জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে যাত্রাবাড়ী টু গাবতলী রোডে চলাচলকারী গাবতলী পরিবহনের ১০টি বাস আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত বাস চালক ও স্টাফদের না পেলে বাস ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৯ মার্চ) সকাল থেকে এ বাসগুলো আটক করেন জবি শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতে কল্যাণপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কিরণ কুমার দাসকে মারধর করেন গাবতলী পরিবহনের স্টাফরা। রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে সকাল থেকেই যাত্রাবাড়ী অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে তারা একে একে ১০টি বাস ক্যাম্পাস নিয়ে আসা হয়। অভিযুক্তদের না পেলে কোন বাস ছাড়বে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কিরণ কুমার দাস বলেন, “আমি গুলিস্থান থেকে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার জন্যে গাবতলী পরিবহনের (৮ নাম্বার) বাসে উঠি, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-ব-১১৯৭৫০। শাপলা চত্বরে বাসটি অকারণে ১৫ মিনিট দাঁড়ায়। তখন সন্ধ্যা ৬টা বাজে। বাসে থাকা সবাই বলছিল, বাসটি ছেড়ে দেন, বাসায় গিয়ে ইফতার করব।”

তিনি বলেন, “ড্রাইভারের পিছনে থাকা দুইজন ব্যক্তি ওনাকে (চালক) বারবার বলতে থাকে। আমি কন্টাকটারকে এবং ড্রাইভারকে অনুরোধ করি বাসটি ছেড়ে দিতে। কিন্ত তারা আমার সঙ্গেও তর্কে জড়ায়। তারা বেশি যাত্রী না তুলে বাস ছাড়বে না। তখন আমি সিটের দিকে চলে যাই। কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি ড্রাইভারের সঙ্গে তর্ক করতে করতে নেমে যায়। তার কিছুক্ষণ পরে বাস ছেড়ে দেয়। কল্যাণপুর পৌছানোর আগেই সব যাত্রী নেমে যায়। কল্যাণপুরে আমি নামতে গেলে আমাকে গেটে আটকায় রাখে। অনেক রিকুয়েস্ট করার পরও নামতে না দিয়ে বাস এগোতেই থাকে।”

তিনি আরো বলেন, “অনেক গালিগালাজ করে আমার মানিব্যাগ থেকে ডাবল ভাড়া নিয়ে নেয় এবং কয়েকটা ধাক্কা মারে। আমি গেটের দিকে গিয়ে চিৎকার করলে বাইরে থেকে কিছু মানুষ ভিড় করলে নামতে সক্ষম হই। নামার পর দেখি সবগুলো ওদের লোক। আমি নাকি দাদাগিরি দেখাইছি বলে কয়েকজন গায়ে হাত দেয় এবং কলার ধরে টানাটানি করে।”

“জগন্নাথের পরিচয় দিলে বলে আমি ‘স্টুডেন্ট না সন্ত্রাস’ বলার সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে মাথায় কষে চড় দেয়। ১৫-১৬ বছর বয়সী কয়েকজন ছেলে কাউন্টারের পিছনে নেওয়ার জন্যে টানতে থাকে। আমি কোনো রকমে একটা বাইকে রাইড শেয়ার নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করি,” যুক্ত করেন কিরণ কুমার।

শিক্ষার্থীরা জানান, ওই বাসের মালিকপক্ষ আগামী রবিবার (২৩ মার্চ) আসতে চেয়েছে। এজন্য গাবতলী পরিবহনের আটক বাসগুলো ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মালিকপক্ষ আসলে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, “আমার কোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের পছন্দ হয় না। তাই আমি এখন কিছু বলবো না। বাস মালিক কর্তৃপক্ষ আগামী রবিবার আসবে। তাদের সঙ্গে বসার পর শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেবে, কি করবে তারা।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর বহন র গ বতল

এছাড়াও পড়ুন:

‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় নারী উদ্যোক্তা

ঢাকার শপিং মল থেকে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেনকে  পুলিশে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এক নারী উদ্যোক্তা। এ ঘটনায় আজ বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন তিনি।

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

পুলিশ সূত্র জানায়, বর্তমানে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার একটি খুনের মামলায় সাজ্জাদ সাত দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

রুমা আক্তার নামের ওই নারী উদ্যোক্তা বাদী হয়ে করা মামলায় সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন, পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান, হাবিব খানসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা হলেন গ্রেপ্তার সাজ্জাদের সহযোগী মো. রায়হান, মো. হেলাল, মো. হাসান, মো. আরমান, মো. ইমন, মো. বোরহান, মো. রাজু ও মো. দিদার। রুমা আক্তারের বিউটি পারলার ও বুটিক হাউস রয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত শনিবার ঢাকায় একটি শপিং মলে কেনাকাটা করতে যান নারী উদ্যোক্তা রুমা আক্তার ও তাঁর স্বামী। সেখানে সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রীকে দেখতে পান। পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত সন্ত্রাসীকে দেখে চিনতে পেরে আশপাশের লোকজনকে জড়ো করে আটক করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সাজ্জাদকে আটক করে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যায়।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার পর থেকে তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে বাদীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। এ ছাড়া বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী খান ও হাবিব খান মুঠোফোনে বাদীকে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন গত মঙ্গলবার। তাঁরা বাদীর কাছে এক কোটি টাকা চাঁদাও দাবি করেন। নইলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।

জানতে চাইলে সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কারও নাম ধরে হুমকি দিইনি। সেদিন গত শনিবার ঢাকার শপিং মলে আমার স্বামী ও আমাকে মারধর করেছেন রুমা আক্তার। পরে আমি তেজগাঁও থানার ওসিকে ফোন করি।’

এর আগে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর তামান্না শারমিনের আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। এতে তামান্নাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে (স্বামী) নিয়ে আসব। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’

মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন মামলার বাদী রুমা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পলাতক সন্ত্রাসীকে দেখে লোকজন জড়ো করে সচেতন নাগরিক হিসেবে ধরিয়ে দিয়েছি। এখন আমি আমার পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

এর আগে সাজ্জাদকে ধরতে গত ৩০ জানুয়ারি পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। এর আগের দিন ফেসবুক লাইভে এসে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকে পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন সাজ্জাদ হোসেন।

পুলিশ জানায়, সাজ্জাদ হোসেন বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১৭টি মামলা রয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরে আনিস, কায়সার ও আফতাব উদ্দিন নামের তিন বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার মামলার আসামি তিনি।

জানা গেছে, গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসের শুরুতে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। এতে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ