ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নে বাড়ির রাস্তা তৈরির নামে খাল দখলের মচ্ছব চলছে। এতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে প্যারা খাল নামে পরিচিত ওই ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি।
জানা গেছে, ১৯৭০ এর দশকে ওই ইউপির নির্বাচিত চেয়ারম্যান কাজী আজাহার আলী (প্যারা মিয়া) পুরো ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনের জন্য এই খালটি তৈরি করেন। সেই থেকে তাঁর নামানুসারে এটি প্যারা খাল হিসেবে পরিচিত হয়। খালটি ইব্রাহিমপুর যোগীদারা ব্রিজ বাঁশবাজার থেকে পালবাড়ী বাজার ও কালীপুরা গ্রামের ভেতর দিয়ে রসুল্লাবাদ ইউনিয়নের যমুনার খালে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে। বর্ষাকালে প্যারা খাল দিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন নৌযানে মালপত্র বহন ও উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া করেন। এ ছাড়া স্থানীয় কৃষকরা সেচকাজে খালের পানি ব্যবহার করেন। গত কয়েক বছর ধরে ইব্রাহিমপুর পালবাজার থেকে কালীপুরা গ্রামের অংশে অনেকে স্থায়ীভাবে খালের ওপর দিয়ে বসতবাড়ির রাস্তা নির্মাণ করছেন। খালের ভেতর এভাবে রাস্তা নির্মাণ করায় বর্ষাকালে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিঘ্ন সৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত সোমবার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের পালবাড়ী ও কালীপুরা গ্রামে দেখা যায়, স্থানীয় বাচ্চু মিয়ার ছেলে নূরুল ইসলাম, তারা মিয়ার ছেলে শাহ আলম, মো.
সরকারি খালের ভেতর রাস্তা বানানোর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুছা ও উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বিষয়টি জানেন।
ইব্রাহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুছা বলেন, প্যারা খাল দখল করে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি অবগত আছেন। এটি বেআইনি, এভাবে খাল ভরাট করা যায় না। এ বিষয়ে তিনি তাদের অনেকবার নিষেধ করেছেন। কারণ কিন্তু তারা শোনেননি।
ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা কাজী হেলাল ও কৃষক ইউনুছ মিয়া বলেন, এভাবে খাল ভরাট হতে থাকলে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টির পাশাপাশি গ্রামে বড় ধরনের জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে।
ইউএনও রাজীব চৌধুরী বলেন, নদী, খাল, বিল ভরাট করার কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ব যবস থ র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
গুলিবিদ্ধ ঈগল পাখিটিকে বাঁচাল দুই কিশোর
পড়ন্ত বিকেলে বদলগাছীর শালুককুড়ি মাঠে ধানক্ষেত দেখতে যায় সাব্বির হোসেন ও গোলাম রব্বানী নামে দুই কিশোর। ক্ষেতের মধ্যে বড় একটি ঈগল পাখিকে পড়ে থাকতে দেখে তারা। মানুষ দেখে আতঙ্কিত হয়ে চোখ রাঙাতে থাকে পাখিটি। প্রথমে ভয় পেলেও সাহস করে কাছে যায় তারা। ব্যথা আর যন্ত্রণায় পাখিটি কাতরাচ্ছি। ধান ক্ষেত থেকে তুলে জমির আইলে আনলে দেখা যায় দুই ডানা রক্তাক্ত। গভীর ক্ষত দেখে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ছোটেন তারা। চার কিলোমিটার পথ দূরে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে যায় অসুস্থ ঈগলটিকে। সেখানে ঈগলটির চিকিৎসা দেন প্রাণিসম্পদ কর্মকতা।
ঈগলটির দুই ডানায় গুলি করা হয়েছিল বলে জানান উপজেলা উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান। একটি পাখির প্রতি ওই দুই কিশোরের এমন ভালোবাসা দেখে স্থানীয় লোকজনের প্রশংসায় ভাসছেন ওই দুই কিশোর। তারা হলো, মো. সাব্বির হোসেন ও গোলাম রব্বানী। তাদের বাড়ি পাশের বদলগাছি উপজেলার খাদাইল বাহ্মণপুকুর গ্রামে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যার পর ওই দুই কিশোর গুলিবিদ্ধ অসুস্থ ঈগল পাখিটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে যায়। পাখিটিকে দেখতে উৎসুক লোকজন ভিড় করছিলেন। চিকৎসার পর অসুস্থ ঈগলের দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন পৌর শহরের পুরাতন বাজার এলাকার মোশারফ হোসেন। এরপর ঈগল পাখিটিকে তাঁর জিম্মায় দেওয়া হয়।
সাব্বির হোসেন ও গোলাম রব্বানী জানান, শালুককুড়ি মাঠে নিজেদের ধানক্ষেত দেখতে গিয়েছিলাম। জমির আইল দিয়ে যেতেই বড় একটি ঈগল পাখিকে ধান খেতে পড়ে থাকতে দেখি। পাখিটি আমাদের দেখে চোখ রাঙাচ্ছিল। প্রথমে ভয় পেলেও আমরা সাহস করে ঈগল পাখিটির কাছে যাই। দুটি ডানায় ক্ষত চিহ্ন ও রক্ত দেখে তাৎক্ষণিক পাখিটিকে সুস্থ করতে আক্কেলপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে যাই। উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ঈগলের দুটি ডানা ড্রেসিং করে ইনজেকশন দিয়েছেন।
পাখিটির জিম্মা নেওয়া মোশারফ হোসেন বলেন, আমি ঈগল পাখিটিকে নিজের বাড়িতে রাখব। যত দিন লাগে সুস্থ করবো। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নিজ উদ্যোগে নিয়মিত প্রাণিসম্পদ দপ্তরে আনা-নেওয়া করব।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান সুমন বলেন, ঈগলটি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ঈগলের দুই ডানায় গুলির দাগ রয়েছে। প্রায় চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দুই কিশোর ঈগল পাখির চিকিৎসা করাতে এনেছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ড সত্যিই প্রশংসনীয়। যারা ঈগলটি গুলি করেছে তারা নিষ্ঠুর মনের মানুষ।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ঈগল পাখিটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ভালো আছে। পাখি প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই পাখি শিকার থেকে সকলকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।