২৮৬ দিন পর পৃথিবীতে ফিরলেন সুনীত উইলিয়ামস
Published: 19th, March 2025 GMT
২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছেন নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। ভারতীয় সময় বুধবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার সমুদ্রে অবতরণ করে তাদের মহাকাশযান।
মহাকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সুনীতাদের এই প্রত্যাবর্তন নিরাপদে হয়েছে বলে জানিয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তাদের সঙ্গে একই মহাকাশযানে ফিরেছেন নাসার নিক হগ এবং রুশ নভোচারী আলেকজ়ান্ডার গর্বুনভ। গত বছর জুন মাসে সুনীতারা মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে (ভারতীয় সময়) সুনীতাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) ছাড়ে স্পেসএক্সের ড্রাগন যান। বুধবার আটলান্টিক মহাসাগরের ফ্লোরিডা উপকূলে মহাকাশচারীরা নিরাপদে অবতরণ করেন। তাদের আনার জন্য পৌঁছে গিয়েছিল মার্কিন নৌবাহিনীর বোট।
পরে মডিউলসহ সুনীতাদের জাহাজের কাছে নিয়ে আসে নৌবাহিনী। মহাকাশচারীদের হাইড্রোলিক পদ্ধতিতে তোলা হয় জাহাজে। সেখানে ড্রাগন ক্যাপসুলের দরজা খোলার পরে প্রথমে বেরিয়ে আসেন নিক হগ। তার প্রায় ৫ মিনিট পরে ভারতীয় সময় ভোর ৪টা ২২ মিনিটে হাসিমুখে বেরিয়ে আসেন সুনীতা উইলিয়ামস।
নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে এলেও এখনই নিজেদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না মহাকাশচারীরা। তাদের রাখা হবে ক্রু- কোয়ার্টারে। সেখানেই বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তার পরে সুনীতা ও বুচের সঙ্গে দেখা করার সম্মতি মিলবে।
গত বছর জুন মাসে বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশে করে অভিযানে গিয়েছিলেন সুনীতা ও ব্যারি। অভিযান আট দিন চলার কথা ছিল। কিন্তু মহাকাশযানটি বিকল হওয়ায় মহাকাশে আটকে পড়েন সুনীতারা। মহাকাশযানটিকে সারিয়ে পৃথিবীতে ফেরত আনা হলেও, ওই যানে সুনীতাদের ফেরোনার ঝুঁকি নেয়নি নাসা। তাদের ফিরিয়ে আনতে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্স-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার পরও বার বার পিছিয়ে যায় সুনীতাদের ফেরানোর অভিযানে। শেষ পর্যন্ত আটদিনের জায়গায় তাদের মহাকাশে কাটাতে হয় ২৮৬ দিন।
মহাকাশচারীদের অবতরণের পরে নাসার পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার উপ সহযোগী প্রশাসক জোয়েল মনটালবানো ও কার্যক্রম সমন্বয় ব্যবস্থাপক বিল স্পিচ বলেন, “নাসার গর্বের সঙ্গীরা নিরাপদ ভাবে অবতরণ করেছেন। ৯ মাসে ৯০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ১৫০টি বিষয়ের গবেষণা করা হয়েছে।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নয় মাস পর মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরলেন নাসার দুই নভোচারী
প্রায় নয় মাস মহাকাশে থাকার পর, অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন নাসার দুই নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়ামস। তাদের স্পেসএক্স ক্যাপসুলটি দ্রুত ও উত্তপ্ত পুনঃপ্রবেশের পর চারটি প্যারাশুটের সাহায্যে ফ্লোরিডার উপকূলে নিরাপদে সমুদ্রে অবতরণ করে।
অবতরণের সময় ক্যাপসুলের চারপাশে একটি ডলফিনের ঝাঁক ঘুরছিল। উদ্ধারের পর, নভোচারীরা হাসিমুখে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। তাদের সঙ্গে ছিলেন আরও দুই ক্রু সদস্য, নাসার নভোচারী নিক হেগ ও রুশ মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গরবুনভ।
প্রথমে উইলমোর ও উইলিয়ামসকে মাত্র আট দিনের জন্য বোয়িং-এর স্টারলাইনার মহাকাশযানে পাঠানো হয়েছিল। তবে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এটি আইএসএস-এ (আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন) রাখা হয় এবং নিরাপত্তার কারণে তাদের ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
ফলে, তারা পরবর্তী উপলভ্য মহাকাশযানের জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য হন। সেপ্টেম্বরে স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুল আইএসএস-এ পৌঁছানোর পর, তাদের জন্য আসন খালি রাখা হয়, যা অবশেষে তাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে।
নাসার ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো বলেন, "তাদের ধৈর্য এবং অভিযোজন ক্ষমতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এটি একটি অবিশ্বাস্য যাত্রা ছিল।"
১৭ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার পর, পৃথিবীতে ফিরে আসার পর নভোচারীদের স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়, যা দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রার পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে তাদের শারীরিক অবস্থার নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হবে।
ব্রিটিশ নভোচারী হেলেন শারম্যান বলেন, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, তারা অবশেষে পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। যেসব উৎসব ও মুহূর্ত তারা মিস করেছেন, এখন হয়তো সেগুলো পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
পৃথিবীতে ফেরার আগে এক সাক্ষাৎকারে সুনি উইলিয়ামস বলেন, আমি আমার পরিবার, আমার কুকুর এবং সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
দীর্ঘ মহাকাশ ভ্রমণ মানুষের শরীরে নানা প্রভাব ফেলে। হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, পেশি দুর্বল হয় এবং রক্ত সঞ্চালনে পরিবর্তন আসে।
ব্রিটিশ নভোচারী টিম পিক বলেন, পৃথিবীতে ফিরে আসার পরের দুই-তিন দিন শরীরের জন্য কঠিন হয়। মহাকাশে ব্যায়াম করা জরুরি, কারণ এটি মহাকাশের জন্য নয়, বরং পৃথিবীতে ফেরার জন্য প্রয়োজন।
তবে, উইলমোর ও উইলিয়ামস তাদের মিশনের অতিরিক্ত সময়কে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়েছেন। তারা বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা করেছেন, মহাকাশে হাঁটাহাঁটি করেছেন এবং এমনকি সান্তা ক্যাপ ও রেনডিয়ার হ্যাট পরে ক্রিসমাস উদযাপন করেছেন।
অবশেষে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারা পৃথিবীতে ফিরেছেন। এখন তাদের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো—পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো এবং শারীরিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা।