ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চরিত্র সমুন্নত রাখতে চরমপন্থা ও ধর্মীয় উগ্রবাদী অপশক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বান জানান।

তারেক রহমান বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে উগ্রবাদী জনগোষ্ঠী ও পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি দেশে আবার গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে। অপর দিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশ ইমেজ সংকটে পড়তে পারে।

আজ বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথাগুলো বলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে এ ইফতারের আয়োজন করে দলটি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গণহত্যাকারী পলাতক মাফিয়া চক্রকে যেকোনো মূল্যে বিচারের মুখোমুখি করার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সোচ্চার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা, এমনকি দু-একটি রাজনৈতিক দলকেও জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে ইদানীং কিছুটা ভিন্ন সুরে কথা বলতে শোনা যায়। জনপ্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে অকারণে সময়ক্ষেপণের চেষ্টা হলে, সেটি জনমনে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।

ইফতার মাহফিলে বিভিন্ন দরের রাজনীতিবিদেরা যোগ দেন। রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাব, ১৯ মার্চ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন গণত ন ত র ক র জন ত ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য বিভ্রান্তিকর: প্রেস উইং

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (ডিএনআই) প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ‌‘নিপীড়ন ও হত্যা’ এবং দেশে ‘ইসলামি সন্ত্রাসীদের হুমকির’ বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা বিভ্রান্তিকর বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, গ্যাবার্ডের বক্তব্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ্য করেছি, যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ‘নিপীড়ন ও হত্যার’ শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থি খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা।

সোমবার ভারতের এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন’ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তুলসী গ্যাবার্ড যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বৈশ্বিক একটি সম্মেলনে অংশ নিতে নয়াদিল্লি সফরে যান তিনি। তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বব্যাপী ইসলামপন্থি সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করার জন্য মনোনিবেশ করেছে এবং এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর নিপীড়ন, হত্যা এবং নির্যাতন মার্কিন সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়।

এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, ‘বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত। পাশাপাশি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।’ গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ বা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যে পুরো বাংলাদেশকে অন্যায্য ও অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

বিবৃতিতে সরকার জানিয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবে এটি ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক সংস্কার এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতার মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছে। বাংলাদেশকে ভিত্তিহীনভাবে ‘ইসলামিক খিলাফত’ এর সঙ্গে যুক্ত করার অর্থ হলো বাংলাদেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের কঠোর পরিশ্রমকে খাটো করে দেখা। যারা শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।  বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসলামিক খিলাফত’ ধারণার সঙ্গে যুক্ত করার এ প্রচেষ্টাকে বাংলাদেশ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখ করে– রাজনৈতিক নেতা এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উচিত সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য করার আগে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখা এবং ক্ষতিকর গৎবাঁধা ধারণা ও ভীতি ছড়ানো বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উস্কে দেওয়ার মতো কোনো কিছু বলা থেকে বিরত থাকা। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে যৌথ বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে বাংলাদেশ সমর্থন করে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তব তথ্য ও সব দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপ অংশগ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বলেও ওই সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন তুলসী গ্যাবার্ড। বাংলাদেশে ‘ইসলামী চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদের’ উত্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা সবেমাত্র শুরু হচ্ছে, তবে এটি এখনও উদ্বেগের একটি মূল বিষয়।’ 

তিনি ইসলামী খেলাফতের আদর্শ এবং বিশ্বব্যাপী চরমপন্থি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো কীভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে, তা নিয়ে কথা বলেছেন। গ্যাবার্ড বলেন, ইসলামী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা একই মতাদর্শ এবং উদ্দেশ্যের দিকে পরিচালিত– যা একটি ইসলামী খেলাফতের মাধ্যমে শাসন করা। এটি স্পষ্টতই অন্য যে কোনো ধর্মের মানুষকে প্রভাবিত করে। তারা সন্ত্রাস এবং অত্যন্ত সহিংস উপায়ে এটি বাস্তবায়ন করতে চায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ধরনের মতাদর্শকে চিহ্নিত এবং পরাস্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি একে ‘উগ্র ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’ বলে অভিহিত করেন এবং এর উত্থান বন্ধ করতে চান।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য বিভ্রান্তিকর : প্রেস উইং
  • বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার
  • যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য বিভ্রান্তিকর: প্রেস উইং