নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, যুবদল নেতা মো. ওহিদ ও জুয়েলসহ অন্যদের বিরুদ্ধে এলাকায় মাছ লুটপাটসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওহিদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং জুয়েল রামপুর ইউনিয়নের যুবদল নেতা।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ইকবাল গ্রুপ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে জড়াচ্ছে নানা অনিয়মে। সম্প্রতি ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে বামনী খাল ইজারা দেওয়া, বামনী বাজারের ইজারাদারের থেকে চাঁদা দাবি ও রামপুর ভূমি অফিসের মালিকানাধীন ৫ নং ওয়ার্ডের মক্কা নগরীতে মাছ লুটপাটের অভিযোগ উঠে এই গ্রুপের বিরুদ্ধে। গত ১২ মার্চ রাতে ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে মক্কা নগরী থেকে মাছ উত্তোলন করা হয়। পরের দিন সকালে বামনী বাজারের মাছের আড়তে ১৮ হাজার ৫৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়, যার মেমো সমকাল প্রতিনিধির হাতে রয়েছে।

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু কাউছার মামুন সমকালকে বলেন, মাছ লুটপাটের ঘটনায় আমাকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান রিপন জানালে আমি ওই দিন রাতেই মক্কা নগরী প্রজেক্টে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি ইকবাল হোসেন ও মো.

ওহিদের নেতৃত্বে মাছ ধরছে। মাছ ধরে বামনী বাজারের দিকে নিয়ে যায়।

এদিকে এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রামপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলালের বিরুদ্ধে। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ১৪ মার্চ রাতেই ইকবালসহ অন্যদের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠক বসে। সে বৈঠকে ইকবাল, মো. ওহিদ ও জুয়েলসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, অভিযুক্ত জুয়েল সম্পর্কে বেলায়েত হোসেনের শ্যালক।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. ওহিদ বলেন, আমি মাছ লুটের সঙ্গে জড়িত নই। আমি শুধু ইকবালের সঙ্গে ওই দিন রাতে ওইখানে ছিলাম। এর ১০ মিনিট পর আমি সেখান থেকে চলে এসেছি। 

বিভিন্ন অনিয়মের কথা রামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেনকে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, খাল ইজারা দিয়েছে রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনছার উল্যাহ। তিনি ইজারাকৃত ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা কোথায় রেখেছেন, তিনিই জানেন। একটি মহল আমাকে হেয় করতে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনছার উল্ল্যাহর ফোনে বার বার কল করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে যানা যায়- তিনি গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ইকব ল হ স ন ব এনপ র য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানের শৈশব কি আনন্দে কাটছে 

এখনকার শিশুদের দিকে তাকালে মনে হয়, আমাদের শৈশব অনেক আনন্দেই কেটেছে। শুধু পড়াশোনা করাই তখন শৈশবের মূল বিষয় ছিল না। সেই দুরন্ত শৈশব কেটেছে গোল্লাছুট, ডাংগুলির মতো খেলাধুলা; বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি, নাচগানে আনন্দ করে। সৃজনশীল বিষয়ের প্রতি আমাদের আগ্রহ ছিল সহজাত। আর এ বিষয়গুলোই আমাদের জীবনকে আরও এগিয়ে নিয়েছে বলে আমরা এখন ধারণা করতে পারি। 

অথচ আমাদের শিশুরা কি আমাদের মতো শৈশব কাটাতে পারছে? আমরা আশপাশের শিশুদের দিকে তাকালেই এ প্রশ্নের উত্তর পাব। তাদের সঙ্গে কথা বললে এই প্রশ্নটি আরও ভালোভাবে অনুধাবন করা সম্ভব। আমাদের শিশুরা এখন কেমন যেন ক্লান্ত! বই আর ক্লাসের চাপে যেন পিষ্ট! বয়সের তুলনায় অনেক বড় সিলেবাস, এর সঙ্গে যুক্ত কোচিং বা হাউস টিউটরের চাপ; অভিভাবক, প্রতিবেশী ও সমাজের ভালো ফলের প্রত্যাশা, সবসময় সবার আগে থাকার তাড়না আমাদের শিশুদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা এখনই ভেবে দেখতে হবে।

কেন আমাদের শিশুদের জীবন থেকে সুখ হারিয়ে গেল; তারা কীভাবে তাদের শৈশবকে আনন্দময় করে তুলতে পারে; কীভাবে আমরা তাদের সেই সুখ বা আনন্দের দিকে নিয়ে যেতে পারি– এখন এটিই আমাদের ভাবনার বিষয় হওয়া উচিত। 

প্রতিবছর ২০ মার্চ ঘটা করে আমরা আন্তর্জাতিক সুখ দিবস উদযাপন করি। এবারও ‘কেয়ারিং অ্যান্ড শেয়ারিং’– এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি আমাদের শিশুদের কথা ভেবেছি? পড়াশোনার নাম করে তাদের মধ্য থেকে যেন আনন্দই হারিয়ে গেছে! অনাগত কঠিন দিনের মুখোমুখি হলে তাদের অবস্থা কেমন হবে, তা এখন ধারণাও করা যাচ্ছে না। অন্তত এই দিবসটি সামনে রেখে হলেও আমাদের উচিত এই শিশুদের জীবনকে রঙিন ও আনন্দময় করে তোলার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। আর তা এই শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে থেকেই করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিবেশী সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 

এ কথা এখন সব শিক্ষকই স্বীকার করবেন, শিশুদের যথাযথভাবে বিকশিত করতে হলে পাঠবহির্ভূত কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, নাচ-গান, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, বিতর্ক– এগুলো যে শিক্ষার্থীর যথাযথ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়– এটা এখন সবাই জানেন। আর এই বিষয়কে আমরা গ্লেনফেস্ট, গ্লেনজিউর ও রকফেস্টের মতো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শৈশবকে আরও বেশি উজ্জীবিত করতে হলে, শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক বৈশ্বিক ধারণার সঙ্গে পরিচিত করাতে হলে বা তাদের আগামীর বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে নতুন ভাষা শিক্ষা এবং এআই, রোবটিকস বা প্রোগ্রামিং শেখার কোনো বিকল্প নেই। 

শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা শুধু শারীরিক ফিটনেস বাড়ায় না। এটি তাদের মধ্যে নেতৃত্বের মনোভাব গড়ে তোলে; দলগত কাজের দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় আমাদের শিশুদের আনন্দ কমে গেছে। 

আমরা যদি সত্যিই শিশুর জন্য সুখ ও আনন্দ নিশ্চিত করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।

স্কুল ও পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের জন্য খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা যেন তাদের জন্য কোনো বোঝা নয়, বরং আনন্দের বিষয়ে পরিণত হয়। যেন তাদের শৈশবেও এমন কিছু স্মৃতি তৈরি হয়, যা তাদের আগামী দিনের পথচলায় অমিত উদ্দীপনা হিসেবে শক্তি জোগাবে; তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ, তাদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করাই যেন আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হয়ে ওঠে। 

অম্লান কে সাহা: প্রিন্সিপাল, গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা
amlan.saha@uttara.glenrich.edu

সম্পর্কিত নিবন্ধ