শেখ হাসিনা যাওয়ার পর রাসেলস ভাইপার সাপও চলে গেছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
Published: 19th, March 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পর রাসেলস ভাইপার সাপও চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের এখানে (সেমিনারে) একটা জিনিস বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছে। তা হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দুর্নীতি। আমি যখন এ কথাগুলো শুনি, তখন আমার রাসেলস ভাইপার সাপের কথা মনে হয়। শেখ হাসিনা যাওয়ার পর এই সাপটাও চলে গেছে। আমি জানি না বিষয়টা এমন কেন।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে ‘বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণ: এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
গত বছর দেশে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে একধরনের ভীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। এ সাপের কামড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সাপ নিয়ে নানা ধরনের প্রচারণা ছিল।
দেশে দুর্নীতি কমছে দাবি করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ পয়সাটয়সা নেয় না। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে যত উপদেষ্টা রয়েছেন, তাঁরা কেউই টাকার দিকে তাকিয়ে নেই। এই মানুষগুলো এখানে টাকার জন্য আসেননি। আমাদের কাজের সম্পর্ক বেশ স্বচ্ছ। আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখি। আমরা একসঙ্গে কাজ করছি, এটাও দুর্নীতি কমার একটি লক্ষণ।’
শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, আপনারা জানেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা চুরি হয়ে চলে গেছে। এখন তো দেশ থেকে এই পরিমাণ টাকা চুরি হচ্ছে না। তবে দুর্নীতি শেষ হয়ে যায়নি। শেষ হওয়া বেশ কঠিন। তিনি আরও বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এই উদ্যোগগুলো চালুর কারণে দুর্নীতি কমেছে। সামনে আরও কমবে।’
রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির প্রশাসক মো.
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বাজারে স্বস্তি আছে। যদিও কিছু পণ্যে অস্বস্তি আছে। মূল সমস্যা ছিল সরবরাহকেন্দ্রিক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে আমরা বাজারে স্বস্তি ফেরানোর কাজটি করেছি। বর্তমানে চালের দামে সমস্যা দেখতে পাচ্ছি।’
স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) থেকে উত্তরণে চ্যালেঞ্জ থাকলেও সুযোগ অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ বাধ্যতামূলক। এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার বিষয়ে আত্মস্থ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে, ব্যবসায় কোনো দেশ আমাদের বন্ধু নয়, সবাই প্রতিযোগী। এটা মেনে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণে চ্যালেঞ্জ থাকলেও সুযোগ অনেক বেশি।
মূল প্রবন্ধে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পথ মসৃণ করতে কৌশল তৈরি করেছে সরকার। এখন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে নিজস্ব অর্থায়নে কোথায় কোথায় চ্যালেঞ্জ আসবে তা খুঁজে বের করা দরকার। সুযোগ-সুবিধা আদায়ে সরকারের সঙ্গে দর–কষাকষির জন্য সংগঠনে আলাদা বিভাগ করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে পণ্য রপ্তানিতে কোন দেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে কিংবা সরকার কী প্রণোদনা দেবে, এসব বিষয় থেকে ব্যবসায়ীদের বেরিয়ে আসতে হবে।
গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘দেশে এখন প্রতিবছর ২২ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা দরকার। তার জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ কোম্পানি যেভাবে বড় হচ্ছে, তা দিয়ে এই বিপুল কর্মসংস্থান সম্ভব না। এ জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের প্রয়োজন হবে। দেশের বিভিন্ন খাতে এফডিআই বিরোধী লবি গড়ে উঠেছিল। সেটার খেসারত এখন আমরা দিচ্ছি।’
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরবরাহ ও উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে হলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশকে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো পণ্য বৈচিত্র্যকরণ। এ ক্ষেত্রে কোন কোন পণ্য ও খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার তা খুঁজে বের করে অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ণ জ য উপদ ষ ট র রহম ন ব যবস য় এলড স সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আটাবের কমিটি বাতিল করে প্রশাসক বসানোর দাবি সংস্কার পরিষদের
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) বর্তমান কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে আটাব সংস্কার পরিষদ।
পরিষদের পক্ষ থেকে এর আহ্বায়ক গোফরান চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আলাদা চিঠি দিয়ে এই দাবি জানান। তাতে বলা হয়, আটাবের এই কমিটি ভৌতিক ভোটার তালিকা করে, কেন্দ্র দখল করে, জাল ভোট দিয়ে এবং প্রতিপক্ষকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে বারবার নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। তাই এ কমিটিকে আজীবনের জন্য যেকোনো বাণিজ্য সংগঠনে নিষিদ্ধ করার দাবিও তোলা হয়েছে।
আটাব সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক গোফরান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আটাবের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আবদুস সালাম আরেফ কী কী ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আবেদনে আমরা সেসব বিষয় তুলে ধরেছি। সভাপতি হিসেবে তাঁর যেসব কাজ করার কথা নয়, তিনি সেসব কাজ করেছেন। তাই আমরা বর্তমান কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের কথা বলেছি।’
মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, আটাবের বর্তমান কমিটির সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা বাহাউদ্দিন নাসিমের আত্মীয় পরিচয়ে সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের সহায়তায় ২০১১ সাল থেকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন দিয়ে দুইবার মহাসচিব হন। বর্তমানে আটাবের সভাপতির পদ দখল করে আছেন। আটাবের মহাসচিব আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এই পদে আসেন। বর্তমান কমিটি ‘আটাব অনলাইন’ নামের একটি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা বাণিজ্য সংঘ বিধি ও আটাব সদস্যদের স্বার্থের পরিপন্থী। আটাব অনলাইনকে ব্যবহার করে সভাপতি ও মহাসচিবের প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু করে আটাবের টাকা আত্মসাৎ–বেহাত করা হয়েছে। পরে আটাব অনলাইনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তাঁরা শেয়ারহোল্ডারদের কোনো টাকা ফেরত দেননি।
এ বিষয়ে আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ প্রথম আলোকে বলেন, আটাবের নির্বাচন স্বচ্ছ ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়েছে। নির্বাচন করে যাঁরা হেরেছেন, তাঁরা ভোটে কারচুপির কথা ছড়াচ্ছেন। তাঁর দাবি, বিমানের টিকিটের দাম বাড়াতে না পেরে একটি পক্ষ আটাবের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে।