শিশুকে ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত কিশোরকে থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
Published: 19th, March 2025 GMT
যশোরে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোরের বিরুদ্ধে চার বছর বয়য়ী এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে তুলকালাম ঘটেছে। বুধবার বিকেলে অভিযুক্ত শিশুকে হেফাজতে নেয় কোতয়ালি থানা পুলিশ। এ সময় তাকে থানা থেকে কয়েক দফায় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বিক্ষুব্ধ একদল শিক্ষার্থী।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে থানার এক কনস্টেবল হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিশুকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন কন্যাশিশুর বাবা।
শিশুটির বাবার অভিযোগ, তিনি তার স্ত্রী ও ছেলে কাজে বাড়ির বাইরে ছিলেন। দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি এসে দেখেন, তাদের প্রতিবেশির পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া এক ছেলে তার মেয়ের পরিধেয় পোশাক খুলে পা বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করছে। এ সময় তিনি মেয়েকে উদ্ধার ও ছেলেটিকে আটক করেন। কিন্তু ছেলেটি তার হাত থেকে ছুটে পালিয়ে যায়।
এদিকে শিশুটির ভাইয়ের কাছ থেকে খবর পেয়ে যশোর সরকারি এমএম কলেজ ও জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তকে আটকের চেষ্টা করে। সেখানে অভিযুক্তের বাবা ও তাদের বাড়িওয়ালার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় তাদের বাড়িঘর। এরপর বিক্ষোভকারীরা থানায় এসে অবস্থান নেয়। বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত কিশোরকে আটক করে থানায় নেওয়ার সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা হামলা চালায়। বিকেল ৫টার পর থানা ভবনের ভেতরে অভিযুক্ত কিশোরের এক আত্মীয়কে শিক্ষার্থীরা মারধর করে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থানায় কর্তব্যরত পুলিশ তাদের ভবনের বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে এক পুলিশ সদস্যকে ধাওয়া করে বিক্ষুব্ধরা।
ওসির কক্ষে হেফাজতে থাকা ওই কিশোরকে কয়েকদফা ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা ও মারধর করে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় থানার ভেতরে তারা ধর্ষণবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশারসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা কোতয়ালি থানায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন জানান, চার বছরের কন্যাশিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। সে একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার বয়স নির্ধারণে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে সন্ধ্যায় আসামিকে আদালতে পাঠালে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: যশ র
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানের শৈশব কি আনন্দে কাটছে
এখনকার শিশুদের দিকে তাকালে মনে হয়, আমাদের শৈশব অনেক আনন্দেই কেটেছে। শুধু পড়াশোনা করাই তখন শৈশবের মূল বিষয় ছিল না। সেই দুরন্ত শৈশব কেটেছে গোল্লাছুট, ডাংগুলির মতো খেলাধুলা; বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি, নাচগানে আনন্দ করে। সৃজনশীল বিষয়ের প্রতি আমাদের আগ্রহ ছিল সহজাত। আর এ বিষয়গুলোই আমাদের জীবনকে আরও এগিয়ে নিয়েছে বলে আমরা এখন ধারণা করতে পারি।
অথচ আমাদের শিশুরা কি আমাদের মতো শৈশব কাটাতে পারছে? আমরা আশপাশের শিশুদের দিকে তাকালেই এ প্রশ্নের উত্তর পাব। তাদের সঙ্গে কথা বললে এই প্রশ্নটি আরও ভালোভাবে অনুধাবন করা সম্ভব। আমাদের শিশুরা এখন কেমন যেন ক্লান্ত! বই আর ক্লাসের চাপে যেন পিষ্ট! বয়সের তুলনায় অনেক বড় সিলেবাস, এর সঙ্গে যুক্ত কোচিং বা হাউস টিউটরের চাপ; অভিভাবক, প্রতিবেশী ও সমাজের ভালো ফলের প্রত্যাশা, সবসময় সবার আগে থাকার তাড়না আমাদের শিশুদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা এখনই ভেবে দেখতে হবে।
কেন আমাদের শিশুদের জীবন থেকে সুখ হারিয়ে গেল; তারা কীভাবে তাদের শৈশবকে আনন্দময় করে তুলতে পারে; কীভাবে আমরা তাদের সেই সুখ বা আনন্দের দিকে নিয়ে যেতে পারি– এখন এটিই আমাদের ভাবনার বিষয় হওয়া উচিত।
প্রতিবছর ২০ মার্চ ঘটা করে আমরা আন্তর্জাতিক সুখ দিবস উদযাপন করি। এবারও ‘কেয়ারিং অ্যান্ড শেয়ারিং’– এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি আমাদের শিশুদের কথা ভেবেছি? পড়াশোনার নাম করে তাদের মধ্য থেকে যেন আনন্দই হারিয়ে গেছে! অনাগত কঠিন দিনের মুখোমুখি হলে তাদের অবস্থা কেমন হবে, তা এখন ধারণাও করা যাচ্ছে না। অন্তত এই দিবসটি সামনে রেখে হলেও আমাদের উচিত এই শিশুদের জীবনকে রঙিন ও আনন্দময় করে তোলার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। আর তা এই শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে থেকেই করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিবেশী সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ কথা এখন সব শিক্ষকই স্বীকার করবেন, শিশুদের যথাযথভাবে বিকশিত করতে হলে পাঠবহির্ভূত কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, নাচ-গান, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, বিতর্ক– এগুলো যে শিক্ষার্থীর যথাযথ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়– এটা এখন সবাই জানেন। আর এই বিষয়কে আমরা গ্লেনফেস্ট, গ্লেনজিউর ও রকফেস্টের মতো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শৈশবকে আরও বেশি উজ্জীবিত করতে হলে, শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক বৈশ্বিক ধারণার সঙ্গে পরিচিত করাতে হলে বা তাদের আগামীর বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে নতুন ভাষা শিক্ষা এবং এআই, রোবটিকস বা প্রোগ্রামিং শেখার কোনো বিকল্প নেই।
শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা শুধু শারীরিক ফিটনেস বাড়ায় না। এটি তাদের মধ্যে নেতৃত্বের মনোভাব গড়ে তোলে; দলগত কাজের দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় আমাদের শিশুদের আনন্দ কমে গেছে।
আমরা যদি সত্যিই শিশুর জন্য সুখ ও আনন্দ নিশ্চিত করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।
স্কুল ও পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের জন্য খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা যেন তাদের জন্য কোনো বোঝা নয়, বরং আনন্দের বিষয়ে পরিণত হয়। যেন তাদের শৈশবেও এমন কিছু স্মৃতি তৈরি হয়, যা তাদের আগামী দিনের পথচলায় অমিত উদ্দীপনা হিসেবে শক্তি জোগাবে; তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ, তাদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করাই যেন আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হয়ে ওঠে।
অম্লান কে সাহা: প্রিন্সিপাল, গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা
amlan.saha@uttara.glenrich.edu