এখনকার শিশুদের দিকে তাকালে মনে হয়, আমাদের শৈশব অনেক আনন্দেই কেটেছে। শুধু পড়াশোনা করাই তখন শৈশবের মূল বিষয় ছিল না। সেই দুরন্ত শৈশব কেটেছে গোল্লাছুট, ডাংগুলির মতো খেলাধুলা; বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি, নাচগানে আনন্দ করে। সৃজনশীল বিষয়ের প্রতি আমাদের আগ্রহ ছিল সহজাত। আর এ বিষয়গুলোই আমাদের জীবনকে আরও এগিয়ে নিয়েছে বলে আমরা এখন ধারণা করতে পারি। 

অথচ আমাদের শিশুরা কি আমাদের মতো শৈশব কাটাতে পারছে? আমরা আশপাশের শিশুদের দিকে তাকালেই এ প্রশ্নের উত্তর পাব। তাদের সঙ্গে কথা বললে এই প্রশ্নটি আরও ভালোভাবে অনুধাবন করা সম্ভব। আমাদের শিশুরা এখন কেমন যেন ক্লান্ত! বই আর ক্লাসের চাপে যেন পিষ্ট! বয়সের তুলনায় অনেক বড় সিলেবাস, এর সঙ্গে যুক্ত কোচিং বা হাউস টিউটরের চাপ; অভিভাবক, প্রতিবেশী ও সমাজের ভালো ফলের প্রত্যাশা, সবসময় সবার আগে থাকার তাড়না আমাদের শিশুদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা এখনই ভেবে দেখতে হবে।

কেন আমাদের শিশুদের জীবন থেকে সুখ হারিয়ে গেল; তারা কীভাবে তাদের শৈশবকে আনন্দময় করে তুলতে পারে; কীভাবে আমরা তাদের সেই সুখ বা আনন্দের দিকে নিয়ে যেতে পারি– এখন এটিই আমাদের ভাবনার বিষয় হওয়া উচিত। 

প্রতিবছর ২০ মার্চ ঘটা করে আমরা আন্তর্জাতিক সুখ দিবস উদযাপন করি। এবারও ‘কেয়ারিং অ্যান্ড শেয়ারিং’– এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি আমাদের শিশুদের কথা ভেবেছি? পড়াশোনার নাম করে তাদের মধ্য থেকে যেন আনন্দই হারিয়ে গেছে! অনাগত কঠিন দিনের মুখোমুখি হলে তাদের অবস্থা কেমন হবে, তা এখন ধারণাও করা যাচ্ছে না। অন্তত এই দিবসটি সামনে রেখে হলেও আমাদের উচিত এই শিশুদের জীবনকে রঙিন ও আনন্দময় করে তোলার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। আর তা এই শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে থেকেই করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিবেশী সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 

এ কথা এখন সব শিক্ষকই স্বীকার করবেন, শিশুদের যথাযথভাবে বিকশিত করতে হলে পাঠবহির্ভূত কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, নাচ-গান, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, বিতর্ক– এগুলো যে শিক্ষার্থীর যথাযথ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়– এটা এখন সবাই জানেন। আর এই বিষয়কে আমরা গ্লেনফেস্ট, গ্লেনজিউর ও রকফেস্টের মতো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শৈশবকে আরও বেশি উজ্জীবিত করতে হলে, শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক বৈশ্বিক ধারণার সঙ্গে পরিচিত করাতে হলে বা তাদের আগামীর বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে নতুন ভাষা শিক্ষা এবং এআই, রোবটিকস বা প্রোগ্রামিং শেখার কোনো বিকল্প নেই। 

শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা শুধু শারীরিক ফিটনেস বাড়ায় না। এটি তাদের মধ্যে নেতৃত্বের মনোভাব গড়ে তোলে; দলগত কাজের দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় আমাদের শিশুদের আনন্দ কমে গেছে। 

আমরা যদি সত্যিই শিশুর জন্য সুখ ও আনন্দ নিশ্চিত করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।

স্কুল ও পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের জন্য খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা যেন তাদের জন্য কোনো বোঝা নয়, বরং আনন্দের বিষয়ে পরিণত হয়। যেন তাদের শৈশবেও এমন কিছু স্মৃতি তৈরি হয়, যা তাদের আগামী দিনের পথচলায় অমিত উদ্দীপনা হিসেবে শক্তি জোগাবে; তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ, তাদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করাই যেন আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হয়ে ওঠে। 

অম্লান কে সাহা: প্রিন্সিপাল, গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা
amlan.

saha@uttara.glenrich.edu

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র শ শ দ র ই আম দ র র জন য আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে খুন করা হয় শিশুকে

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় এক ব্যক্তির ওপর প্রতিশোধ নিতে তার সাত বছরের ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা ও লাশ গুম করে দুই প্রতিবেশী। খুনের পর শিশুটির সন্ধান চেয়ে দুই ঘাতক মাইকিংয়েও অংশ নেয়।

প্রায় আড়াই মাস আগের এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিরা হলো ফতুল্লার লামাপাড়া দরগাবাড়ি মসজিদ-সংলগ্ন সালাম মিয়ার ভাড়াটে ওবায়েদউল্লাহ বাবুর ছেলে তানজিল (২৪) ও একই বাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত ফরজুল ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলম (২০)।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গ্রেপ্তার আসামিরা ও নিহত শিশু মুস্তাকিনের পরিবার পাশাপাশি বাসায় বসবাস করত। একটি মোবাইল ফোন নিয়ে তানজিল ও শাহ আলমের সঙ্গে মুস্তাকিনের বাবা হাশিম মিয়ার ঝগড়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তানজিল তাঁর সহযোগী শাহ আলমকে নিয়ে মুস্তাকিনকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে তারা ফতুল্লার ডিআইটি মাঠ থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনে। এর পর ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে প্রথমে চিপস কিনতে শিশুটির হাতে ২০ টাকা দেয় তানজিল। পরে শিশুটির সঙ্গে হেঁটে মূল রাস্তায় মেইন রোডে এসে দুটি চিপস কিনে হাতে দেয়। এর পর অটোরিকশায় করে ফতুল্লা গুদারাঘাট দিয়ে কেরানীগঞ্জের কাওটাইল এলাকায় যায়। সেখানে বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদের পেছনে ঝোপের ভেতরে নিয়ে গিয়ে শিশুটির মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেন শাহ আলম। এ সময় তানজিল তাঁর সঙ্গে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে শিশুটিকে একাধিকবার আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তারা ঘটনাস্থলে শিশুটির লাশ ফেলে রেখে লামাপাড়ার বাসায় চলে যায়।

শিশুটিকে না পেয়ে তার পরিবার সন্ধান চেয়ে মাইকিং করেছিল। ঘাতকরাও সে সময় মাইকিংয়ে অংশ নেয়। দু-তিন দিন পর তারা তাদের নিজ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ চলে যায়। ঘটনার ১৩ দিন পর ১৮ জানুয়ারি দুপুরে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। কোনো পরিচয় না পাওয়ায় লাশটি অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়। পরে ২০ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করে। এর আগে ৬ জানুয়ারি শিশুটির বাবা ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। শিশুটির সন্ধান না পেয়ে তার বাবা গত শুক্রবার ফতুল্লা মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের ৭২ দিন পর গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ময়মনসিংহ নান্দাইল থেকে প্রথমে শাহ আলমকে, পরে দুপুর ১২টার দিকে একই জেলার ফুলবাড়িয়া থানার কাচিজোড়া থেকে তানজিলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ রাত ৮টার দিকে ফতুল্লা থানার লামাপাড়ায় তানজিলের বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার চাকুটি উদ্ধার করে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ‘ক’ সার্কেল হাসিনুজ্জামান জানান, শিশুটির বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতেই শিশুটিকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার তানজিল ও শাহ আলম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কেরানীগঞ্জ থানা থেকে যোগাযোগ করা হলে শিশুটির পরিবার থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে রক্ষিত শিশুর জামাকাপড় দেখে পরিচয় শনাক্ত করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ