পঞ্চগড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চা তৈরি এবং মানহীন পাতা সংগ্রহের অভিযোগে মলি টি ফ্যাক্টরি লিমিটেড নামে একটি কারখানার মালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

বুধবার (১৯ মার্চ) বিকেলে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইমরানুজ্জামানের ভ্রম্যামাণ আদালত এই জরিমানা করেন। 

চা বোর্ড জানায়, একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল এলাকার ওই চা কারখানায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় কারখানাটিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চা তৈরি, মানহীন পাতা সংগ্রহ এবং সংগৃহীত পাতায় ফরেন পার্টিকেলের উপস্থিতি খুঁজে পায় চা বোর্ডের কর্মকর্তারা। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারখানার মালিক মখলেছার রহমানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সাথে মুচলেকা নেওয়া হয়। 

আরো পড়ুন:

শক্ত অবস্থানে বিএসটিআই
আমদানি করা অর্ধেক কসমেটিকস পণ্যই ভেজাল ও মানহীন

অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ৮ লাখ টাকা জরিমানা

অভিযানের সময় অন্যদের মধ্যে চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ইনচার্জ আরিফ খান, উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেনসহ পুলিশ ও চা বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, “কারখানাটিতে অনেক শ্রমিক কাজ করেন। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। চা বোর্ড নির্ধারিত মান অনুযায়ী পাতা সংগ্রহ করেনি তারা। এতে জেলায় তৈরিকৃত চায়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এজন্য জরিমানা আদায়ের সাথে কারখানা মালিকের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/নাঈম/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানের শৈশব কি আনন্দে কাটছে 

এখনকার শিশুদের দিকে তাকালে মনে হয়, আমাদের শৈশব অনেক আনন্দেই কেটেছে। শুধু পড়াশোনা করাই তখন শৈশবের মূল বিষয় ছিল না। সেই দুরন্ত শৈশব কেটেছে গোল্লাছুট, ডাংগুলির মতো খেলাধুলা; বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি, নাচগানে আনন্দ করে। সৃজনশীল বিষয়ের প্রতি আমাদের আগ্রহ ছিল সহজাত। আর এ বিষয়গুলোই আমাদের জীবনকে আরও এগিয়ে নিয়েছে বলে আমরা এখন ধারণা করতে পারি। 

অথচ আমাদের শিশুরা কি আমাদের মতো শৈশব কাটাতে পারছে? আমরা আশপাশের শিশুদের দিকে তাকালেই এ প্রশ্নের উত্তর পাব। তাদের সঙ্গে কথা বললে এই প্রশ্নটি আরও ভালোভাবে অনুধাবন করা সম্ভব। আমাদের শিশুরা এখন কেমন যেন ক্লান্ত! বই আর ক্লাসের চাপে যেন পিষ্ট! বয়সের তুলনায় অনেক বড় সিলেবাস, এর সঙ্গে যুক্ত কোচিং বা হাউস টিউটরের চাপ; অভিভাবক, প্রতিবেশী ও সমাজের ভালো ফলের প্রত্যাশা, সবসময় সবার আগে থাকার তাড়না আমাদের শিশুদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা এখনই ভেবে দেখতে হবে।

কেন আমাদের শিশুদের জীবন থেকে সুখ হারিয়ে গেল; তারা কীভাবে তাদের শৈশবকে আনন্দময় করে তুলতে পারে; কীভাবে আমরা তাদের সেই সুখ বা আনন্দের দিকে নিয়ে যেতে পারি– এখন এটিই আমাদের ভাবনার বিষয় হওয়া উচিত। 

প্রতিবছর ২০ মার্চ ঘটা করে আমরা আন্তর্জাতিক সুখ দিবস উদযাপন করি। এবারও ‘কেয়ারিং অ্যান্ড শেয়ারিং’– এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি আমাদের শিশুদের কথা ভেবেছি? পড়াশোনার নাম করে তাদের মধ্য থেকে যেন আনন্দই হারিয়ে গেছে! অনাগত কঠিন দিনের মুখোমুখি হলে তাদের অবস্থা কেমন হবে, তা এখন ধারণাও করা যাচ্ছে না। অন্তত এই দিবসটি সামনে রেখে হলেও আমাদের উচিত এই শিশুদের জীবনকে রঙিন ও আনন্দময় করে তোলার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। আর তা এই শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে থেকেই করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিবেশী সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 

এ কথা এখন সব শিক্ষকই স্বীকার করবেন, শিশুদের যথাযথভাবে বিকশিত করতে হলে পাঠবহির্ভূত কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, নাচ-গান, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, বিতর্ক– এগুলো যে শিক্ষার্থীর যথাযথ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়– এটা এখন সবাই জানেন। আর এই বিষয়কে আমরা গ্লেনফেস্ট, গ্লেনজিউর ও রকফেস্টের মতো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শৈশবকে আরও বেশি উজ্জীবিত করতে হলে, শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক বৈশ্বিক ধারণার সঙ্গে পরিচিত করাতে হলে বা তাদের আগামীর বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে নতুন ভাষা শিক্ষা এবং এআই, রোবটিকস বা প্রোগ্রামিং শেখার কোনো বিকল্প নেই। 

শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা শুধু শারীরিক ফিটনেস বাড়ায় না। এটি তাদের মধ্যে নেতৃত্বের মনোভাব গড়ে তোলে; দলগত কাজের দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় আমাদের শিশুদের আনন্দ কমে গেছে। 

আমরা যদি সত্যিই শিশুর জন্য সুখ ও আনন্দ নিশ্চিত করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।

স্কুল ও পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের জন্য খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা যেন তাদের জন্য কোনো বোঝা নয়, বরং আনন্দের বিষয়ে পরিণত হয়। যেন তাদের শৈশবেও এমন কিছু স্মৃতি তৈরি হয়, যা তাদের আগামী দিনের পথচলায় অমিত উদ্দীপনা হিসেবে শক্তি জোগাবে; তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ, তাদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করাই যেন আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হয়ে ওঠে। 

অম্লান কে সাহা: প্রিন্সিপাল, গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা
amlan.saha@uttara.glenrich.edu

সম্পর্কিত নিবন্ধ