নদীতে পানি ভরে খনন, কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়ার আশঙ্কা
Published: 19th, March 2025 GMT
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় পানি ছেড়ে দিয়ে ভরা নলেয়া নদী খনন করার অভিযোগ উঠেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। আর ভরা নদী খনন করলে কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরুর দিকে পানি প্রবাহের মুখে বাধা দেওয়া ছিল। প্রকল্পে অনিয়ম, দূর্নীতি করতেই তারা ইচ্ছেকৃতভাবে পানি ছেড়ে খনন কাজ করছেন। ভেকু (এক্সেভেটর) দিয়ে নদীর সামান্য মাটি কেটে সেগুলো পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে রাখা হচ্ছে। বর্ষা এলে পাড় ভেঙ্গে নদী ভরাটের পাশাপাশি সেই মাটি আবাদি জমিতে পড়বে। নদীর তলদেশ ৬ থেকে ৭ ফিট গভীর করার কথা। কিন্তু পানি থাকার কারণে সেটাও আর বোঝার উপায় নেই। দুই পাড়ের অপরিকল্পিত প্রশস্ততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
নলেয়া নদীকে খাল দেখিয়ে পুনঃখনন কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ‘‘আসলে নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সকল কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নদীকে কেন খাল দেখিয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কাজ করছে, তা আমার বোধগম্য নয়। জেলার তালিকাভুক্ত ২৩টি নদীর একটি নলেয়া নদী। নদী না বলে খাল বললে এর পরিচয় বিপন্ন হবে।’’
আরো পড়ুন:
সুগন্ধা নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবি, শিশু নিখোঁজ
আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে ‘নরসুন্দাকে বাঁচাতে প্রাণের আকুতি’
কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে গভীর নলকূপ পূনর্বাসন ও স্থাপন, বিদ্যুতায়ন ও নালা নির্মাণ, ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ, কৃষি ব্যবস্থার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ, পানি বিতরণ ও প্রি-পেইড মিটার স্থাপন, চারারোপণ, অকেজো নলকূপ সচলকরণ, পুকুর পূনঃখনন, খাল খননসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
গাইবান্ধা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলায় খাল খনন কাজ হাতে নেয় বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। উপজেলার নলেয়া নদীর ফরিদপুর ইউনিয়নের মহেষপুর মাঝিপাড়া থেকে শুরু করে একই উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের কুঞ্জ মহিপুর ব্রিজের শেষ মাথা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার (৯.
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের কুঞ্জ মহিপুর এলাকার নলেয়া নদীর ১০ কিলোমিটার অংশে খনন কাজ করছে রংপুর, নওগাঁ, রাজশাহী ও পাবনার ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার পাশে একসঙ্গে পাঁচটি ভেকু (এক্সেভেটর) দিয়ে নদী খননের কাজ চলছে। কিছুক্ষণ আগেই শুকনো নদীটিতে উজান থেকে পানি আসছে। সেই পানিতে নিমিষেই ভরে যাচ্ছে নাব্যতা হারানো এই মরা নদী। বোঝাই গেল কিছুক্ষণ আগেও শুকনো ছিল নদীর তলদেশ। সদ্য পানি ছেড়ে দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। দেখতে দেখতে পানি বুক সমান। আর এই পানির মধ্যে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। খননের কাদা মাটি পাড়ে এবড়োখেবড়ো করে রাখা হচ্ছে।
খনন কাজ শেষ করা কিছু অংশে গিয়েও দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব এলাকাতেও কোনোরকমে খনন কাজ করা হয়েছে। দুই পাড় কোথাও সরু, কোথাও প্রশস্ত। কিছু জায়গায় বেশি সরু এবং অগভীর। অমসৃণ পাড় দিয়ে হেঁটে যাওয়াও মুশকিল।
সাদুল্লাপুর উপজেলার নলেয়া নদীর তীরবর্তী বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, পানি ছেড়ে নদী ভরে কাজ করছে ঠিকাদার। নিয়ম অনুযায়ী কাজ না করাটা তো ঠিক নয়। কোনখানে কতটুকু গভীর করছে, সেটা তো বোঝা যাচ্ছে না। পানি ছেড়ে দিয়ে লোক দেখানো কাজ করে বিল নিয়ে চলে যাবে ঠিকাদার। দেখার কেউ নেই।
কুঞ্জ মহিপুর গ্রামের কৃষক মোত্তালেব মিয়া জানান, খননে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। মাটি কাটার শুরুতে পানি প্রবাহের মুখে বাঁধ দেওয়া ছিল। পরে বাঁধ কেটে দিয়েছে ঠিকাদারের লোকজন। এখন আর নদীর মাঝের মাটি কাটা লাগবে না। শুধু দুই পাড়ের মাটি কেটে কোনোরকম কাজ শেষ করে চলে যাবে। এভাবে কাজ করলে সরকারের কোটি টাকা গচ্চা যাবে। জনগণের কোনো উপকারে আসবে না।
স্থানীয় কৃষক কুরবান আলী বলেন, ‘‘এলাকায় কৃষকরা পানি সংকটে আছে। আমার ৭০ শতাংশ জমির মধ্যে অর্ধেক নদীর পানির আওতায় পড়েছে। সবার স্বার্থে আমি জমিতে চাষ করিনি। কিন্তু তারপরও পানি ছেড়ে দিয়ে খনন করবে কেন? নদীর দুই পাড়ের অনেক জায়গায় দূরত্ব কম। এভাবে তো খোড়া ঠিক হবে না। এই কৃষকের পানির জন্যই তো এত টাকা ব্যয় তাই না।?’’
সালাম মিয়াসহ স্থানীয় কয়েকজন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘চালাকি, সবি চালাকি। পানির মধ্যে তো কিছু দেখা যায় না। ওরা অনুমান করে খালি পাড় খুড়ে যাচ্ছে।’’
তাদের দাবি, খনন প্রকল্পের কাজগুলো সঠিকভাবে হয়েছে কি-না, সেটা নিশ্চিত করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানান, পানি প্রবাহ বন্ধ রেখে শুকনো অবস্থায় খাল বা নদী খনন কাজ করতে হয়। পানি ছেড়ে দিলে তো নদীর তলদেশের কোথায়, কতটুকু খনন করা হচ্ছে, তা বোঝা যাবে না। নদী বা খাল, যেটাই খনন করা হোক, তা শুকনো অথবা শুকনো অবস্থা সৃষ্টি করে করতে হবে। তা না করা হলে সঠিক খনন হবে না।
১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি নওগাঁ জেলার এনায়েত পুরের দয়ালের মোড়ের মেসার্স খান ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটির দুটি আইডির বিপরীতে কাজ করেছেন মসলেম ও আইয়ুব আলী নামের দুই ঠিকাদার। কাজের অগ্রগতি রিপোর্ট অনুযায়ী তারা শতভাগ কাজ শেষ করেছে।
কাজে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার আইয়ুব আলী বলেন, ‘‘আমাদের ১২০০ মিটার অংশে বাঁধ দিয়ে শুকনো অবস্থায় খনন কাজ করেছি। পানিতে তো খনন কাজ করা যাবে না। এই ধরনের অনিয়ম আমাদের অংশে হয়নি।’’
নওগাঁ জেলার আরেক ঠিকাদার আব্দুল মজিদ। তিনিও একাই দুই আইডিতে নদীর ১৬০০ মিটার অংশের কাজ প্রা্য় শেষ করেছেন। কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। তার হয়ে কাজ করেছেন সাজু ও মজিদ নামের দুই ঠিকাদার।
সাজু এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘পানি ছেড়ে দিয়েও কাজ করা যায়। আমার লোক সেখানে (কাজের স্থান) রয়েছে। আপনি যখন এসেছেন, বিকাশ নম্বর দেন, কিছু টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’’
গাইবান্ধা রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘পানি ছেড়ে দিয়ে খনন করা ঠিক হয়নি। আমি ঠিকাদারকে মেজারমেন্ট অনুযায়ী মাটি খনন করতে বলেছি। প্রয়োজনে প্রতিটি জায়গায় মেপে নেব। পানি ছেড়ে কাজ করার বিষয়ে তাদের কাছে জবাব চাওয়া হবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ঠিকাদারকে বলেছি, তারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’’
ঢাকা/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ স দ ল ল প র উপজ ল ক জ শ ষ কর ন ক জ কর উপজ ল র ক জ করছ নদ র ত
এছাড়াও পড়ুন:
এবার ঈদের ছুটি হতে পারে টানা ৯ দিন
পবিত্র ঈদুল ফিতরে এবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য টানা ৯ দিন ছুটি হতে পারে। ঈদ উপলক্ষে আগেই পাঁচ দিন টানা ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। তবে ঈদের আগে ও পরের যে কোনো এক দিন ছুটি দিলে টানা ছুটি মিলতে পারে আট অথবা নয় দিন।
এজন্য আগামী ৩ এপ্রিলও নির্বাহী আদেশে আরও এক দিন ছুটি ঘোষণা করার প্রস্তাব আগামীকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উঠতে পারে। এই প্রস্তাব যদি অনুমোদন হয়, তাহলে এবার ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি পাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করা শর্তে সমকালকে বলেন, ৩ এপ্রিলও নির্বাহী আদেশে ছুটি দেওয়ার প্রস্তাব বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উঠতে পারে। কারণ, নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করা হলে উপদেষ্টা পরিষদে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করতে হয়। বৈঠকে নিয়মিত ছুটির বাইরে বাড়তি ছুটি অনুমোদন হলে প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতর হতে পারে। সম্ভাব্য এই তারিখ ধরে আগেই পাঁচ দিনের ছুটির তারিখ নির্ধারণ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই হিসাবে কাগজপত্রে ২৯ মার্চ শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। কিন্তু নির্ধারিত ছুটি শুরুর আগের দিন ২৮ মার্চ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। একইসঙ্গে একই দিন পবিত্র শবে কদরের ছুটিও। ফলে বাস্তবে ছুটি শুরু হচ্ছে ২৮ মার্চ থেকে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ছুটি শেষে অফিস খোলার কথা ছিল ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। এর পরের দুই দিন আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার। এখন ৩ এপ্রিলও নির্বাহী আদেশে ছুটি হলে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করতে পারবেন সরকারি কর্মকরর্তা–কর্মচারীরা। অবশ্য এই ছুটি শুরুর দুই দিন আগে আছে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ছুটি। পরদিন বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ এক দিন অফিস খোলা থাকবে। ফলে ছুটির সুযোগ আরও বেশি আছে। যারা ব্যক্তিগতভাবে ২৭ মার্চের ছুটি ম্যানেজ করতে পারবেন তাদের টানা ছুটি হবে ১১ দিনের।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, যেসব অফিসের সময়সূচি ও ছুটি তাদের নিজস্ব আইনকানুন দিয়ে চলে (যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক) অথবা যেসব অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের (জরুরি সেবাসংক্রান্ত) চাকরি সরকার অত্যাবশ্যক হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেগুলো নিজস্ব আইনকানুন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে এই ছুটি ঘোষণা করবে। সুযোগ থাকলে ঈদের দু-তিন দিন আগে শ্রমিকদের ছুটি দিতে কারখানার মালিকদের অনুরোধ করেছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।