বড় আকারের একটি তরমুজ সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা বেচতে পারেন বলে জানালেন ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার চরকলমী ইউনিয়নের মেঘভাসান চরের চাষি সাইদুল হক। এবার দেড় কানি জমি আবাদে তাঁর খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকার মতো। এক কানিতে বিভিন্ন আকারের বড়জোর আড়াই হাজার তরমুজ হয়। আগাম জাত হওয়ায় সাইদুলের পুষিয়ে গেছে। তবে চাষির কাছ থেকে বাজারে আসতেই একই তরমুজ ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা।
কুমিল্লার ব্যাপারী মো.
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকের হাত থেকে আসার পর পাইকার থেকে ফড়িয়া ঘুরে তরমুজ যাচ্ছে খুচরা বাজারে। তিন জায়গায় হাত বদলের কারণে কৃষকের ১৫০ টাকার তরমুজ ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ দামে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবার উপজেলার চরকলমী, মুজিবনগর, নজরুল নগর, নীলকমল, নুরাবাদ, আবু বকরপুর ও আহম্মদপুরে ১৫ স্কিমের আওতায় ১০ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে গ্লোরি, হাইব্রিড ও ড্রাগন জাতের তরমুজ আবাদ হয়েছে। সার ও কীটনাশকের সহজলভ্যতার পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো।
সরেজমিন চরফ্যাসনে কৃষকদের মধ্যে তরমুজ তোলার উৎসব দেখা যায়। ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের পাইকার, পরিবহন কোম্পানি, ফড়িয়া এমনকি দালালরা ভিড় করছেন। প্রতিদিন কার্গো, ট্রাক ও লঞ্চবোঝাই তরমুজ নিয়ে তারা বিভিন্ন জেলায় ফিরে যাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষক আমির হোসেন জানান, পাঁচ কানি (১০ একর) জমিতে তরমুজ আবাদে তাঁর খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকা। ক্ষেতে প্রায় সাড়ে চার হাজার তরমুজ বিক্রির উপযোগী। কিন্তু পুরো মৌসুম শুরু না হওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরের পাইকাররা আসেননি। এ কারণে বিক্রির সঙ্গে দাম নিয়েও বিপাকে আছেন তিনি।
চরফ্যাসন সদর বাজারের খুরচা বিক্রেতা আইয়ুব আলী জানান, রমজানে বাজারে তরমুজে সয়লাব। কিন্তু হাত বদলে খুরচা বাজারে এসে দাম বেড়ে যাচ্ছে। বড় আকারের তরমুজ ব্যাপারী থেকেই তারা ২৫০ টাকায় কিনছেন। পরিবহন, শ্রম, বাজারের ইজারাসহ পড়ছে ৩০০ টাকা।
সদর বাজারের ক্রেতা মো. হাসান জানান, বাজারে তরমুজে সয়লাব থাকলেও অপরিপক্বই বেশি। চাহিদা বেশি থাকায় চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের তরমুজ কিনতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা গুনতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, কম খরচে বেশি লাভের কারণে উপজেলায় এবার তরমুজের আবাদ বেশি হয়েছে। ফলনও ভালো। প্রত্যাশিত দাম পেলে হাসি ফুটবে কৃষকের মুখে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তরম জ র তরম জ তরম জ ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের জন্য লজ্জায় পড়েছেন ফ্রান্স সফররত মার্কিন পর্যটকেরা
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের তুইলেরিস উদ্যানের পরিচ্ছন্ন নুড়িপাথরের ওপর দিয়ে ঝলমলে রোদে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন বারবারা ও রিক উইলসন দম্পতি। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহর থেকে প্রথমবারের মতো ফ্রান্স ভ্রমণে এসেছেন। মার্কিন পর্যটক হিসেবে ভ্রমণে এলেও তাঁরা ঠিক ছদ্মবেশ ধারণ করেননি। তবে ৭৪ বছর বয়সী রিক সাতসকালেই বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেছিলেন।
বারবারা ও রিক উইলসন প্যারিসের একটি হোটেলে উঠেছেন। হোটেল থেকে বের হওয়ার আগে ছোট্ট একটি কালো টেপ দিয়ে মাথার সাদা–কালো বেসবল ক্যাপে থাকা তারকাখচিত ও ডোরাকাটা মার্কিন পতাকা ঢেকে দিয়েছেন।
বারবারা ও রিক উইলসন প্যারিসের একটি হোটেলে উঠেছেন। হোটেল থেকে বের হওয়ার আগে ছোট্ট একটি কালো টেপ দিয়ে মাথার সাদা-কালো বেসবল ক্যাপে থাকা তারকাখচিত ও ডোরাকাটা মার্কিন পতাকা ঢেকে দিয়েছেন।বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণায় মার্কিন নাগরিক হিসেবে যে লজ্জা ও বিব্রতকর অনুভূতি অনুভব করছেন, তা নিয়ে ভাবছিলেন এই দম্পতি। রিক বলেন, ‘বিষয়টি (শুল্ক) নিয়ে আমাদের খারাপ লাগছে। এটা ভয়ানক। শুধুই আতঙ্কের।’
শুধু রিক নন, ৭০ বছর বয়সী বারবারাও তাঁর পকেটে একটি কানাডীয় ল্যাপেল পিন রেখে দিয়েছেন। আরেকজন পর্যটক তাঁকে এটি উপহার দিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, ফ্রান্স ভ্রমণে কিছু আড়াল করার দরকার হলে এটি কাজে লাগাতে পারবেন।
বিষয়টি (ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপ) নিয়ে আমাদের খারাপ লাগছে। এটা ভয়ানক। শুধুই আতঙ্কের।রিক উইলসন, ফ্রান্স ভ্রমণে যাওয়া মার্কিন পর্যটকবারবারা বলেন, ‘আমাদের দেশ নিয়ে আমি হতাশ। শুল্ক নিয়ে আমরা বিরক্ত।’
কয়েক গজ দূরে বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘরের সামনে মানুষের জটলা দেখা গেল। সেখানে আরেক মার্কিন দম্পতি নিজেদের পরিচয় কিছুটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন; যেমনটা সাধারণত দেখা যায় না। কথা হয় ক্রিস এপসের (৫৬) সঙ্গে। তিনি নিউইয়র্কে অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করেন। এবারের ফ্রান্স সফরে তিনি একটু ভিন্ন পোশাক পরবেন বলে ঠিক করেছিলেন।
ক্রিস এপস বলেন, ‘(আমার সঙ্গে) নিউইয়র্কের কোনো ইয়াঙ্কি হ্যাট নেই। সেটি হোটেলে রেখে এসেছি। (হ্যাট দেখে) মানুষ আমাদের আলাদা মনে করতে পারে।’
খোলাখুলি বলে রাখা ভালো, ফ্রান্সে মার্কিনদের আগের চেয়ে কম অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে, এমন কোনো লক্ষণ নেই। ট্রাম্প তাঁর নতুন শুল্ক ঘোষণা স্থগিত করার আগে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে কিছু পর্যটকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল।
কথা হয় ফিলিপ গ্লোয়াগুয়েন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। ফ্রান্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রাভেল গাইড লে গাইড দু রুতার্দের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। গ্লোয়াগুয়েন প্যারিসে একটি ডেস্কে বসে ছিলেন। তিনি জানান, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর লেখা বইয়ের ফরমাশ ২৫ শতাংশ কমে গেছে। ‘এটা একটা বড় পতন,’ বলেন তিনি।মার্কিনরা তাঁদের সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া থেকে বহু দূরে রয়েছেন। তাঁদের মনোভাবে যে পরিবর্তন ঘটছে, সেটির সপক্ষে বেশির ভাগ প্রমাণই কল্পনাপ্রসূত। তবে ইতিমধ্যে ভ্রমণ, পর্যটন, শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার বিষয়টি বোধগম্য হয়ে উঠেছে।
কথা হয় ফিলিপ গ্লোয়াগুয়েন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। ফ্রান্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রাভেল গাইড লে গাইড দু রুতার্দের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। গ্লোয়াগুয়েন প্যারিসে একটি ডেস্কে বসে ছিলেন। তিনি জানান, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর লেখা বইয়ের ফরমাশ ২৫ শতাংশ কমে গেছে। ‘এটা একটা বড় পতন,’ বলেন তিনি।
ল্যুভর জাদুঘরের সামনে পর্যটকদের ভিড়