বন্দরে নারীর ফাঁদে অপহরণ, স্বামী-স্ত্রী গ্রেপ্তার
Published: 19th, March 2025 GMT
বন্দরে নারী দিয়ে ফাঁদ পাতা অপহরণ চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা। আটককৃতরা হলো বন্দর থানার ২৪ নং ওয়ার্ডের নবীগঞ্জ নোয়াদ্দা এলাকার পীর মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে রোমান (২৫) ও তার স্ত্রী মারিয়া (১৯)।
এ ঘটনায় অপহৃত যুবক ইমন হাসান বাদী হয়ে আটকৃত স্বামী/স্ত্রীসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ্য করে বন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন তিনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের মুকফুলদি এলাকা থেকে এদেরকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করে জনতা।
পুলিশ আটককৃতদের উল্লেখিত মামলায় বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলো ডেবিড(২৮), শাহজাহান(২৪), সাইদুল(১৯) ও রিয়াদ(২৪)।
মামলার তথ্য সূত্রে জানাগেছে, বন্দরের নবীগঞ্জ নোয়াদ্দা এলাকার মীর মোহাম্মদের ছেলে রোমান, তার স্ত্রী মারিয়াকে দিয়ে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কুমিল্লা চান্দিনা সাতগাঁও উত্তর বৃষ্ণপুর গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে ইমন হাসানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ইমন হাসানকে নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড দেখা করতে আসতে বলে মারিয়া।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইমন হাসান দেখা করতে আসলে ওই সময় পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে মারিয়াসহ ১০/১২ জন ওই যুবককে অপহরণ করে তুলে নিয়ে মুখফুলদি স্কুল মাঠের r নির্জন এক কোনে নিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবিতে মারধর করে নগদ দুই হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এসময় অপহৃত যুবকের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে নারী ফাঁদ চক্রের দুই সদস্য উল্লেখিত স্বামী-স্ত্রীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, সংঘবদ্ধ একটি চক্র নারী দিয়ে ফাঁদ পেতে কৌশলে এনে অপহরণ করে মুক্তিপন আদায় করে আসছে। এ চক্রের দুই স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ অপহরণ ইমন হ স ন
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক স্ত্রী সীমার সঙ্গে প্রেম করায় তাজকিরকে হত্যা করেন অভি: পুলিশ
সাবেক স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার সীমার সঙ্গে প্রেম করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ইসমাইল হোসেন অভি ও তার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাজকীর আহম্মেদকে হত্যা করেন। সীমার মোবাইল থেকে অভি ম্যাসেজ দিয়ে তাজকীরকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে খুলনায় ডেকে আনে। পরে অভি ও তার তিন বন্ধু মিলে তাজকীরের হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে ও গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। পরে মরদেহ বস্তায় ভরে ভৈরব নদীতে ফেলে দেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভৈরব নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সীমাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও অভি পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আজ সোমবার দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডেপুটি কমিশনার এম এম শাকিলুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি আসিফ মাহমুদ নামে এক যুবক খালিশপুর থানায় তার ফুফাতো ভাই তাজকীরের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি জিডি করেন। তাজকীর রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে যে, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে সীমার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে তাজকীর তার চাচাতো ভাই রনির শ্যালিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে খুলনায় আসেন। তাজকীর খালিশপুর থানার গোয়ালখালি এলাকায় আসিফ মাহমুদের বাড়িতে এক ঘণ্টা অবস্থান করেন।
এরপর তাজকীর খালিশপুর নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকায় প্রেমিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার বাবা মুরাদ হোসেন বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় ২৫ ফেব্রুয়ারি অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ ওই দিন সীমা, অভির মা লাবণী বেগম ও শহিদুল ইসলাম সাহিদ নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খানজাহান আলী থানার ভৈরব নদীর বালুর মাঠ ঘাট থেকে বস্তাবন্দী একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাজকীরের পরিবারের সদস্যরা মরদেহের পরনে থাকা পোশাক দেখে শনাক্ত করেন।
ডেপুটি কমিশনার জানান, ৩ বছর আগে পরিবারের অমতে সীমার সঙ্গে ইসমাইল হোসেন অভির বিয়ে হয়। পরবর্তীতে তাদের ডিভোর্স হয় এবং অভি দেশের বাইরে চলে যান। এ সময় তাজকীরের সঙ্গে সীমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডিভোর্সের ৭-৮ মাস পর অভি দেশে ফিরে এসে সাবেক স্ত্রী সীমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং তাদের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক তৈরি হয়।
এ সময় ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়, যা একমাত্র সীমা জানতো। সীমা একই সঙ্গে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দুই প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, যাতে কেউই বিষয়টি বুঝতে না পারে। অভি আর সীমার নতুন করে সম্পর্কের বিষয়টি তাদের উভয় পরিবারের লোকজন জানলেও তাজকীরের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি অপ্রকাশ্যে থেকে যায়।
কিন্তু ঘটনা পরিক্রমায় সীমার সঙ্গে তাজকীরের প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনে যান অভি। এটা নিয়ে সীমা এবং অভির মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে। অভি তাজকীরকে শায়েস্তা করার ফন্দি আঁটেন। এবং সীমার ব্যবহৃত গোপন মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাজকীরকে খুলনায় আসতে বলেন।
তাজকীর খুলনা এলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভি তার বন্ধুদের সহায়তায় তাকে অপহরণ করে নিজ বাসায় নিয়ে যান। অভিসহ চারজন মিলে তাজকীরকে হত্যা করেন। এরপর তারা ডাকবাংলো এলাকা থেকে ১০০ টাকা দিয়ে বস্তা কিনে লাশ তাতে ভরে ইজিবাইকে করে ভোর রাতে হার্ডবোর্ড খেয়া ঘাটে নিয়ে যান। সেখান থেকে আগেই ভাড়া করে রাখা ট্রলারযোগে দৌলতপুর যাওয়ার দিকে নদীর মাঝখানে নিয়ে লাশ ফেলে দেন।
এর আগে গ্রেপ্তার সীমা, লাবণী ও সাহিদ কারাগারে রয়েছেন। সাহিদ হত্যার পর লাশ বহনের কাজে ব্যবহার করা ইজিবাইকচালক। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত অভি’র বন্ধু মশিউর রহমান জিতু ও রিয়াদ কাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মূল আসামি ইসমাইল হোসেন অভিকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।
ডেপুটি কমিশনার বলেন, তাজকীর হত্যার নৃশংসতা যেন সিনেমাকেও হার মানিয়েছে।