জাতীয় পার্টির মহাসচিবের বক্তব্য চলাকালে ইফতার অনুষ্ঠানে হামলা
Published: 19th, March 2025 GMT
রাজধানীর পল্লবীর পর এবার কাফরুলে জাতীয় পার্টির (জাপা) ইফতার অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটল। আজ বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কাফরুলের কচুক্ষেত এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় এ হামলা হয়। তখন জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও জাতীয় পার্টির সূত্র জানিয়েছে, জাপার মহাসচিবের বক্তব্য চলাকালে ১০ থেকে ১২ জন রেস্তোরাঁয় ঢুকে হইচই শুরু করে অনুষ্ঠান পণ্ড করার চেষ্টা করে। তখন উপস্থিত জাপার নেতা-কর্মীরা তাদের বের করে দেন।
ওই সূত্র জানায়, তাড়া খেয়ে বেরিয়ে এসে ওই ব্যক্তিরা সংগঠিত হয়ে হকিস্টিক, ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে ইফতার অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। এ সময় জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হকসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। হামলার এক পর্যায়ে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের অনেকে রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে যান। অনেকে হামলায় আহত হন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য ছিলেন না। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় তাঁরা হামলাকারীদের পিটিয়ে সরিয়ে দেন।
জাপার কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব লোক হামলা করেছে, তাদের বস্তির ভাড়া করা লোক মনে হয়েছে। তাদের একটাই কথা, প্রোগ্রাম (ইফতার) বন্ধ করতে হবে। আমরা বারবার বলেছি, তোমরা কারা, তোমাদের কী পরিচয়? তারা কিছুই বলে না।’
এর আগে ৮ মার্চ রাজধানীর পল্লবীতে বাধার মুখে জাপার ইফতার মাহফিল ভন্ডুল হয়ে যায়। পল্লবী থানাসংলগ্ন ২ নম্বর কমিউনিটি সেন্টারে ওই ইফতার মাহফিল হওয়ার কথা ছিল। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্লোগান দিয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক ইফতার মাহফিল বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ করে জাতীয় পার্টি। ওই ইফতারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তখন তিনি রাস্তায় ছিলেন।
দলীয় সূত্রটি জানায়, কাফরুলে ইফতার অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলায় দলের ১০-১২ জন কর্মী ছাড়াও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে কয়েকজন বিভিন্ন হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী, কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল উদ্দিনসহ অনেক নেতা-কর্মীর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানের শৈশব কি আনন্দে কাটছে
এখনকার শিশুদের দিকে তাকালে মনে হয়, আমাদের শৈশব অনেক আনন্দেই কেটেছে। শুধু পড়াশোনা করাই তখন শৈশবের মূল বিষয় ছিল না। সেই দুরন্ত শৈশব কেটেছে গোল্লাছুট, ডাংগুলির মতো খেলাধুলা; বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি, নাচগানে আনন্দ করে। সৃজনশীল বিষয়ের প্রতি আমাদের আগ্রহ ছিল সহজাত। আর এ বিষয়গুলোই আমাদের জীবনকে আরও এগিয়ে নিয়েছে বলে আমরা এখন ধারণা করতে পারি।
অথচ আমাদের শিশুরা কি আমাদের মতো শৈশব কাটাতে পারছে? আমরা আশপাশের শিশুদের দিকে তাকালেই এ প্রশ্নের উত্তর পাব। তাদের সঙ্গে কথা বললে এই প্রশ্নটি আরও ভালোভাবে অনুধাবন করা সম্ভব। আমাদের শিশুরা এখন কেমন যেন ক্লান্ত! বই আর ক্লাসের চাপে যেন পিষ্ট! বয়সের তুলনায় অনেক বড় সিলেবাস, এর সঙ্গে যুক্ত কোচিং বা হাউস টিউটরের চাপ; অভিভাবক, প্রতিবেশী ও সমাজের ভালো ফলের প্রত্যাশা, সবসময় সবার আগে থাকার তাড়না আমাদের শিশুদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা এখনই ভেবে দেখতে হবে।
কেন আমাদের শিশুদের জীবন থেকে সুখ হারিয়ে গেল; তারা কীভাবে তাদের শৈশবকে আনন্দময় করে তুলতে পারে; কীভাবে আমরা তাদের সেই সুখ বা আনন্দের দিকে নিয়ে যেতে পারি– এখন এটিই আমাদের ভাবনার বিষয় হওয়া উচিত।
প্রতিবছর ২০ মার্চ ঘটা করে আমরা আন্তর্জাতিক সুখ দিবস উদযাপন করি। এবারও ‘কেয়ারিং অ্যান্ড শেয়ারিং’– এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি আমাদের শিশুদের কথা ভেবেছি? পড়াশোনার নাম করে তাদের মধ্য থেকে যেন আনন্দই হারিয়ে গেছে! অনাগত কঠিন দিনের মুখোমুখি হলে তাদের অবস্থা কেমন হবে, তা এখন ধারণাও করা যাচ্ছে না। অন্তত এই দিবসটি সামনে রেখে হলেও আমাদের উচিত এই শিশুদের জীবনকে রঙিন ও আনন্দময় করে তোলার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। আর তা এই শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে থেকেই করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিবেশী সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ কথা এখন সব শিক্ষকই স্বীকার করবেন, শিশুদের যথাযথভাবে বিকশিত করতে হলে পাঠবহির্ভূত কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, নাচ-গান, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, বিতর্ক– এগুলো যে শিক্ষার্থীর যথাযথ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়– এটা এখন সবাই জানেন। আর এই বিষয়কে আমরা গ্লেনফেস্ট, গ্লেনজিউর ও রকফেস্টের মতো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শৈশবকে আরও বেশি উজ্জীবিত করতে হলে, শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক বৈশ্বিক ধারণার সঙ্গে পরিচিত করাতে হলে বা তাদের আগামীর বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে নতুন ভাষা শিক্ষা এবং এআই, রোবটিকস বা প্রোগ্রামিং শেখার কোনো বিকল্প নেই।
শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা শুধু শারীরিক ফিটনেস বাড়ায় না। এটি তাদের মধ্যে নেতৃত্বের মনোভাব গড়ে তোলে; দলগত কাজের দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় আমাদের শিশুদের আনন্দ কমে গেছে।
আমরা যদি সত্যিই শিশুর জন্য সুখ ও আনন্দ নিশ্চিত করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।
স্কুল ও পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের জন্য খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা যেন তাদের জন্য কোনো বোঝা নয়, বরং আনন্দের বিষয়ে পরিণত হয়। যেন তাদের শৈশবেও এমন কিছু স্মৃতি তৈরি হয়, যা তাদের আগামী দিনের পথচলায় অমিত উদ্দীপনা হিসেবে শক্তি জোগাবে; তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ, তাদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করাই যেন আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হয়ে ওঠে।
অম্লান কে সাহা: প্রিন্সিপাল, গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা
amlan.saha@uttara.glenrich.edu