ইলিশ শিকার ঠেকাতে গিয়ে জেলেদের হামলার শিকার
Published: 20th, March 2025 GMT
বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নসংলগ্ন কালাবদর নদীতে মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযানকারী দল জেলেদের হামলার শিকার হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
অভয়াশ্রমগুলোতে ১ মার্চ থেকে দুই মাস ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা চলছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ধরা থেকে বিরত রাখতে গিয়ে অভিযানকারী দল হামলার শিকার হলো।
অধিদপ্তরের অভিযানকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ। তিনি এ ঘটনায় বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের ৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৮০ থেকে ৮৫ জনকে আসামি করে কাজীরহাট থানায় মামলা করেছেন।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ইলিশের অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞার কার্যকরিতা পর্যবেক্ষণে প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ গতকাল মেহেন্দীগঞ্জে যান। স্থানীয় নদীগুলোতে নিষেধাজ্ঞা অমান্যের অভিযোগ শুনে তিনি কোস্টগার্ডসহ হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের মৎস্য কর্মকর্তাদের নিয়ে দুটি স্পিডবোটে অভিযানে নামেন। কালাবদর নদীর তীরে বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝে একটি খালের মধ্যে ঢুকলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে অভিযানকারী দল কথা বলছিল। ইলিশ নিধন বন্ধ রাখার সুফল সম্পর্কে জেলেদের অবহিত করছিলেন তারা। এ সময় একদল জেলে খালের দুই তীর থেকে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। জেলে পরিবারের বিপুল সংখ্যক নারীও এ হামলায় অংশ নেন।
হামলারীদের ইটপাটকেলে অভিযানকারী দলে থাকা শ্রমিক নবীন দেওয়ান (২৪) ও রুবেল সরদার (২৬) আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে অভিযানকারী দল দ্রুত স্পিডবোটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। গুরুতর আহত নবীনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রতিবছর ইলিশ আহরণে একাধিক সময়ের নিষেধাজ্ঞায় ওই এলাকায় অভিযানে গেলে হামলা চালানো হয়। এর আগে গত অক্টোবরে হামলার ঘটনার মামলার আসামি ইমরান, ইলিয়াসসহ অন্যরা এবারও হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
কাজীরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গত বছর ইলিশ আহরণ কমেছে ৪২ হাজার টন
দেশে এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে ইলিশ আহরণ বাড়ার পর গত বছর কমেছে। সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ ৪২ হাজার টন কমেছে।
মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ইলিশ আহরণ হয় ৫ লাখ ৭১ হাজার টন। গত অর্থবছরে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ৫ লাখ ২৯ হাজার টন। সে হিসাবে ইলিশ আহরণ ৪২ হাজার টন কম হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। ২০১৬ সালে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার টন। পরের তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টনে। ২০১৭-১৮ সালে ইলিশ আহরণ ৫ লাখ ১৭ হাজার থেকে ক্রমশ বেড়ে ২০২১-২২ সালে এসে ৫ লাখ ৬৬ হাজার টনে উন্নীত হয়েছিল।
ইলিশ আহরণ কমার কারণ সম্পর্কে চাঁদপুরে অবস্থিত মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু কাওসার দিদার বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত বছর জেলেরা অন্য সময়ের মতো নদী ও সাগরে যেতে পারেননি। ইলিশের প্রধান তিনটি মাইগ্রেশন পয়েন্ট মেঘনা-তেঁতুলিয়া, পায়রা-বিষখালী ও সুন্দরবন অঞ্চলে নাব্যতার সংকট প্রকট। ফলে ইলিশের চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ইলিশ আহরণের একটি সীমা আছে, কিন্তু বাংলাদেশ সেই সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। সেই ফলাফলও স্পষ্ট হয়েছে, ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। তিনি বলেন, জুন-জুলাই মাসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাটকা সংরক্ষণে অভিযান চালানো হলেও জেলেরা নানা পদ্ধতিতে নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ শিকার করেন। জনবল কম থাকায় শত শত কিলোমিটার নদী ও মোহনা পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না।
ইলিশের জীবনচক্র বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে। এসব ডিম পোনায় পরিণত হয়। তারপর জাটকায় (২৫ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ) পরিণত হয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নদীতেই বিচরণ করে। এই সময়টায় যদি জাটকা রক্ষা না করা যায়, তাহলে ইলিশ উৎপাদন কমে যাবে। এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। একটি জাটকার বড় ইলিশে (কমপক্ষে ৫০০ গ্রাম) পরিণত হতে এক বছরের বেশি সময় লাগে। এ জন্য জেলেকে কমপক্ষে দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে বড় ইলিশের জন্য। আর বড় ইলিশ পেতে হলে অবশ্যই অবৈধ জাল ধ্বংস করতে হবে, অভয়াশ্রমকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে হবে।
ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, নদ–নদীর গভীরতা হ্রাস, দূষণসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। ইলিশ সংবেদনশীল মাছ। বাসস্থান পরিবর্তন হলে ঘন ঘন গতিপথও পরিবর্তন করে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাবনাবাদ নদ ও বরগুনার পায়রা-বিষখালী-বলেশ্বর মোহনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ইলিশের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রগুলো ঘিরে শিল্পায়ন হয়েছে। এসব বিষয় ইলিশকে পথ পরিবর্তনে বাধ্য করছে, যার প্রভাব পড়েছে ইলিশ উৎপাদনে। এ ছাড়া জাটকা সুরক্ষায় কয়েক বছর ধরে উদাসীনতা ছিল বলে মনে করেন তিনি।
ইলিশ আহরণ ও প্রজননের বিষয়গুলো বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, নদীর স্রোত, গভীরতা, জলস্ফীতি, খাদ্য ও পানির গুণগত মানের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০০১ সাল থেকে দেশে ইলিশ আহরণের পরিমাণ কমতে শুরু করেছিল। ওই বছর ২ লাখ ২০ হাজার ৫৯৩ টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছিল। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তা সোয়া ৩ লাখ টনের ওপরে ওঠেনি।
ইলিশ আহরণ আবার বাড়াতে হলে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাগরমোহনায় ছোট ফাঁসজালের অবাধ ব্যবহার ও বাণিজ্যিক ট্রলারের ব্যবহার কমাতে হবে। ইলিশ রক্ষায় ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে ঢেলে সাজানো ও নিবিড় গবেষণা দরকার।