ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে উধাও হয়েছে একটি কথিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। কয়েকজন গ্রাহক ঋণের টাকা তুলতে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ভাড়ায় নেওয়া অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ বিষয়ে সোমবার গোয়ালন্দ ঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দেন সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।

সাইফুল ইসলাম উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের জামতলা হাটে রিকশার যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যবসা করেন। তাঁর ভাষ্য, ঊষার আলো ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও কর্মকর্তারা ১৩ মার্চ তাঁর দোকানে যান। তারা নানা বিষয়ে আলোচনার পর ১০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ জন্য সাইফুলকে সঞ্চয় বাবদ ৮০ হাজার টাকা ও বীমা বাবদ পাঁচ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়। তিনি ১৬ মার্চ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে জমা দেন। কথা ছিল, পরদিন তিনি ১০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। নির্ধারিত দিনে সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, অফিস তালাবদ্ধ। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ পাননি। পরে থানায় অভিযোগ দেন সাইফুল। জানা গেছে, অন্তত ২০-২৫ জন ব্যক্তি ওই সংস্থার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন রাজবাড়ী সদরের ব্যবসায়ী মো.

কামরুল ইসলাম। খানখানাপুর বাজারে তাঁর প্রসাধনসামগ্রীর ব্যবসা রয়েছে। কামরুল ইসলাম বলেন, ১৩ মাচ ঊষার আলো ফাউন্ডেশনের কয়েকজন তাঁর দোকানে যান। তাঁকে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনিও আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই কর্মকর্তারা ১৫ মার্চ তাঁর বাড়িতে যান। সেখানেই ৮ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলাপ হয়।

১৭ মার্চ ঋণ দেওয়া হবে জানিয়ে ৮০ হাজার টাকা সঞ্চয় জমা দিতে বলা হয় কামরুলকে। তিনি নিজ মোটরসাইকেল বন্ধক রেখে মাসিক ৫ হাজার টাকা সুদের বিনিময়ে ৮০ হাজার টাকা ঋণ করেন। সেই টাকা ১৬ মার্চ সংস্থাটির কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন। ১৭ মার্চ ঋণ নিতে এসে কার্যালয়ে এসে অন্যদের কাছ থেকে জানতে পারেন, ওই ব্যক্তিরা পালিয়েছেন।

গত ৬ মার্চ ঊষার আলো ফাউন্ডেশনের নামে পৌর এলাকার নীলু শেখের পাড়ার একটি দোতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ওই ভবনের মালিক প্রান্তি সুলতানা বলেন, মাসে ৭ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়ার শর্তে ওই কক্ষটি তিন বছরের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়। তারা এ বিষয়ে পরে চুক্তিপত্র করবে বলে জানিয়েছিলেন।

সরেজমিন বুধবার ওই কক্ষটিতে দুটি টেবিল ও তিন-চারটা চেয়ার ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি। বক্তব্য জানতে ঊষার আলো ফাউন্ডেশনের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পরিচয়দানকারী মো. রুবেল হাসানের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও সংযোগ মেলেনি। সংশ্লিষ্ট সবার ফোন নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।

গোয়ালন্দঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত রোববারই ঊষার আলো ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘তাদের কাগজপত্র জমা দিতে বলি, তারা এ জন্য দুই দিনের সময় চেয়েছিল। আজ আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম তারা পালিয়ে গেছে।’ সংস্থাটির নাম তাদের নিবন্ধন তালিকায় নেই বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ল ইসল ম ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

শূন্য থেকে পৃথিবীর স্বস্তিতে সুনিতারা

মহাকাশে গিয়েছিলেন আট দিনের মিশনে। কিন্তু থাকতে হয়ে ৯ মাস। জানতেন না, কখন ফিরবেন। নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন নাসার দুই মহাকাশচারী বুচ উইলমোর, সুনিতা উইলিয়ামসসহ চারজন। গতকাল বুধবার ভোর ৩টা ৫৭ মিনিটে তাদের বহনকারী ক্যাপসুলটি বিশেষ প্যারাসুটের সাহায্যে ফ্লোরিডা উপকূল থেকে ৫০ মাইল দূরে সমুদ্রে নেমে আসে। 

পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের দৃশ্যটি বিভিন্ন টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, স্পেসএক্সের তৈরি ক্যাপসুলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অতি দ্রুতগতিতে প্রবেশ করছে। ক্রমেই এটি এগিয়ে আসছে। এক পর্যায়ে দুটি প্যারাসুট খুলে দিলে গতি কমতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর আরও দুটি প্যারাসুট খুলে যায় এবং গতি অনেকটাই কমে যায়। এর পরই পানিতে পড়ে ভাসতে থাকে এটি। তখন ক্যাপসুলটি ঘিরে ধরে একঝাঁক ডলফিন। পরে নৌকা ও জাহাজ থেকে উদ্ধারকারী দল এটি পানি থেকে তুলে আনে। 

পৃথিবীতে তাদের ফেরানোর নাসার এ অভিযানের নাম ছিল ‘ক্রু-৯’। যে মহাকাশযানে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে সেটি তৈরি করেছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। আইএসএসের অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০৯ কিলোমিটার ওপরে। প্রায় ২৫ বছর ধরে মহাকাশচারীরা সেখানে যাতায়াত করছেন। রয়েছে ফুটবল মাঠের সমান আকৃতির গবেষণাগার, যা পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।

দুই মার্কিনি সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর ছাড়াও আরও দু’জন ক্রু ছিলেন। তারা হলেন– নিক হেগ ও রুশ নাগরিক আলেকজান্ডার গরবানভ। ক্যাপসুলের হ্যাচ খুলে বেরিয়ে আসার সময় নভোচারীদের খোশ মেজাজে দেখা গেছে। সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর দর্শনার্থীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক স্টিভ স্টিচ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্রুয়ের সদস্যরা দারুণ কাজ করছেন।

বিবিসি জানায়, আট দিনের জন্য গেলেও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএসে গিয়ে আটকে যান সুনিতারা। তাদের মহাকাশযানটিতে একাধিক প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। নাসার স্পেস অপারেশনস মিশন ডিরেক্টরেটের ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো বলেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে পেরে দারুণ লাগছে। ল্যান্ডিংটি অসাধারণ ছিল।

মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে ফেরার যাত্রায় সময় লেগেছে ১৭ ঘণ্টা। তাদের স্ট্রেচারে করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়। মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে দীর্ঘ সময় কাটানোর পর এটাই নিয়ম। ব্রিটেনের প্রথম নভোচারী হেলেন সারম্যান জানান, সবচেয়ে বড় বিষয় হবে, অভিযান থেকে ফেরার পর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যখন তারা দেখা করবেন।

বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামসের সফরের গল্পটি শুরু হয় ২০২৪ সালের জুনে। বোয়িংয়ের তৈরি স্টারলাইনার স্পেসক্রাফ্টের প্রথম মনুষ্যবাহী টেস্ট ফ্লাইট বা পরীক্ষামূলক উড়ানে অংশ নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তারা যে ক্যাপসুলে মহাকাশ যাত্রা করেন, সেটি একাধিক প্রযুক্তিগত সমস্যার মুখোমুখি হয়। এ অবস্থায় তাদের ফেরানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। স্টারলাইনার গত সেপ্টেম্বরে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে।

আইএসএসের পরিবেশ মাধ্যাকর্ষণহীন। তবে সেখানে বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীর খাবার মজুত রয়েছে। আটকে যাওয়া সুনিতা ও বুচ আইএসএসে ল্যাবরেটরিতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করেন। তারা স্পেসওয়াকও করেছেন। নিউইয়র্ক পোস্ট জানায়, আইএসএসে আটকে থাকা নাসার নভোচারী বুচ ও সুনিতা পিৎজা, রোস্ট মুরগির মাংস ও চিংড়ির ককটেল খেয়েছেন। সেখানে তারা নাশতায় গুঁড়া দুধ, পিৎজা, টুনা ফিশ খাওয়ার সুযোগ পেতেন। 

মহাকাশে দীর্ঘমেয়াদি অভিযান মানুষের শরীরের ওপর বিভিন্ন রকমের প্রভাব ফেলে। এ পরিস্থিতিতে নভোচারীদের হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। তাদের শরীরের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেহে রক্ত সঞ্চালনও প্রভাবিত হয়। দৃষ্টিশক্তিও কমে যেতে পারে। এ জন্য পৃথিবীতে ফেরার পর তাদের চিকিৎসা সহায়তা আবশ্যক হয়ে পড়ে। পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কিছুদিন সময় লাগে। যুক্তরাজ্যের নভোচারী টিম পিক জানান, (মহাকাশে) আপনার শরীর দারুণ অনুভব করে। অনেকটা ছুটি কাটানোর মতো। (সেখানে) আপনার হার্ট একটি সহজ সময় কাটায়। পেশি এবং হাড়ও সহজ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়। আপনি এ বিস্ময়কর শূন্য মাধ্যাকর্ষণ পরিবেশে স্পেস স্টেশনের চারপাশে ভেসে বেড়াতে থাকেন।

মহাকাশে থাকাকালে বুচ ও সুনিতা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় কাটানোর জন্য তারা ভালোভাবেই প্রস্তুত। তবে এমন অনেক কিছুই ছিল, যা করার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। সেসব কিছুর কথা ভেবেই ঘরে ফেরার দিকে তাকিয়ে ছিলেন তারা। গত মাসে সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুনিতা বলেন, ‘আমার পরিবার, পোষা কুকুরদের সঙ্গে দেখা করার জন্য এবং সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার অপেক্ষায় আছি। পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারলে, পৃথিবীকে অনুভব করতে পারলে– সত্যিই দারুণ লাগবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ