‘৭৩০ কোটি টাকার’ প্রবাসী আয় নিয়ে যা বললেন প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকী হাসান
Published: 19th, March 2025 GMT
বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় হিসেবে ‘৭৩০ কোটি টাকা’ দেশে আনা প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান বলেছেন, বৈধ আয়ের অর্থই তিনি দেশে এনেছেন। নিয়ম মেনে সেই অর্থ আয়কর নথিতেও দেখিয়েছেন। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর থেকে তিনি প্রত্যয়ন সনদও পেয়েছেন।
প্রথম আলোর সঙ্গে আজ বুধবার ২০ মিনিটের আলাপচারিতায় এ অর্থ দেশে আনার বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। দেশের বাইরে অবস্থানকারী ফারুকী হাসান আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় নিজ থেকেই প্রথম আলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় তিনি পুরো কীভাবে দেশের বাইরে থেকে এ অর্থ আয় করেছেন এবং কোন প্রক্রিয়ায় তা দেশে এনেছেন, তার বর্ণনা দেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রথম আলোর প্রতিবেদকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন। এ সময় তিনি জানান, প্রতীক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে এই অর্থ দেশে আনা হয়েছে।
আলাপকালে ফারুকী হাসান জানান, তিনি চীনের সরকারি বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের হয়ে এজেন্ট ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চীনের সরকারি বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৫টি জাহাজ কিনেছে। এসব জাহাজ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তিনি এজেন্ট ও পরামর্শক সেবা দেন। তার বিনিময়ে ১৩ বছরে ৭৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ এজেন্ট ও পরামর্শ মাশুল পেয়েছেন। এই আয়ের ওপর চীনে করও পরিশোধ করেছেন। পরে সেই অর্থ প্রবাসী আয় হিসেবে বাংলাদেশে এনেছেন। তবে এ জন্য প্রবাসী আয়ের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা প্রাপ্য হলেও তিনি তা নেননি।
প্রবাসী আয় হিসেবে ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন এক ব্যবসায়ী, সাংবাদিকদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে গত সোমবার এই তথ্য জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। এরপর বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা তৈরি হয়। সাংবাদিকেরাও এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে সাংবাদিকেরা জানতে পারেন বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় হিসেবে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ এনেছেন প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। এ বিষয়ে জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে তিনি নিজে থেকেই প্রথম আলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ফারুকী হাসান জানান, তাঁর নামে দেশে কোনো ব্যাংকঋণ নেই। চীন থেকে তিনি তাঁর আয়ের অর্থ ইস্টার্ন ব্যাংকের হিসাবের মাধ্যমে বৈধভাবে দেশে এনেছেন। একবারে এই অর্থ তিনি দেশে আনেননি। কয়েক বছর ধরে ধাপে এনেছেন। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আনা অর্থে আমি চারটি কারখানা করেছি। এসব কারখানায় প্রায় তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যখন যে বছর আমি এই অর্থ এনেছি, প্রতিবারই এনবিআরের পক্ষ থেকে আমাকে প্রত্যয়ন সনদ দেওয়া হয়েছে। এখন কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। বিদেশে সেবা দিয়ে দেশে অর্থ এনেছি, এটা তো আমার অপরাধ হতে পারে না।’
সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান জানান, তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি কানাডায়ও বসবাস করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার আয় কত, তা আয়কর ফাইলে সব দেখানো আছে। কোনো কিছু গোপন করতে চাইলে আমি তা ফাইলে দেখাতাম না। আমি সিরামিক রপ্তানি করে চারবার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হয়েছি। এখন কেন আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে, এটা বুঝতে পারছি না।’ এখন এনবিআরের দিক থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় এনবিআরের সঙ্গে কথা বলতে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। ২০০১ সালে পাড়ি দেন কানাডায়। পরে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করেন। একে একে গড়ে তোলেন প্রতীক সিরামিক, প্রতীক ডেভেলপার, হোটেল লেক ক্যাসেল, প্রতীক ফুড অ্যান্ড অ্যালাইড, প্রতীক বোন চায়না লিমিটেড, প্রতীক লজিস্টিক, প্রতীক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, চেরি ইন্টারন্যাশনাল।
কানাডার অন্টারিও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। তবে এখন কোনো পদ নেই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে রাজনীতি ছেড়ে পুরোপুরি ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানার পাশাপাশি তিনি বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকেরও উদ্যোক্তা পরিচালক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল র আয় হ স ব প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
এক অঙ্কের ভ্যাট হার চায় ঢাকা চেম্বার
আগামী অর্থবছরে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। একই সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটে এক অঙ্কের অভিন্ন হার নির্ধারণ ও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য আগাম কর কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে অনুষ্ঠিত আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব দেন সংগঠনটির সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এ ছাড়া কৃষি, হিমাগারসহ বেশ কয়েকটি খাতের ব্যবসায়ীরা তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ করা উচিত। ব্যক্তির সর্বোচ্চ কর কমানো ও করজাল বাড়ানোর জন্য এনবিআরের পদক্ষেপ নিতে হবে। বাণিজ্যিক আমদানিতে আগাম কর কমানো এবং ভ্যাটের একক হার করার প্রস্তাব দেন তিনি।
ডিসিসিআইর পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ নির্ধারিত হলেও, বিভিন্ন খাতে তা ১০, ৭ দশমিক ৫, ও ৫ শতাংশ হারে রয়েছে। এতে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। কর রেয়াতের সুবিধা সবক্ষেত্রে নিশ্চিত না হওয়ায় বাড়তি করের বোঝা বহন করতে হচ্ছে। তাই এক অঙ্কের একক ভ্যাট হার করার পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের ভ্যাট ১ শতাংশ নির্ধারণ করা দরকার।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ব্যক্তির কর বেশি হওয়া উচিত। কম হওয়া দরকার কোম্পানির। এবার ব্যক্তির কর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ থাকবে। ভারতেও বেশি। উন্নত দেশে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ। এটাকে কমানো ঠিক হবে না। বরং বাড়াতে হবে। নইলে বৈষম্য কমবে না। পাশাপাশি মানুষের সেবাও নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে মানুষ হাতে কম টাকা রাখবে।
ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে ভ্যাটের একক হার হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভ্যাটহার নিয়ে ব্যবসায়ীরাই এখন ভুগছে। যত ঝগড়া ভ্যাটের বিভিন্ন হারের কারণে। সবাই একমত হলে, কিছুটা কমিয়ে হলেও একক হার করা দরকার। এফবিসিসিআই প্রস্তাব দিলে প্রয়োজনে তাদের জন্য সফটওয়্যারও করা হবে।
সভায় বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ককর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সংগঠনটি বলছে, হিমাগারের মূলধনি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ১, ভ্যাট ১৫, অগ্রিম কর ৫ এবং অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশসহ সব মিলিয়ে মোট ২৬ শতাংশ শুল্ককর দিতে হয়। আলু, সবজিসহ বিভিন্ন পচনশীল খাদ্যপণ্য রাখা হয় হিমাগারে। তাই কৃষি খাত বিবেচনা করে এসব যন্ত্র আমদানিতে শুল্ককর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন তারা।
কৃষিজ পণ্য সরবরাহের বিপরীতে উৎসে কর কর্তনে অব্যাহতি, বিক্রির ওপর ন্যূনতম ০ দশমিক ৬০ শতাংশ আয়কর বাতিল, মূসকের আদর্শ হার কমানো ও আগের মতো নগদ সহায়তা ২০ শতাংশ বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বাগদা ও ভেনামী চিংড়ি আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ও আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। রং ও রং জাতীয় পণ্যকে অত্যাবশকীয় পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার চেয়েছে বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।