ফতুল্লায় পিতার ওপর প্রতিশোধ নিতে শিশু পুত্রকে অপহরণ করে হত্যা
Published: 19th, March 2025 GMT
ফতুল্লায় পিতা হাশিম মিয়ার ওপর প্রতিশোধ নিতে তার ৭ বছরের শিশু পুত্র মুস্তাকিনকে অপহরন করে হত্যা ও লাশ গুম করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন- ফতুল্লা থানার লামাপাড়া দরগাহ বাড়ী মসজিদ সংলগ্ন সালাম মিয়ার ভাড়াটিয়া ওবায়েদউল্লাহ বাবুর পুত্র তানজীল (২৪) ও একই বাড়ীর ভাড়াটিয়া মৃত ফরজুল ইসলামের পুত্র নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলম (২০)।
বুধবার (১৯ মার্চ) জেলা ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
জানাগেছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ও নিহত শিশুর পরিবার পাশাপাশি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। একটি মোবাইল নিয়ে তানজিলের সাথে নিহত শিশু মুস্তাকিনের বাবা হাশিম মিয়ার সাথে ঝগড়া হয়। এতে করে তানজিল তার একই বাসার ভাড়াটিয়া সহযোগী নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলমকে নিয়ে শিশুটিকে অপহরন সহ হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
প্রথমে তারা ফতুল্লা ডিআইটি মাঠ থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার কিনে। তারপর পরিকল্পনানুযায়ী ৫ জানুয়ারী সন্ধ্যার দিকে প্রথমে শিশুটির হাতে ২০ টাকা দেয় তানজিল। পরে পায়ে হাঁটিয়ে রাস্তায় এনে দুটি চিপস কিনে হাতে দিয়ে অটোরিক্সায় করে ফতুল্লা গুদারাঘাট দিয়ে কেরানীগঞ্জের কাওটাইল এলাকায় যায়।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদের পেছনে ঝোপের ভিতরে নিয়ে গিয়ে শিশুটির মুখে কস্টটেপ পেচিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেয় নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহালম। এ সময় তানজীল তার সাথে থাকা সুইচ গিয়ার দিয়ে শিশুটিকে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে লামাপাড়াস্থ বাসায় চলে আসে।
এদিকে, শিশুটিকে না পেয়ে তার পরিবার যখন সন্ধান চেয়ে মাইকিং করেছিলো ঘাতকরাও সে সময় মাইকিং করে। দুতিন দিন পর তারা তাদের নিজ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিং চলে যায়। ঘটনার ১৩ দিন পর ১৮ জানুয়ারী দুপুরে লোক মারফত জানতে পেরে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। কোন পরিচয় না পাওয়ায় লাশটি অজ্ঞাত নামা হিসেবে দাফন করা হয়।
পরবর্তীতে ২০ জানুয়ারী কেরানীগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। অপরদিকে শিশুটির বাবা ৬ জানুয়ারী ফতুল্লা মডেল থানায় একটি নিখোঁজ সাধারন ডায়েরী করেন। পরবর্তীতে নিখোঁজ শিশুটির সন্ধান না পেয়ে শিশুটির বাবা ১৪ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অপহরন মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ডের ৭২ দিন পর ১৮ মার্চ সকাল নয়টার দিকে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার নান্দাইল উপজেলার সামনে থেকে প্রথমে নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলমকে পরে দুপুর বারোটার দিকে একই জেলার ফুলবাড়িয়া থানার কাচিজোড়া থেকে তানজিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের দেখানো মতে পুলিশ রাত ৮ টার দিকে ফতুল্লা থানার লামাপাড়াস্থ তানজিদের বাসা থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ারটি উদ্ধার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) "ক" সার্কেল হাসিনুজ্জামান জানান, শিশুটির বাবার উপর প্রতিশোধ নিতেই ফতুল্লা থেকে শিশুটিকে অপহরন করে নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জ থানার কাওটাইল এলাকায় নিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানকার পুলিশ নিহত শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পরিচয় না পেয়ে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করে এবং পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা হয়।
এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যমতে কেরানীগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করা হলে শিশুটির পরিবার থানায় গিয়ে পুলিশের নিকট রক্ষিত নিহত শিশুর জামা কাপড় থেকে পরিচয় সনাক্ত করা হয়।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য ন র য়ণগঞ জ র পর ব
এছাড়াও পড়ুন:
কয়েকশত লোক বাড়ি হামলা করে বাবা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের নাওগাঁও দক্ষিণপাড়া গ্রামে বাবা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে স্থানীয় সালিশ থেকে গিয়ে কয়েকশত মানুষ বাড়িঘর ভাঙচুর করে নিজ ঘরে বাবা আব্দুল গফুর (৪০) ও ছেলে মেহেদী হাসানকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে। হত্যা করার পর রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে গিয়ে হারুন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি, দোকান ও একটি মাজার ভাঙচুর করেছে লোকজন।
বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার কাজী আখতারুল আলম। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম প্রায় পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে। যারা গ্রামে আছে, তারাও ভয়ে কিছু বলতে রাজি হয়নি।
আরো পড়ুন:
নরসিংদীতে নারীর মরদেহ উদ্ধার, স্বামী পলাতক
নড়াইলে ছুরিকাঘাতে মাইক্রোবাস চালক নিহত
নাওগাঁও গ্রামের হযরত আলীর ছেলে আব্দুল গফুর ও আব্দুল গফুরের ছেলে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদকদ্রব্য বিক্রি ও চুরির অভিযোগ ছিল। এ সব কারণে তাদের নিজের গোষ্ঠীর লোকজনও অতিষ্ঠ ছিল বলে গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য বিক্রি ও চুরি ঘটনায় গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে গ্রামে সালিশে বসার কথা ছিল। দুপুরে গফুরের বাড়ি সংলগ্ন নাওগাঁও হোসেনীয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সামনে গ্রামের শত শত মানুষের সালিশ বসে। সালিশে আব্দুল গফুর ও মেহেদী হাসান উপস্থিত না হয়ে নিজ ঘরে রাম দা নিয়ে বসে থাকে। তাদের খোঁজে সালিশের লোকজন বাড়িতে গেলে দা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে আব্দুল গফুর। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন দা দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আব্দুল গফুর ও তার ছেলে মেহেদী হাসানকে হত্যা করে। বাবা ও ছেলেকে হত্যা করার পর শত শত মানুষ রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে গিয়ে হারুন অর রশিদ নামে একজনের বাসা, দোকান ও একটি মাজার ভাঙচুর করে।
আব্দুল গফুরের স্ত্রী শিল্পী আক্তার বলেন, ‘‘স্থানীয় হাবিবুর রহমানসহ শত শত মানুষ সালিশের নামে আমার স্বামী ও ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। যত অপরাধই করে থাকুক দেশে আইন আছে, আইনের মাধ্যমে বিচার হতো। বাবা ও ছেলেকে কেন নির্মমভাবে হত্যা করলো?’’
বাবা ও ছেলে নিহত হওয়ার পরপরই সালিশকারীরা ঘা ঢাকা দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছেন।
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকনুজ্জামান জানান, শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশ বসেছিল। সালিশ থেকে গিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/মিলন/বকুল