আলীকদমে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে চারজন গ্রেপ্তার
Published: 19th, March 2025 GMT
বান্দরবানের আলীকদমে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে চার তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার বিকেল চারটার দিকে আলীকদম থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ওই কিশোরী গত শুক্রবার ধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হুমকির কারণে কিশোরীর পরিবার মামলা করেনি। আজ কিশোরী নিজে বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে আলীকদম থানায় মামলা করে। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজন হলেন আবদুল করিম (১৯), মো.
মামলার এজাহারে বলা হয়, শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে নদীতে গোসল করে ফেরার পথে চার আসামি তাকে পালা করে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে কিশোরী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফেরার পর মায়ের কাছে বিষয়টি জানায়। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পরিবারকে ঘটনাটি জানালে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকেন। এ জন্য আতঙ্কে এত দিন মামলা করতে পারেনি কিশোরীর পরিবার। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকায় কিশোরী নিজের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে থানায় মামলা করেছে বলে এজাহারে জানায়।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা জহির উদ্দিন জানান, কিশোরী নিজে বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আসামিদের অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার কিশোরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হবে বলে ওসি জানান। এ ছাড়া কিশোরী নিজেই বাদী হয়ে মামলা করায় আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর
এছাড়াও পড়ুন:
দুটি মামলার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে ২০২০ সালের দলবদ্ধ ধর্ষণকাণ্ড এবং চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে। উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সোমবার শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম লিটন জানান, বিগত দিনে উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার লিভ টু আপিল করেছিল। তিন বছর ধরে বিচার কাজ বন্ধ রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে আপিল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ফলে মামলা দুটি বিচার ট্রাইব্যুনালে চলতে কোনো বাধা নেই।
দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা মনিটরিং কমিটি। পরে সেই সিদ্ধান্তের অগ্রগতি না হওয়ায় উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন নির্যাতিতার স্বামী। ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির কথা থাকলেও তা হয়নি। উল্টো উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হয়।
উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের লিভ টু আপিলকে সরকারের বিচার না চাওয়ার পরিচয় বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। দীর্ঘদিন পর সরকার লিভ টু আপিল প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে এক সঙ্গে চলতে আপত্তি থাকল না। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জৈনপুর এলাকার এক যুবক তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদা দাবি ও ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে যায়। স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সারাদেশে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো– বালাগঞ্জের চান্দাইপাড়ার সাইফুর রহমান, হবিগঞ্জের বাগুনীপাড়ার শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, শান্তিগঞ্জের তারেকুল ইসলাম তারেক, জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর, দিরাই বড়নগদীপুরের রবিউল ইসলাম, কানাইঘাটের লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) মাহফুজুর রহমান মাসুম, নগরীর গোলাপবাগ এলাকার আইনুদ্দিন ও বিয়ানীবাজারের নটেশ্বর গ্রামের মিজবাউল ইসলাম রাজন।
এদের মধ্যে বিএ কোর্সের (অনিয়মিত) ছাত্র সাইফুর রহমান, ইংরেজি স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত বর্ষের শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, বিএসএস স্নাতক পাস কোর্সের রবিউল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত বর্ষের মাহফুজুর রহমানের ছাত্রত্ব বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। অন্যরা বহিরাগত এবং সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তারের পর সবাই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
একই বছরের ৩ ডিসেম্বর আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন শাহপরাণ থানার পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। চার্জশিটে তিনি উল্লেখ করেন, আসামি সাইফুর, রনি, তারেক, অর্জুন, রাজন ও আইনুল ওই নারীকে ধর্ষণ করে। রবিউল ও মাসুম ধর্ষণকারীদের সহযোগিতা করে।
২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি বিভাগীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলার বিচার শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে ধর্ষণ ও চাঁদাবাজি মামলা একসঙ্গে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করার নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত।