বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁকে ‘নিশানা করে ভিত্তিহীন’ অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক’ বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির একজন পার্লামেন্ট সদস্য। তিনি দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’–এর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

বাংলাদেশ সরকার সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করে কেন সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ করছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দেওয়া একটি চিঠিতে টিউলিপের আইনজীবী বলেছেন, দুদকের এই কর্মপদ্ধতি ‘যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের একটি অগ্রহণযোগ্য চেষ্টা’।

দুদক শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করছে। এগুলোর মধ্যে তিনটিতে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে। সেগুলো হলো রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি থেকে লাভবান হওয়া, ঢাকায় জমি দখল ও মুদ্রা পাচার।

লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড ও হাইগেট এলাকার এমপি টিউলিপ কোনো ধরনের অনিয়ম করার কথা অস্বীকার করে আসছেন। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ ছাড়ার পর এই প্রথম দুদকে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন তিনি।

টিউলিপের আইনজীবী স্টিফেন হারউডের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘দুদক বা বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কোনো ক্ষেত্রেই সুষ্ঠুভাবে, সঠিক ও স্বচ্ছতার সঙ্গে আনেননি।’ অবিলম্বে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ অভিযোগ তৈরি বন্ধ এবং তাঁর ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের লক্ষ্যে’ আর কোনো মিডিয়া ব্রিফিং ও প্রকাশ্য মন্তব্য না করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

রাশিয়ার সঙ্গে ২০১৩ সালে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে টিউলিপ সিদ্দিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। সংস্থাটি বলছে, টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের সাত লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাটটি ওই অর্থ দিয়ে কেনা কি না, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

আইনজীবী স্টিফেন হারউড বলেছেন, লন্ডনের কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটটি টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৪ সালে তাঁর গডফাদার (ধর্মপিতা) আবদুল মোতালিফের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তিনি শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে কারণে যখন চুক্তি হয়নি, তার থেকে তছরুপ করা অর্থ দিয়ে ওই সম্পদ কেনার বিষয়টি ‘অসম্ভব’।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিটি হয়েছিল এক দশক পরে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই চুক্তিতে টিউলিপ সিদ্দিকের ‘কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না’, যদিও তিনি মস্কো গিয়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে একটি ছবির জন্য পোজ দিয়েছিলেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারপ্রধানের রাষ্ট্রীয় সফরে পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। তিনি সেখানে গিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছিলেন এবং সরকারি পর্যায়ের কোনো আলোচনায় যুক্ত ছিলেন না।

এ ছাড়া ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় প্লট পাওয়ার জন্য প্রভাব খাটানোর অভিযোগও অস্বীকার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বলেছেন, সেখানে কখনো তাঁর জমি ছিল না। আর ঢাকার একটি জায়গায় বোনকে টিউলিপের ফ্ল্যাট হস্তান্তর বৈধ ও আইনসিদ্ধভাবে করা হয়েছে বলে এতে দাবি করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, একটি সরকারি সংস্থা তদন্তের ক্ষেত্রে ‘যথাযথ প্রক্রিয়া, কার্যক্রম এবং সত্য প্রতিষ্ঠার চর্চা করে’, দুদক তা করেনি। তবে দুদক বলছে, তারা নথি ও বাস্তবতার নিরিখে কাজ করছে।

দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ যুক্তরাজ্যের আদালতসহ যেকোনো আদালতে প্রমাণিত হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট উল প স দ দ ক র ন ট উল প বল ছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। 

আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অংশ নিতে তারা ফরম নিতে পারেননি। ফরম নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান তারা।

গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সবগুলো পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন:

নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার না রাখার কথা ভাবছে ইসি

বাপ ডাইক্কা নির্বাচন দেওন লাগব, বললেন বিএনপির ফজলুর রহমান

মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমদ জানান, ২১টি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে সবগুলোই উৎরে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

মনোননয়ন জমা দেওয়া ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।

সাতটি পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী মো. আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা ফরম নিতে পারিনি। দুপুর ও বিকেলে আমরা দুই দফায় সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছি।” 

বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, “আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম না নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের সৎ সাহস নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-জনতার ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করেছিল, তারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটে ভর্তিতে নতুন করে এমসিকিউ পরীক্ষা হবে
  • আদালতপাড়ায় এক হয়ে যুবককে পেটালেন সাবেক দুই স্ত্রী
  • ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আবার হবে
  • মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
  • প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, সব পদে জয়ী বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা
  • মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনায় ৩৮ নাগরিকের নিন্দা
  • পয়লা বৈশাখের আয়োজন বাধাগ্রস্ত করার কোনো অধিকার নেই
  • চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই
  • ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ: যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
  • ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী