মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) মালয়েশিয়া ও আজারবাইজানে হালাল কসমেটিকস বা প্রসাধনী রপ্তানি করতে চলেছে রিমার্ক-হারল্যান। বর্তমানে এসব বাজারে প্রসাধনপণ্য বিক্রিতে ৮ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, যা দেশের এই কোম্পানি ধরতে চায়। রিমার্ক–হারল্যান প্রাথমিকভাবে লিলি ও অলিন ব্র্যান্ডের আটটি হালাল পণ্য রপ্তানি করবে। তবে শতাধিক হালাল পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে কোম্পানিটির।

রিমার্কের পরিচালক চিত্রনায়ক শাকিব খান গত রোববার এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) কাছ থেকে রিমার্কের হালাল পণ্যের সনদ প্রাপ্তি উপলক্ষে রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ, সাব্বির রহমান ও তানজিদ হাসান তামিম, রিমার্ক-হারল্যানের নির্বাহী পরিচালক চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আগামী এপ্রিলে দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় একটি মেলায় নিজেদের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের স্কিন কেয়ার ও কসমেটিকস পণ্য নিয়ে অংশ নেবে রিমার্ক–হারল্যান।  

রিমার্ক-হারল্যানের পরিচালক শাকিব খান বলেন, ‘দেশে-বিদেশে এখন বিপুলসংখ্যক মানুষ হালাল পণ্য পছন্দ করেন। আমরা উন্নতমানের হালাল পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ডিপ স্টেট’ নিয়ে সন্দেহ ও বাস্তবতা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আলোচনায় যে ‘ডিপ স্টেট’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়, তার প্রকৃত অর্থ কী? এটা কি শুধু বৈশ্বিক রাজনৈতিক বিষয়াবলি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মার্কিনি রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বলয়ের মধ্যে রাখতে বা তা সম্প্রসারণে ব্যবহার হয়ে থাকে? না, অন্য দেশেও এ ধরনের ‘ডিপ স্টেট’ জাতীয় বিষয়টি আছে? 

সাধারণত ‘ডিপ স্টেট’ বলতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে কিছু সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি বিশেষ নেটওয়ার্ককে বোঝানো হয়; যেখানে সরাসরি পার্লামেন্টের বাইরে এবং উচ্চ পর্যায়ের সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি গ্রুপ বা নেটওয়ার্ক বোঝায়; যাদের পরামর্শে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এই সিদ্ধান্তের অনেক কিছুই পার্লামেন্টের আলোচনার বাইরে থাকতে পারে, যার ফলে সাধারণ জনগণের পক্ষে তা জানা সবসময় সম্ভব হয় না। অর্থাৎ ওই নেটওয়ার্ক বা গ্রুপটি বৈশ্বিক রাজনীতি ও দেশের স্বার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশে সংঘটিত ২০২৪-এর ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আমেরিকার একটি ভূমিকা থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিটি ঘটনা বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন ও কার্যকারণের মধ্য দিয়ে একটি চূড়ান্ত রূপের দিকে অর্থাৎ সরকার পতনের দিকে গেছে। এখানে আমেরিকার ‘ডিপ স্টেট’ কোথায়? বা আদৌ এ ধরনের কোনো কেন্দ্রীয় গোপন শক্তির ভূমিকা ছিল?

এই আলোচনা হয়তো চলতেই থাকবে বাংলাদেশ যতদিন না নিজস্ব শক্তিতে বলীয়ান হয়ে একটি গণতান্ত্রিক সার্বভৌম শক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। ওই নেতৃত্ব নিয়মিতভাবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবে।

পূর্ব এশিয়ায় চীন অনেক দেশকে যেমন– ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কোরিয়া ইত্যাদি রাষ্ট্রকে সামাজিক অর্থনৈতিক প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়ে তার প্রতিবেশীকে আরও বেশি ক্ষমতায়িত করেছে। তাতে একটি অঞ্চলের পুরোপুরি বার্গেনিং পাওয়ার বা বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়ে গেছে। যাকে চীনারা বলে থাকেন সিল্ক রোড বা বেল্ট অ্যান্ড রুট ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নীতি। এতে সারাবিশ্বে চায়নিজ অর্থনীতির বিকাশ হয়েছে। তাদের ভোক্তা শ্রেণি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ওই রাষ্ট্রগুলোও পারস্পরিক অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি করেছে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় এ ভূমিকায় দেখা যায়নি। সম্ভাবনাময় সার্ককে কাজে না লাগিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দূরত্ব ক্রমাগত বাড়িয়েছে। এ দেশে যেমন তারা গত ১৬ বছর বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বিভিন্ন কৌশলে দুর্বল করে রাখার একটি নীতি গ্রহণ করেছে; অন্যদিকে বাংলাদেশের বিজয় দিবস ও স্বাধীনতার স্পর্শকাতর ১৬ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদি সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে তাদের সৈনিকের বিজয় হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের ১৬ ডিসেম্বরের যে গুরুত্ব ও তাৎপর্য, সেটি ভারতের কাছে সেভাবে তাৎপর্যপূর্ণ নয়। এটি তাদের কাছে ‘ডিপ স্টেট’-এর ক্রিয়াকর্মেরই একটি ফল হিসেবে মনে করেছেন। এত কিছুর পরও আমরা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই এবং সেটি বাংলাদেশের স্বার্থ আগের মতো বিকিয়ে দিয়ে নয়; বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার স্বার্থ, মর্যাদা ও আত্মসম্মান নিয়ে একটি বার্গেনিংয়ের মাধ্যমে উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে উভয় দেশের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। এ জন্য ভারতকে এগিয়ে আসতে হবে আরও বেশি। তাহলে এই পেছনের আজ্ঞাবহ ও কলঙ্কিত ইতিহাস মুছে একটি আলোকিত সম্ভাবনাময় ইতিহাস তৈরি হতে পারে। 

বর্তমান বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পর আমরা ছয় মাসের বেশি সময় পার করে চলছি। কিছু সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এখনও আমরা একটি স্বাভাবিক গতি ফিরে পাইনি। সেটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করলে প্রতিফলিত হয়। এটি একেবারেই যে অস্বাভাবিক, তা নয়। একটি স্বাধীন দেশ বা একটি নতুন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট আকাঙ্ক্ষা একটি সঠিক থাকার আকৃতি বা পথ খুঁজে পেতে একটু তো সময় লাগতে পারে। কিন্তু জাতি ইতোমধ্যে ৫৩ বছর অতিক্রম করে গেছে। পাশাপাশি ছয় মাসের বেশি সময়ের মধ্যে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, তা আশান্বিত হওয়ার খুব বেশি কারণ নেই। এ জন্য আমাদের নিশ্চয় ভাবতে হবে, আমরা অপরের কল্পনাশক্তি বা পরিকল্পিত কোনো ‘ডিপ স্টেট’-এর খেলার পুতুল হয়ে থাকব, নাকি নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরে একটি জ্ঞানভিত্তিক বিজ্ঞানমনস্ক দেশপ্রেমিক তথা সংবেদনশীল জাতি হিসেবে আপামর জনসাধারণকে নিয়ে একটি সুন্দর সফল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখব? প্রশ্ন রয়ে গেল গণঅভ্যুত্থান-উত্তর অন্তর্বর্তী সরকার ও ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক/সামাজিক শক্তিগুলোর কাছে। একইভাবে সাধারণ মানুষকেও বুঝতে হবে, এত দীর্ঘ সময় যে একটি দেশ অনিয়ম, শৃঙ্খলাহীন, দুর্নীতিগ্রস্তসহ নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে, তা থেকে মুক্তির জন্য একটু সময় দরকার। প্রতিক্রিয়া বা প্রতিবাদ বা অধিকার বা দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পরিবর্তন কাম্য এবং অন্যের অসুবিধার কারণ যাতে না হয়ে ওঠে, তা লক্ষ্য রাখা দরকার।  

অধ্যাপক ড. মো. আওলাদ হোসেন: পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়,গাজীপুর

সম্পর্কিত নিবন্ধ