নেত্রকোনায় মুঠোফোন চুরির অভিযোগে দুই শিশুকে গাছে বেঁধে নির্যাতন
Published: 19th, March 2025 GMT
প্রতীকী ছবি
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সংলাপের আগেই ১১১ প্রস্তাব বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত
সংলাপ শুরুর আগেই ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে ১১১ দফা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংস্কার প্রস্তাবের অন্য সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।
এ লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শুরু হতে যাচ্ছে। প্রথম দল হিসেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বিকেল ৩টায় সংসদ ভবনের এলডি হলে এ বৈঠক হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনায় বসবে কমিশন।
গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ সমকালকে বলেন, যে কাজগুলো রাজনৈতিক দলের মতামত ছাড়াই অল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের প্রস্তুতির জন্য পাঠানো হয়েছে।
এর মধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ২৮ দফা, দুদক সংস্কারের ৪৩ দফা, জনপ্রশাসন সংস্কারের ১৮ দফা, পুলিশ সংস্কারের ১৩ দফা এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ৯ দফা সুপারিশ রয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ১১ সংস্কার কমিশনের মধ্যে ছয়টির সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১১১ সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সুপারিশমালা বাস্তবায়নের কৌশল ও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো তা ফের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেবে।
সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া ছয় কমিশনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শুধু যেসব বিষয় আশু বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো চূড়ান্ত করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের সুপারিশের ৯টি প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন সংস্কার। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেওয়া কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিবন্ধন পেতে একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে।
অন্তত এক-দশমাংশ জেলায় কার্যকর কার্যালয় এবং অন্তত ৫ শতাংশ উপজেলায় বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর কার্যালয় থাকতে হবে। দলের সদস্য হিসেবে ন্যূনতম পাঁচ হাজার ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান আইনে কোনো দলকে নিবন্ধন পেতে হলে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে দেশের অন্তত ২২ জেলা ও ১০০ উপজেলায় কার্যালয় থাকতে হয়। আর সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নিবন্ধন পেতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে অন্তত সাত জেলায় ও ৬১টি উপজেলা/ মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকলেই হবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, হলফনামার খসড়া, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও পোস্টাল ব্যালট পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
জনপ্রশাসনে ১৮ সুপারিশ
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি সুপারিশ এখনই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, জাতীয় রাজত্ব বোর্ড পুনর্গঠন, ডিজিটাল রূপান্তর ও ই-সেবা চালু, ভূমি রেজিস্ট্রেশন সংস্কার, উপজেলা পরিষদ শক্তিশালী করা, পদোন্নতি না দেওয়া সরকারি কর্মচারীর বেতন সুবিধা চালু, দুর্নীতি তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন এবং চাকরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন সীমিতকরণ।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীসহ কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেন।
জানা গেছে, ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস বর্তমানে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে থাকে। অন্যদিকে, ভূমি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বিভিন্ন অফিস ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও হস্তান্তর-সংক্রান্ত দুটি আলাদা অফিস থাকায় জনদুর্ভোগ ও জটিলতা বাড়ে। এ পরিস্থিতিতে দ্বৈত ব্যবস্থাপনা বাতিল করে ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিসকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার জন্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত না রেখে তাঁকে শুধু সংরক্ষিত বিষয় ও বিধিবদ্ধ বিষয়াদি যেমন– আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ইত্যাদি দেখাশোনার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ বাস্তবায়ন করার পথে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর উদ্দেশ্য, তাঁকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখা। একজন সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, কোনো কর্মচারী যদি কোনো পদে পদোন্নতির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে যান, পরে আর ইনক্রিমেন্ট না পান এবং তিনি যদি কোনো বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ডে দণ্ডিত না হয়ে থাকেন, তবে তাঁকে দু’বছর পর পরবর্তী বেতন স্কেল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, কমিশনের সুপারিশ অনুসারে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। এতে বলা হয়, নাগরিকরা যাতে সহজে ও অবাধে চাহিদামতো সরকারি সেবাবিষয়ক তথ্য পেতে পারে, সেজন্য তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এবং অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টস ১৯২৩ পর্যালোচনা ও সংশোধন করা যেতে পারে।
গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য খাতে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। সরকার কতগুলো সুনির্দিষ্ট শর্তে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কেন্দ্রগুলো পরিচালনা আউটসোর্স করবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও অভিজ্ঞ বেসরকারি সদস্য নিয়ে একটি কমিটি এনজিওগুলোর কাজ তদারকি করতে পারে।
সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি গঠনে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এতে বলা হয়, কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট থাকায় আগে নানা রকম সমস্যা হতো। সাধারণ মানুষ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে বেসরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করার পক্ষে জোরালো মত দিয়েছেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনও নাগরিক সমাজের মতামতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
মহাসড়কের পাশে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতে বলা হয়, এখন যদিও মহাসড়কের পেট্রোল পাম্পগুলোতে টয়লেট রয়েছে, তবে সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে না। অনেক স্থানেই নারীর জন্য আলাদা টয়লেট নেই। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।
বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৮ দফা
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের দেওয়া ২৮ প্রস্তাব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে ৯ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি এবং আট বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য প্রস্তাবগুলো অভ্যন্তরীণ সার্কুলারের মাধ্যমে হবে বলে এ-সংক্রান্ত কর্মপদ্ধতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে ফৌজদারি অপরাধের মামলা তদন্তের জন্য আলাদা সংস্থা গঠনের পাশাপাশি সারাদেশের জেলা আদালত ও উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য স্থায়ী আইনজীবী নিয়োগ দিতে আলাদা অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন হতে যাচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বিচার বিভাগের কাঠামোগত উন্নয়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের মতে, স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থাটি হতে হবে দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য, যাতে প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে। অন্যদিকে, বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠাও জরুরি। সব সরকারের আমলেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিয়োগে দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া আইনজীবীর পক্ষপাতিত্বের পাশাপাশি তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাবও বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। এসব কারণে রাষ্ট্রপক্ষ মামলায় হেরে যাওয়ার অনেক নজিরও রয়েছে। একই অবস্থা বর্তমানে ফৌজদারি অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রেও রয়েছে। পুলিশ বর্তমানে মামলার তদন্ত করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের কাজের চাপ অনেক। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্তের অভিযোগ রয়েছে। জবাবদিহির ঘাটতিও প্রকট। এসব কারণে আলাদা তদন্ত সংস্থা গঠন হলে ফৌজদারি মামলার বিচারে গতি আসবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রথম প্রস্তাব অর্থাৎ উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়ন; সেটি ইতোমধ্যে সরকার অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করেছে। এ ছাড়া জুডিশিয়াল সার্ভিস সদস্যদের আচরণ বিধিমালা জারি, অ্যাটর্নি সার্ভিস, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস, বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে আদালতে সহায়ক কর্মচারী নিয়োগে অধ্যাদেশ জারি, আইন সংশোধনসহ ৯টি বিষয়ে বিদ্যমান আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো কার্যকর করতে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। পরে সংসদের মাধ্যমে তা অনুমোদন হতে হবে।
অন্যদিকে অধস্তন আদালতের সাংগঠনিক কাঠামোতে আইটি শাখা অন্তর্ভুক্ত, আদালতে নারী ও শিশুর জন্য স্বতন্ত্র স্থানসহ সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ, অধস্তন আদালতের বিচারক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি তদন্তে ব্যবস্থা নেওয়াসহ এ-সংক্রান্ত আটটি বিষয় প্রশাসনিক আদেশ জারির মাধ্যমে কার্যকরের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৩ সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও পুলিশ সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১০৮টি বিষয়ে সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে– ১৯৯৮ সালের ফৌজদারি আইন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন, ১৯৪৩ সালের বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন্সের (পিআরবি) যথাযথ অনুসরণ করে সেই সঙ্গে সময়ের বিস্তর ব্যবধানে আধুনিক বিশ্বে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে যেসব প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহার করা হয়, তা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশকে পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা অনুসরণ করে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এই পদ্ধতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসরণের লক্ষ্যে আইনি বৈধতা দেওয়ার জন্য কমিশন সুপারিশ করেছে। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করার ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা, একটি নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠন এবং সাংবিধানিক কাঠামোভুক্ত প্রতিষ্ঠান করা, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া, পুলিশের জন্য একটি পরিপূর্ণ মেডিকেল সার্ভিস গঠন, নদীপথে ডাকাতি, চোরাচালান, মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে ভাসমান থানা গঠন, পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট শক্তিশালী, গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কার্যকর ব্যবস্থা, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সব থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘর নির্মাণ, রাতে ঘরবাড়ি তল্লাশির ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করা, ভুয়া, গায়েবি মামলায় নিরপরাধ মানুষ চার্জশিটভুক্ত হলে এবং কাউকে অনর্থক হয়রানি করলে প্রমাণসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা রাখা, ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, ফৌজদারি মামলার তদন্তের জন্য বিশেষায়িত দল গঠন ইত্যাদি।
দুদক সংস্কারে ৪৩ সুপারিশ
দুদক সংস্কার কমিশনের ৪৭ সুপারিশের মধ্যে ৪৩টিই বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখনই বাস্তবায়নযোগ্য ৪৩ সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সব ধরনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব দুদকে জমা দেওয়া; জনপ্রতিনিধি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ, আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; রাজনৈতিক দলগুলো যাতে অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তিকে দলীয় পদ বা জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়– এ বিষয়েও জোর দেওয়া; দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থসম্পদের বৈধতা দেওয়ার যে কোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা; স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক দুদক প্রতিষ্ঠার ওপর প্রাধান্য দেওয়া; একটি শক্তিশালী ও সার্থক দুদক প্রতিষ্ঠা করে দুর্নীতি দমনে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া; অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, অনুসন্ধান, তদন্ত ও বিচার বিষয়ে বলা হয়, দীর্ঘসূত্রতা এড়ানো ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনাকে গতিশীল করার লক্ষ্যে দুদকের জেলা বা বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রদত্ত সুপারিশ ফের দুদকের প্রধান কার্যালয়ে যাচাই-বাছাই না করা; দুদক নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট মাত্রার নিচের অপরাধের অভিযোগের ক্ষেত্রে জেলা বা বিভাগীয় কার্যালয়কে অভিযোগ-পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া; অতি উচ্চমাত্রার দুর্নীতি বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দুর্নীতি, বিশেষত অর্থ পাচার তদন্তের ক্ষেত্রে দুদক প্রতিটি অভিযোগের জন্য দুদকের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এজেন্সির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আলাদা টাস্কফোর্স গঠন।
এ ছাড়া দুদককে অর্থবহ করতে সর্বোচ্চ পদে স্বচ্ছ নিয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ; ব্যক্তির পরিচয় নয়, দুর্নীতি বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতি দমন কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও রয়েছে সুস্পষ্ট প্রস্তাব।