কিস্তিতে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, এসআই প্রত্যাহার
Published: 19th, March 2025 GMT
মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার না করতে কয়েক দফায় লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সিলেটের বিশ্বনাথ থানার এসআই মো. আলীম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাকে বিশ্বনাথ থানা থেকে সিলেট পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়।
জানা গেছে, অভিযুক্ত এসআই আলীম উদ্দিন ঘুষ নিয়েও কথামতো কাজ করেননি। যে কারণে ঘুষের টাকা ফেরত চান ভুক্তভোগী। কিন্তু বিষয়টি বারবার অস্বীকার করেন এসআই আলীম। এর আগে, ঘুষ লেনদেনের পরপর দুই দফার ভিডিও গোপনে ধারণ করে রাখেন ফয়সল নামের ওই ভুক্তভোগী। সেই ভিডিওটি মঙ্গলবার বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, থানার বৈঠকখানায় বসে গুনে দেওয়া ঘুষের কিস্তি হাসিমুখে পকেটে রাখছেন এসআই আলীম। ভিডিওতে তিনি বলছেন, চার্জ শিটের জন্য লাগবে পুরো ২০ হাজারই। অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, মামলার এমসির জন্য অন্য কিস্তির পুরো ২০ হাজারের জন্য দেন-দরবারও করছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের আনরপুর গ্রামের মকবুল আলী ও তার প্রতিপক্ষ জুনেদ হোসেন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ২০ আগস্ট মকবুল আলী মামলা করেন। আর ওই মামলার তদন্তভার পান এসআই আলীম। এরপর আসামি জুনেদ মামলার বিষয়টি দেখভালের জন্য দাউদপুর গ্রামের ফয়সল আহমদকে দায়িত্ব দেন। এর সুবাধে তিনি মামলার বিষয়ে এসআই আলীমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে মামলার বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দেন এসআই আলীম। পরবর্তীতে একাধিক সময়ে ২০ হাজার করে ৪ দফা ও ১০ হাজার করে ২ দফা মোট এক লাখ টাকা কৌশলে আদায় করেন তিনি। কিন্তু টাকা নিয়ে কথা মতো কাজ না করে উল্টো ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাকেও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন এসআই আলীম। এরপর ভুক্তভোগী ফয়সল আহমদ ঘুষের ভিডিওটি ফেসবুকে ছেড়ে দেন এবং সিলেট জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
ভুক্তভোগী ফয়সল আহমদের অভিযোগ, সরলতার সুযোগ নিয়ে হীন উদ্দেশ্যে মামা-ভাগ্নে সম্পর্ক পেতে দারোগা আলীম তাকে বোকা বানিয়ে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার তিনি সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি এসআই আলীম উদ্দিন। তবে, বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা এবং ভিডিও ভাইরালের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এসআই আলীম উদ্দিনকে ক্লোজড করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভীতি কাটাতে গণিতের চর্চা বাড়াতে হবে
গণিত আমাদের চিন্তাশক্তি ও যুক্তিকে ক্ষুরধার করে। গণিতের নিজস্ব একটি ভাষা রয়েছে। এই ভাষা আয়ত্ত করতে হলে গণিতের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। গণিতভীতি কাটাতে বাড়াতে হবে গণিত নিয়ে চর্চা।
জাতীয় স্নাতক গণিত অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্বে অতিথি ও আলোচকদের কথায় উঠে এল এসব বিষয়। গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ মুজিবুর রহমান গণিত ভবনে এ আয়োজন করা হয় বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
‘বাংলাদেশ গণিত সমিতি–এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশন ১৫তম জাতীয় স্নাতক গণিত অলিম্পিয়াড ২০২৪’-এর চূড়ান্ত পর্বের এই আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগ। চূড়ান্ত পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান। আয়োজনের উদ্বোধন করেন তিনি। পরে অতিথি, প্রতিযোগী ও শিক্ষার্থীরা গণিত ভবন থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করেন।
ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফেরদৌসের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, বাংলাদেশ গণিত সমিতির সভাপতি ও পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শহীদুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শওকাত আলী, এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি এম নুরুল আলম ও ১৫তম জাতীয় স্নাতক গণিত অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মনিরুল আলম সরকার বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘গণিত আমাদের চিন্তাশক্তি ও যুক্তিকে ক্ষুরধার করে। গণিতের জ্ঞান পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মজীবনে সব সময় কাজে লাগবে।’
এই অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের সম্মিলন ঘটেছে মন্তব্য করে উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান আরও বলেন, সবার মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে এ ধরনের আয়োজন কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ গণিত সমিতির সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি কাটাতে গণিতের চর্চা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে এই অলিম্পিয়াড কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অলিম্পিয়াডের সমাপনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আবদুস সালাম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং ছয়টি বিভাগ থেকে আঞ্চলিক পর্বের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্নাতক পর্যায়ের ৮৩ জন শিক্ষার্থী অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেন। চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী ১০ জন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফওজিয়া আফিয়া ইসলাম ও মো. সবুজ রানা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মো. জিম মিম সিদ্দিক, অনিন্দ্য বিশ্বাস, তাহজিব হোসেন খান, মো. আশারুল ইসলাম ও ফাহিম মুহতামিম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. গোলাম মুসাব্বির, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির আহনাফ মারজুক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. সুমন।