ফিলিস্তিনে মুসলিমদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যা সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে বাহাদুরশাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ’৭১–এর গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে এসে সমবেত হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’; ‘দুনিয়ার মজলুম এক হও লড়াই করো’; ‘ওহুদের হাতিয়ার, গর্জে উঠো আরেকবার’; ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়, ফিলিস্তিন স্বাধীন করো’সহ ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় তাঁদের হাতে হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে ’৭১–এর গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘পশ্চিমা মানবতাবাদীরা সব জায়গায় মানবতার ফাঁকা বুলি আওড়ান। অথচ ফিলিস্তিনের বেলায় তাদের মানবতা কাজ করে না। তারা ইসরায়েলকে সর্ব প্রকার সহযোগিতা করে, তাদের এ দ্বিচারিতা বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলকে তারা অন্ধের মতো ভক্তি করে। তাদের প্রতি আমাদের তীব্র ঘৃণা। বিশ্বের সব দেশকে আহ্বান জানাই যেন তারা তাদের নীরবতা ভেঙে মজলুম ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ায়।’

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বারবার তারা আমাদের ভাইদের ওপর কিছুদিন পর পর হামলা করে, ছোট্ট শিশুদের রক্ত ঝরায়, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের সব মুসলমানদের একত্র হয়ে, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিকসহ সব দিক দিয়ে উন্নতি সাধন করে, সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে হবে।’

আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘ফিলিস্তিনের ওপর যখন হামলা হয়, ফিলিস্তিনের ওপর যখন আঘাত আসে, তখন সে আঘাত এসে লাগে আমাদের বুকে। ফিলিস্তিনের মুক্তি অর্জন করতে হলে আমাদের প্রত্যেককে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.

)-এর মতো গর্জে উঠতে হবে।’

বিক্ষোভ মিছিলে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে নেতারা একসঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলে প্রতিরোধ তৈরি করার আহ্বান জানান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল আম দ র র স মন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

নিন্দার বিবৃতিতে গাজায় গণহত্যা বন্ধ হবে না

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্তভাবে বাতিল করে গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক গণহত্যা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার ছিল। রাতারাতি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একের পর এক হামলা শুরু করে। যার ফলে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫৬২ জন আহত হয়েছেন।

উদাহরণ দেওয়া যাক। জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টার্ক ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েলি আক্রমণ ‘ট্র্যাজেডির ওপর ট্র্যাজেডি যোগ করবে’। আর ‘ইসরায়েল সামরিক শক্তি প্রয়োগ বাড়ালে ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ওপর দুর্দশা চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে।’ 

নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোর একমত– ইসরায়েলি আক্রমণ গাজার জনগণের জন্য ‘একটি বড় ট্র্যাজেডি’। তাদের অনেকেই ‘তাঁবুতে ও ধ্বংসাবশেষে দিনযাপন করে।’ তাঁর পক্ষ থেকে ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প এক্স-এ মতামত দিয়েছেন, ‘মানবিক সাহায্য অবশ্যই অভাবীদের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং সব শত্রুতার স্থায়ী নিরসন করতে হবে।’ সুইজারল্যান্ড ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে ফিরে আসা’র আহ্বান জানিয়েছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করার কোনো প্রয়োজন মনে করেনি। দেশটির পক্ষ থেকে একটি অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যারা শুরু থেকেই গণহত্যাকে সহায়তা ও উস্কানি দিয়ে আসছে। প্রথমে জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে এবং এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই কাজটি করে যাচ্ছেন। 

ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট নিশ্চিত করেছেন, সর্বশেষ হামলা নিয়ে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরামর্শ করেছে। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প ‘স্পষ্ট করে দিয়েছেন’– হামাস ও ‘যারা কেবল ইসরায়েলকেই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকেও ভয়ংকর করে তুলতে চায়, তাদের সবাইকে এর মূল্য দিতে হবে।’ হামাসের প্রতি ট্রাম্পের পূর্ববর্তী হুমকির ব্যাখ্যা করে লিভিট সতর্ক করে বলেছেন, ‘সমগ্র নরক ভেঙে পড়বে।’

তবুও যে কোনো বস্তুনিষ্ঠ মানদণ্ড অনুসারে, গাজা উপত্যকায় ইতোমধ্যে নরক ভেঙে পড়েছে। দৃঢ় মার্কিন সহায়তায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যখন ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে একটি দুর্বল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। সরকারি সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে গাজায় মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজারে পৌঁছেছে। এ ছাড়া সব জায়গায় ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার নিখোঁজ ফিলিস্তিনিকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গাজা দৃশ্যত ইসরায়েলি বোমা বর্ষণ থেকে কিছুটা মুক্তি পেলেও, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও চুক্তি লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে। সর্বোপরি যুদ্ধবিরতি কখনও ইসরায়েলের কৌশল ছিল না।

মার্চের গোড়ায় যখন ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় সব মানবিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়, যা জোরপূর্বক অনাহার ও একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধের সমান একটি কৌশল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য বন্ধ করার জন্য মূল হোতাদের চিহ্নিত না করে হামাসকে দায়ী করে, যা আমাদের প্রত্যাশা ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নও হামাসের নিন্দা করে ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের সম্প্রসারণ মেনে নিতে অস্বীকৃতি’র অভিযোগ তোলে। 

যেহেতু ইসরায়েল সরাসরি চুক্তির শর্তাবলি পরিবর্তন করেছে, বাস্তবে এটি হামাসের ‘অস্বীকৃতি’ ছিল না। বরং ইসরায়েল একতরফাভাবে গোলপোস্টগুলো সরিয়েছে, যেমনটি তারা বারবার করেছে। পরবর্তী সময়ে ইইউ উল্লেখ করেছে, ইসরায়েলের ‘গাজায় সব মানবিক সাহায্য প্রবেশ বন্ধ করার সিদ্ধান্তের ফলে আশঙ্কাজনক মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।’ এত কিছুর পরও সব দোষ হামাসের। যখন ইসরায়েলের নতুন করে বর্বরতার নিন্দা শোনা যাচ্ছে, তখন এটা বোঝা কঠিন নয়– কেন ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আপত্তিগুলো কম গুরুত্ব দেবে। দিন শেষে গাজায় ‘ট্র্যাজেডি’ বন্ধ করার জন্য এই আনুষ্ঠানিকতা ও আবেদন ইসরায়েলের স্বেচ্ছাচারিতা ও গণহত্যা বন্ধ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না।

ইসরায়েলি সন্ত্রাসে আজকের হতাহতের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। ইসরায়েল গাজা উপত্যকার বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন করে জোরপূর্বক ভিটে ছাড়ার আদেশ জারি করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রক্তদানের জন্য জরুরি আবেদন জারি করেছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি বহাল রাখা নির্বিঘ্নে উপেক্ষা করা গেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আরও একটি সুবিধা রয়েছে। তিনি বর্তমানে জালিয়াতি, ঘুষ ও বিশ্বাস ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত কমপক্ষে তিনটি দুর্নীতির মামলার মুখোমুখি। আজ টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর নির্ধারিত সাক্ষ্য গ্রহণ ‘গাজায় আকস্মিক হামলা চলমান থাকায় বাতিল’ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর মতে, গাজায় নতুন করে অভিযান পরিচালনা নিয়ে সরকারকে ‘জরুরি নিরাপত্তা পরামর্শ’ পরিচালনা করতে সক্ষম করে তোলার জন্য আইন কর্মকর্তারা এই বাতিলকরণকে অনুমোদন করেছেন। গাজা উপত্যকায় আবারও বর্বর ট্র্যাজেডি শুরু হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে এটি বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানানো নিজেই এক বর্বর ট্র্যাজেডি।

বেলেন ফার্নান্দেজ: আলজাজিরার কলামিস্ট; আলজাজিরা থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি ৬ বছরেও
  • নিন্দার বিবৃতিতে গাজায় গণহত্যা বন্ধ হবে না
  • গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জামায়াতের বিক্ষোভ
  • ইসরায়েলি গণহত্যা ও ভারতী হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে শেকৃবিতে বিক্ষোভ
  • ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ রাবি শিক্ষার্থীদের
  • চট্টগ্রামে শিশু অপহরণ মামলার দম্পতির যাবজ্জীবন 
  • পুলিশের ডিআইজি মোল্লা নজরুল ও এসপি মান্নান সাময়িক বরখাস্ত
  • ডিআইজি মোল্যা নজরুল ও এসপি আব্দুল মান্নান সাময়িক বরখাস্ত
  • পুলিশের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত