাকতেন। সেখানে একটি ওয়াশিং প্লান্টে কাজ করতেন। গত ৬ মার্চ সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর শ্বাসনালি পুড়ে যায়। এর পর থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে পলাশকে বেডে দেখে বাইরে চলে আসেন তিনি। এর পর ভোরে নার্সরা তাঁকে জানান, তাঁর ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাঁর ভাই চাঁনখারপুল-সংলগ্ন হাসপাতাল ভবনের কম্পাউন্ডের ভেতরে পড়ে আছেন। সেখানে গিয়ে তিনি পলাশের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
শাহবাগ থানার এসআই আসাদুল ইসলাম জানান, ইনস্টিটিউটের ১৬ তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে পলাশ মারা গেছেন। তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শতবর্ষী ঐতিহ্যে চুনারুঘাটের বৈশাখী মেলা, কৃষিপণ্যের বাহারে মুখর পীরের বাজার
শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে চুনারুঘাট উপজেলার পীরের বাজারে শুরু হয়েছে বৃহৎ বৈশাখী মেলা, স্থানীয়ভাবে যা 'বান্নি' নামে পরিচিত। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এই মেলাটি চুনারুঘাটসহ সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলা হিসেবে পরিচিত।
মঙ্গলবার সকাল থেকে মেলা শুরু হয় এবং মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছে কৃষিপণ্যের বিশাল সমাহার। মেলায় পাওয়া যাচ্ছে লাঙল, জোয়াল, দা, কাঁচি, মই, মাছ ধরার সরঞ্জামসহ অসংখ্য কৃষি উপকরণ। মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, হস্তশিল্প ও মনিহারি পণ্যেরও ছিলো চোখধাঁধানো উপস্থিতি।
স্থানীয় দোকানিরা জানান, প্রতিবছর বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন। শুধু হবিগঞ্জ নয়, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী এমনকি উত্তরবঙ্গ থেকেও বিক্রেতারা অংশ নিয়েছেন এ ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে।
চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক মেয়র নাজিম উদ্দিন সামছু বলেন, এই মেলা মূলত কৃষকদের জন্য। এখান থেকে প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য সংগ্রহ করতেন তারা।
তবে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারের ফলে কৃষিকাজে ব্যবহৃত অনেক সরঞ্জামের প্রয়োজন কমে যাওয়ায় মেলার জৌলুস কিছুটা কমেছে বলে মনে করেন অনেকে। সেইসঙ্গে আশপাশে ঘরবাড়ি গড়ে ওঠায় মেলার পরিসরও সীমিত হয়েছে।
স্থানীয় ইউএনও মোহাম্মদ রবিন মিয়া জানান, মেলায় অংশ নিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসছেন। মেলা চলাকালীন নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ বাহিনী, নিশ্চিত করেন চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, শত বছর আগে এই মেলা শুরু হয়েছিল ছোট পরিসরে পূজা আয়োজনের মাধ্যমে। পরে তা বৃহৎ মেলায় রূপ নেয়।
এখনও অনেকেই শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতে এই মেলায় আসেন, স্মৃতিচারণ করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। মেলায় পরিবেশিত হচ্ছে গ্রামবাংলার আবহমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
চুনারুঘাটের এই বৈশাখী মেলা শুধু একটি উৎসব নয়, বরং এটি এ অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনের প্রতিচ্ছবি।