Risingbd:
2025-04-13@13:44:14 GMT

‘মা, আমি মরতে চাই’

Published: 19th, March 2025 GMT

‘মা, আমি মরতে চাই’

ব্রাশ দিয়ে চুল আঁচড়ানোর অভিনয় করে সামা তুবাইল আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে।

মাথায় হাত রেখে সিএনএনকে সামা বলেন, “আমি খুবই দুঃখিত যে আমার ব্রাশ দিয়ে আঁচড়ানোর জন্য একটি চুলও নেই। আমি আয়না ধরে থাকি। কারণ আমি আমার চুল আঁচড়াতে চাই: আমি সত্যিই আবার আমার চুল আঁচড়াতে চাই।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আগে সামা এর চুল এমন ছিল না। তার লম্বা চুল ছিল এবং উত্তর গাজার জাবালিয়ায় তার বন্ধুদের সাথে বাইরে খেলাধুলা করত। কিন্তু তারপর থেকে, সামা এবং তার পরিবার সেই ১৯ লাখ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রয়েছেন যাদের জোরপূর্বক তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে, যারা ইসরায়েলি সামরিক আদেশে প্রথমে ছিটমহলের দক্ষিণ রাফাহ অঞ্চলে পালিয়ে যায়। সহিংসতা বৃদ্ধি পেলে, সামা গাজার মধ্যাঞ্চলের খান ইউনিসের একটি বাস্তুচ্যুত শিবিরে চলে যান। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৮ হাজার ছাড়িয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী,ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৪৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গত জুনে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, গাজার প্রায় ১২ লাখ শিশুর মানসিক সহায়তা প্রয়োজন, বিশেষ করে যারা বারবার আঘাতমূলক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে।

জানুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার এক সপ্তাহ পরে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার প্রধান টম ফ্লেচার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, “একটি প্রজন্ম মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। শিশুদের হত্যা করা হয়েছে, অনাহারে রাখা হয়েছে এবং হিমায়িত অবস্থায় মারা গেছে। কিছু শিশু তাদের প্রথম নিঃশ্বাসের আগেই মারা গেছে - প্রসবের সময় তাদের মায়েদের সাথে মারা যাচ্ছে।”

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েল নতুন করে বিমান হামলা শুরু করেছে, যার ফলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেছে এবং শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। 

একজন চিকিৎসক সিএনএনকে বলেন, গাজা সিটির একটি হাসপাতালের দৃশ্য ‘আমি আগে যা দেখেছি তা আগের মতো নয়।’ হাসপাতালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু দেখেছেন তিনি।

গত বছর চিকিৎসকরা নির্ণয় করেছিলেন যে সামা’র চুল পড়া ‘নার্ভাস শক’ এর ফলে হয়েছে, বিশেষ করে আগস্টে রাফায় তার প্রতিবেশীর বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর। তারা বলেছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে তার দৈনন্দিন জীবনের বেদনাদায়ক পরিবর্তন সম্ভবত তার অ্যালোপেসিয়ায় অবদান রেখেছে, যা চুল পড়ার কারণ।

গত বছরের শেষের দিকে ওয়ার চাইল্ড অ্যালায়েন্স এবং গাজাভিত্তিক কমিউনিটি ট্রেনিং সেন্টার ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের একটি প্রতিবেদনে গত বছর গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে শিশুদের উপর যে মারাত্মক মানসিক আঘাত নেমে এসেছে তা তুলে ধরা হয়েছে। পাঁচ শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ শিশুর যত্নশীলদের উপর করা জরিপের উপর ভিত্তি করে তৈরি এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, সেই পরিস্থিতিতে ৯৬ শতাংশ শিশু মনে করে যে ,মৃত্যু আসন্ন এবং প্রায় অর্ধেক- ৪৯ শতাংশ ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে ‘মরে যাওয়ার ইচ্ছা’ প্রকাশ করেছে।

চুল পড়ার জন্য অন্যান্য শিশুদের নেতিবাচক কথাবার্তায় সামা’র মানসিক যন্ত্রণা আরো তীব্র হয়। এর ফলে সে ঘরের ভেতরেই থেকে যায়। বাইরে, সে তার মাথার ত্বক ঢাকতে গোলাপী রঙের একটি ব্যান্ডানা পরে থাকতো।

মাকে সামা বলেছিল,“মা, আমি ক্লান্ত-আমি মরতে চাই। আমার চুল কেন গজাচ্ছে না? আমি মরতে চাই এবং আল্লাহর ইচ্ছায় জান্নাতে আমার চুল গজাতে চাই।”

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র চ ল র একট ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন ‘হাত-পা ছাড়া জন্ম নেওয়া’ অদম্য লিতুন

যশোরের মণিরামপুরে ‘হাত-পা ছাড়া জন্ম নেওয়া’ সেই অদম্য মেধাবী লিতুন জিরা চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। মণিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন লিতুন জিরা। তার পরীক্ষার কেন্দ্র উপজেলার নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। 

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) প্রথম দিনে ইউএনও নিশাত তামান্না পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে লিতুন জিরাকে দেখে অভিভূত হন। লিতুন জিরার এগিয়ে যাওয়ার পথে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাসও দেন ইউএনও।

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সাতনল খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগম দম্পতির দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছোট লিতুন জিরা। বড় ছেলে ঢাকার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন। লিতুন জিরা পিইসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা) ও জেএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর, প্রাথমিকে বৃত্তি লাভ, শ্রেণির সেরা শিক্ষার্থীর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চায়ও রেখেছেন চমক জাগানো অবদান। 

লিতুন জিরার একাগ্রতা আর অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি বা পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমেও স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।

অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে সব বাধা টপকে সমাজের অন্যদের মতই এগিয়ে চলেছেন লিতুন জিরা। বরং এক্ষেত্রে স্বাভাবিক শিশুর চেয়েও দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে চলেছেন লিতুন। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পর পর দুই বছর লিতুন জিরা উপজেলা পর্যায় মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন, একই সালে জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জনসহ একই বছরের ৪ জানুয়ারি লিতুন জিরা খুলনা বেতারে গান গাওয়ার সুযোগ পান।

লিতুন জিরার মা জাহানারা বেগম বলেন, জন্মের পর মেয়ে লিতুন জিরার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় অনেক রাত চোখের পানিতে ভাসিয়েছি। যার দুই হাত-পা নেই; সেই মেয়ে বড় হয়ে কিইবা করতে পারবে- এমন অজানা শঙ্কায় আঁতকে উঠতাম। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের পড়ালেখার প্রবল আগ্রহ ও মেধার স্বাক্ষরতায় সেই আশংকা আজ আশার আলোয় রূপ নিয়েছে।

ঢাকা/রিটন/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজা সিটির একমাত্র সচল হাসপাতালে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
  • গাজায় এ পর্যন্ত ৩৫টি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • ইন্টারনেটের ব্যবহার কম উৎপাদনশীল খাতে
  • হঠাৎ বাড়ছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টে শেয়ারদর, চার দিনে বাড়ল ৬৩ টাকা
  • সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি পেল ১৩৩ প্রতিষ্ঠান
  • এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন ‘হাত-পা ছাড়া জন্ম নেওয়া’ অদম্য লিতুন