বেগুন নিয়ে মাথায় হাত সুন্দরগঞ্জের কৃষকের
Published: 20th, March 2025 GMT
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ বাজার। গতকাল বুধবার সকাল থেকে সেখানে বেগুন নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও যেন কেনার লোক নেই। কয়েকদিন আগেই প্রতি কেজি বেগুন ৮ টাকা বিক্রি করেছেন তারা।
এখন সেটা কমিয়ে ৫ টাকা কেজি দরে ছেড়ে দিচ্ছেন, তবু কেনার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ৫ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা, ক্ষেত থেকে নিয়ে আসার পরিবহন খরচও উঠছে না। সব মিলে এবার বেগুনের বাম্পার ফলন হলেও বিক্রি করতে গিয়ে মাথায় হাত সুন্দরগঞ্জের কৃষকদের।
কথা হচ্ছিল উপজেলার বেলকা চরের বেগুন চাষি হাসেন আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, যে দরে বেগুন বিক্রি করছেন, তাতে পরিবহন এবং ক্ষেত থেকে বেগুন ওঠানোর দিনমজুর খরচ উঠবে না। অথচ শীতকালে দাম ভালো হওয়ায় পাঁচ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন। এতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এ পরিস্থিতি হবে, তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। পাঁচ বিঘা জমির বেগুন নিয়ে তাঁকে অন্তত লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে পনেরোটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৫০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে, যার বেশির ভাগ চাষ হয়েছে তিস্তার চরে। ফলন গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
কাপাসিয়ার বাদামের চরের আরেক চাষি আনছার আলী বলেন, শীতে বেগুনের ভালো দাম পাওয়া গেছে। বর্তমানে দাম অনেক কম। দেড় মাস আগেও ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। অথচ এখন খরচই উঠেছে না। কাঁচাবাজারে বেগুন মজুতও করে রাখা যায় না। ফলে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে।
সুন্দরগঞ্জ বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শামীম মিয়া বলেন, বর্তমানে চরের বেগুনের ব্যাপক আমদানি হয়েছে। মান অনুসারে প্রতি কেজি বেগুন ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষিদের যে খরচ, তাতে ৫ টাকা দরে কেজি বিক্রি করলে লাভ করতে পারবে না। সংরক্ষণাগার না থাকায় এক দিনের বেশি কাঁচামাল মজুত রাখা যায় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির বলেন, শীতকালে সবজির বাজারদর অনেক বেশি হওয়ায় চরের কৃষকরা চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষিতে সম্ভাবনাময় স্থানে পরিনত হয়েছে। ধান, গম, আলু থেকে শুরু করে সব ধরনের ফসল ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে চরে বেগুনের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দরপতন হওয়ায় চাষিদের একটু কষ্ট হচ্ছে। মৌসুমভিত্তিক এসব ফসল সংরক্ষণের জন্য সংরক্ষণাগার থাকলে কৃষকরা আরও ভালো দাম পেতেন। সংরক্ষাণার নির্মাণের জন্য সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন দরগঞ জ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তান জন্মের সময় ভেসে আসছিল নববর্ষের গান
মেহেরপুর শহরে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে হাসি ফুটে উঠল গোলাম মর্তুজা ও নাসরিন আক্তার দম্পতির মুখে। তাদের কোলজুড়ে এলো কন্যাসন্তান। বাংলা নববর্ষে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হলো এই দম্পতির।
মর্তুজা ও নাসরিনের বাড়ি একই গ্রামে, মেহেরপুর সদর উপজেলার চকশ্যামনগরে। সেই কবেকার কথা। পরস্পরের সঙ্গে দেখা, কথা। এরপর ভালো লাগা, ভালোবাসা। সেই ভালোবাসাকে এক যুগ আগে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়েতে রূপ দেন তারা। বিয়ের পর কেটে যায় পাঁচটি বছর। এ সময় তাদের একটি ছেলের জন্ম হয়। এরপর থেকেই তাদের প্রত্যাশা ছিল মেয়ের। অবশেষে এবার নববর্ষের প্রথম প্রহরে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
শিশুটির বাবা মর্তুজা বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ সবসময়ই আমার মধ্যে আলোড়ন তুলত। মনে মনে বাসনা ছিল যদি বৈশাখের প্রথম দিন আমাদের সন্তান জন্ম হয় তাহলে খুব ভালো হতো। তবে সব কিছু তো পরিকল্পনা করে হয় না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রার্থনা কবুল করায় পহেলা বৈশাখে আমাদের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। এতে আমাদের পরিবারের লোকজন সবাই খুব খুশি। আমরা দু’জনই কৃষক পরিবারের সন্তান। দু’জনই স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় সেই অর্থে লেখাপড়া হয়নি। তবে কৃষক পরিবারে পহেলা বৈশাখের যে আমেজ আনুষ্ঠানিকতা তা সবসময় আমার কাছে প্রিয়।’ সন্তান ও মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন তিনি।
শিশুটির মা নাসরিন বলেন, ‘জন্মের পরপরই নার্সরা আমার বোনের কোলে তুলে দেয় আমার নাড়িছেঁড়া মামণিকে। মেয়ের বাবা ও খালা খুশিতে ভরে যায়। তোয়ালে জড়ানো মেয়েকে রাঙাতে দ্রুত বাজার থেকে একটি গোলাপি রংয়ের জামা কিনে এনে গায়ে পরিয়ে দেন মেয়ের বাবা। তখন আমার মেয়েকে দেখে পরীর মতো মনে হচ্ছিল। তখনও আমার শরীর অনেকটাই অবশ। হাসপাতালের বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হলো আমাকে। পাশেই দেওয়া হলো আমার রাজকন্যাকে। শরীরে যন্ত্রণা থাকলেও মেয়েকে দেখে মন প্রশান্তিতে ভরে গেল। যন্ত্রণাও যেন কমে গেল অনেকটাই।’
নাসরিন জানান, সন্তান গর্ভে থাকাকালে তাঁর কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না। নিয়মিত চিকিৎসক দেখাতেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন যত এগিয়ে আসছিল ততই তাঁর স্বামী বলতে লাগলেন, তাদের সন্তান ছেলে বা মেয়ে যা-ই হোক না কেন যদি পহেলা বৈশাখে হয় তাহলে সেটি হবে একটি স্মরণীয় ঘটনা। অবশেষে নববর্ষের দিন সকালেই তাঁর ব্যথা ওঠে। তাদের গ্রাম থেকে হাসপাতাল ছয় কিলোমিটার দূরে। স্থানীয় বাহন নসিমনে করে তাঁকে হাসাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক বলছিলেন মায়ের স্বাস্থ্য ভালো আছে। নরমাল ডেলিভারি হয় কিনা সেই চেষ্টা করা যাক। তবে প্রথম বাচ্চা সিজারিয়ান হওয়ায় ব্যথা ওঠার ছয় ঘণ্টা পর স্বাভাবিক ডেলিভারি না হওয়ায় আবার সিজার করে কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই হাসপাতালের মাইকে আজান দেওয়া হয়েছে। তিনি শুনতে পাচ্ছিলেন। তিনি পরে জেনেছেন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই বারান্দায় অপেক্ষারত সন্তানের বাবা, চাচা, খালারা পরস্পরের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
নাসরিন বলেন, ‘আমি যেখানে সন্তান জন্ম দিয়েছি, সেখান থেকে অল্প দূরেই শহরের শহীদ সামসুজ্জোহা পার্ক। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই ওই পার্কে পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা চলছিল। সেই অনুষ্ঠান থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। মনে মনে ভাবছিলাম এমন স্মরণীয় দিনে আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খুব ভালো হবে। আমার রাজকন্যা পৃথিবীতে এলো। হাসপাতাল থেকে আমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা দিতে এলে মনে হচ্ছিল আমার কাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্নপূরণ হলো। আমাদের দু’জনেরই সিদ্ধান্ত মেয়েকে প্রথমে কোরআনের হাফেজ বানাব। এরপর সে স্কুলে পড়ালেখা করবে। মেয়েকে নিয়ে তেমন বড় কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। তার ভাগ্যে যেটা আছে সেটাই হবে তার পেশা। তবে সে যেন মানুষর মতো মানুষ হয়, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। পহেলা বৈশাখ সন্তান জন্ম হওয়ায় আমি ও আমার স্বামী দু’জনই খুব খুশি।’
মেহেরপুর ম্যাটার্নিটি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও সার্জন রামানা হেলালী জুসি বলেন, ‘মর্তুজা-নাসরিন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান পহেলা বৈশাখ দুপুর আড়াইটার সময় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। এদিন পহেলা বৈশাখ হওয়ায় হাসপাতাল থেকে সন্তানের মাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। শিশুটির মা ম্যাটার্নিটি হাসপাতালে তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতেন। শিশুটির বাবা তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে নিয়মিত ফলোআপ চিকিৎসা করাতেন। তিনি স্ত্রীর প্রতি খুবই যত্নশীল বলে তাঁর মনে হয়েছে। মায়ের স্বাস্থ্য ভালো ছিল। কোনো সমস্যা ছিল না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শিশুটির ওজন ছিল তিন কেজি। তার রক্তের গ্রুপ ও পজিটিভ। মা ও মেয়ে দু’জনই সুস্থ আছে।