আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কথার ফুলঝুরি থাকবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, নতুন বাজেটের মূল উদ্দেশ্য সমতাভিত্তিক ও কল্যাণধর্মী। সার্বিকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অনেক বড় প্রকল্প নেওয়া হবে না। এমনভাবে বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন করা হবে, যাতে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার অগ্রাহ্য করাতে না পারে। 

গতকাল বুধবার অর্থ বিভাগের মাল্টিপারপাস হলরুমে আগামী বাজেট বিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে বিলিয়ন ডলারের মনুমেন্টাল প্রকল্প নিয়ে সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে প্রকৃতপক্ষে উপকারে আসে না। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মসৃজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। 

তিনি বলেন, বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হবে সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী দেশের দিকে যাওয়া। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংক্ষিপ্ত সময়ে পুরোপুরি এ কাজ করা যাবে না। এ সময়ের মধ্যেই অর্থনীতিতে কিছু সংস্কার আনা হবে। বাজেটে সেগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা থাকবে। বাজেটে এর ভিত্তি স্থাপন করা হবে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কোনো উদ্যোগ নেওয়া তাদের ম্যান্ডেট নয়। এগুলো নির্বাচনী রাজনৈতিক সরকার করবে। বাজেটে কিছু দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বর্তমান সরকার একটা পদচিহ্ন রেখে যেতে চায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি খাতে বাড়তি নজর থাকবে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে উদ্যোগ থাকবে। 

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছুটা গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে বাস্তবভিত্তিক বাজেট দেওয়া হবে। তবে সীমিত সম্পদ হওয়ায় একেবারে ফ্রেমওয়ার্কের বাইরেও যাওয়া যাবে না। বাজেট হবে বাস্তবায়নযোগ্য। এমনভাবে বাজেট প্রণয়ন করা হবে, যা পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার ফেলে দিতে পারবে না। কারণ মানুষ আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন ও সোচ্চার। 

তিনি বলেন, সরকারের রাজস্ব বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সংস্কার আনা হবে। ক্যাশলেস সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এমন পদ্ধতি করতে হবে, যেন করদাতাকে কর কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন না পড়ে। উন্নত কোনো দেশে করদাতারা কর অফিসেযান না। তিনি জানান, গৃহস্থালিতে নারীদের কর্মের অবদান জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, যতই তৈরি পোশাক বা রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্যের কথা বলা হোক না কেন, বাংলাদেশ যদি আইটির দিকে না যায়, তাহলে এগোতে পারবে না। এ বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হবে।

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে উত্তরণ কৌশল নেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভালো। এতে আমাদের গৌরবটা একটু বাড়বে। হয়তো কিছু প্রস্তুতি লাগবে। তবে উত্তরণ করব না বলে বসে থাকব না।’

অর্থ সচিব ড.

মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংকোচন মুদ্রানীতি এবং সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়ায় মূল্যস্ফীতি কিছু কমেছে। সরকার আশা করছে, আগামী জুন শেষে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে। 

আলোচনায় যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ করার প্রস্তাব দেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রণীত বাজেট-পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার কতটুকু বাস্তবায়ন করবে, তার ওপর গুরুত্ব দেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ। ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন।

প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন এক বছরে কী পরিমাণ কর্মসংস্থান হয়, বাজেটে তা উল্লেখ করার প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে নতুন কর্মংস্থান সৃষ্টিতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরার পরামর্শ দেন। তিনি প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে বাজেট বক্তব্য ছোট করার পরামর্শ দেন। এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানেই অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী বাজেট বক্তব্য খুব বড় হবে না। বাজেট বক্তব্য কমিয়ে ৫০ থেকে ৬০ পৃষ্ঠায় নামিয়ে আনা হবে। 

সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে মাসিক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়। একজন ব্যক্তির ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে এ ভাতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে তিনি নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট এবং সংবাদপত্র শিল্পের অন্যান্য কর কমানোর সুপারিশ করেন। অনুষ্ঠানে টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও অন্যান্য প্রস্তাবের পাশাপাশি নিজেদের খাতে বেশ কিছু নীতিসহায়তার প্রস্তাব করেন। এসব প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

মতবিনিময় সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল, ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশন মিজানুর রহমান, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, জাগোনিউজ২৪.কমের সম্পাদক জিয়াউল হকসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র কর র প

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরায় সেই শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ

মাগুরায় ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আদালতে বাদীসহ তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। রোববার আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সোমবার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। এর আগে রোববার সকালে কড়া নিরাপত্তায় আসামি হিটু শেখ, তার দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখ এবং স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে আনা হয়।

আদালতের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, সাক্ষীদের মধ্যে মামলার বাদী ও নিহত আছিয়ার মা আয়েশা আক্তার, প্রতিবেশী জলি খাতুন ও অসুস্থ আছিয়াকে বহনকারী ভ্যানচালক রুবেলের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা লিগ্যাল এইড আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট সোহেল আহম্মেদকে মামলা পরিচালনা জন্য নিয়োগ দিয়েছে। তিনি আদালতে উপস্থিত থেকে সাক্ষ্যগ্রহণে অংশ নেন। তবে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর জানান, ইতোপূর্বে তারা সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য আসামিপক্ষে আইনি সহায়তা দেবেন না।

প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে এলে বোনের শ্বশুর হিটু শেখ শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যাচেষ্টা চালায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার মা আয়েশা আক্তার হিটু শেখ, তার দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখ এবং স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেটে ১৭ পাথর কোয়ারির ইজারা প্রদান স্থগিত করল সরকার
  • মাগুরায় সেই শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ
  • ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার সুবিধাভোগী’ আখ্যা দিয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও এক সদস্যের অপসারণ চাইল ছাত্রদল
  • তাপমাত্রা কমতে পারে সোমবার
  • বাস্তবসম্মত সংস্কারে সহযোগিতা করবে জামায়াত: আব্দুল্লাহ তাহের
  • রাজধানীতে তীব্র গরম, ১১ জেলায় অব্যাহত থাকবে তাপপ্রবাহ
  • বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন চাকরির সুযোগ
  • সংস্কারহীন নির্বাচন হলে গণ-অভ্যুত্থানের কর্মীরা কী করবেন
  • হৃদয়ের শাস্তি কার্যকর হবে এক বছর পর 
  • হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা বহালেও ফিরছেন না আম্পায়ার সৈকত