রাজধানীর কাফরুলে জাতীয় পার্টির (জাপা) ইফতার অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলার পর দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক ভিডিও বক্তব্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায় চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশ একটা সমূহ বিপদের দিকে, ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে উদ্ধার করা যায় ততই ভালো। তার প্রধান ও জরুরি কাজ হলো এই সরকার সরে নতুন করে সরকার আসা।’

জি এম কাদের বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে গেছে, যেটা বর্ণনার অতীত। কারও জানমালের নিশ্চয়তা নেই। মানুষের অসহায়ত্ব দেখে দুঃখ করা ছাড়া কিছু করার নেই। একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করে এখানকার মানুষ বেঁচে আছে। তিনি বলেন, সরকারের প্রধান দায়িত্বই ছিল মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। সেখানে তারা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে, পুলিশকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। পুলিশকে কার্যকর করার ব্যবস্থা না করে এখন দেশটাকে আগুনের মুখে ফেলে দিচ্ছে। কেউ এখানে নিরাপদ না।

অন্তর্বর্তী সরকারের কথা উল্লেখ করে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওনারা যখন পারছেন না তখন ওনাদের ছেড়ে দিয়ে যাওয়া উচিত। যদি অন্য কেউ পারে, ভালো করে, তাহলে দেশের মানুষ রক্ষা পাবে। ওনারা যত তাড়াতাড়ি চলে যান, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।’

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার কথা উল্লেখ করে এগুলোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দোষারোপ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘ওনারা দেশকে বিভক্ত করছেন, দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছেন। হিংসা, প্রতিহিংসাই এখন রাজনৈতিক চর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটা শ্রেণির মানুষকে—যারা একটু উগ্রপন্থী এবং যারা ইসলামিস্ট উগ্রপন্থী এবং যারা রক্ষণশীল, তাদের এক করেছেন। বাকি সব উদারপন্থী মানুষকে তারা ফ্যাসিবাদের দোসর এবং ফ্যাসিবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে রাজনীতি থেকে বের করে দিচ্ছেন।’

‘নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে’

আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জি এম কাদের বলেন, ‘এই সরকার যে নির্বাচন নির্বাচন করছে, আমি মনে করি, এটা সম্পূর্ণভাবে একটা অকার্যকর সরকার। কোনোখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন হবে। তাদের তেমন সক্ষমতা নেই। একইভাবে বলতে হয়, তাদের সেরকম কোনো নিরপেক্ষতাও নেই। তারা অলরেডি আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করছে। আমাদের মিছিল-মিটিং করতে দিচ্ছে না। ইফতার পার্টি পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না। সবখানে আমাদের বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সেখানে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কতটুকু সুফল পাব?’

অন্তর্বর্তী সরকার তাদের নিজস্ব কিছু মানুষ এবং দলকে বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সরকারে না থাকার পরও তারা সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, রাজনীতি করে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সঠিক নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। আমরা সে জন্যই মনে করি, এই সরকারের চলে যাওয়া উচিত। ওনারা দেশ চালাতে পারছেন না, ওনারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবেন না।’

সংস্কার প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, সংস্কারের নামে ওনারা যে গান তুলেছেন, মনে হচ্ছে ওনারা সবাই বেশি করে ক্ষমতায় থেকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধ করা, নিজেদের দলকে শক্তিশালী করা—এটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। আইনশৃঙ্খলার অবনতিটাকে এক্সকিউজ (অজুহাত) হিসেবে দেখিয়ে ওনারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা সংস্কারের কাজে আছেন, তাঁরা অত্যন্ত জ্ঞানীগুণী মানুষ, লেখাপড়া ভালো—সবই আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু একটা কথা বলতেই হবে। ওনাদের বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে কোনো রকম ধারণা নেই। বাংলাদেশে রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হয়, রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হয়, সে সম্পর্কে বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে তাঁরা যে প্রস্তাব দেবেন, সেটা বাস্তবসম্মত হবে না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এম ক দ র সরক র র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ইবাদতের অংশ: বিএনপি নেতা শামসুর রহমান

বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ইবাদতের অংশ। তিনি বলেন, ঈদ এলেই ঘরমুখী মানুষ জনদুর্ভোগে পড়েন। অতীতে অনেকে পথে অভুক্ত থেকেছেন, তখন তাঁদের মনের ভেতর থেকে একটি অভিশাপ আসে।

বুধবার ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে পুলিশ বিভাগ, বিআরটিএ এবং ফুলবাড়িয়া-গুলিস্তান বাস টার্মিনাল-সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-মালিকদের এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুর রহমান এসব কথা বলেন। সভায় আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক বলেন, ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া এবং পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত ভাড়া এবং পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। চাঁদাবাজ ও দখলবাজমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরোয়ার হোসেন, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার এনামুল হক, ট্রাফিক বিভাগের ডিসি (মতিঝিল) জালাল উদ্দিন, মালিক সমিতির সাইফুল ইসলাম, আবদুল বাতেন, শ্রমিক ফেডারেশনের আবদুর রহিম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ