সিদ্ধিরগঞ্জে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নারী শ্রমিককে নির্যাতন
Published: 19th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ার চুরির অপবাদ দিয়ে এক নারী শ্রমিককে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিতী ট্রেড এজেন্সির মালিক আব্দুল হান্নান খানের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) কদমতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রুমি আক্তার আয়শা (২৫) বাদী হয়ে দুজনকে অভিযুক্ত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
আহত রুমি আক্তার সাতক্ষীরার আশাশুনির বড়দল এলাকার মোস্তাক মালির মেয়ে। বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায় বসবাস করেন। অভিযুক্তরা হলেন, হান্নান খান (৪০) এবং রাসেল (৩০)।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মাস পূর্বে রুমি আক্তার আয়শা কদমতলী এলাকায় অবস্থিত প্রতিতি ট্রেড এজেন্সি নামীয় গার্মেন্টস ট্রেনিং সেন্টারে নিযুক্ত হোন। এরপর বিগত সময়ে আমি ঠিকভাবে কাজ করলেও হান্নান খান তার বেতন ভাতা প্রদান না করে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকে।
এরই ধারবাহিকতায় একাধিকবার তার বেতনের টাকা দাবি করলে হান্নান খান তাকে বেতনের টাকা প্রদান না করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যসহ কুপ্রস্তাব প্রদান করেন।
গত ৩ মাস আগে থেকেই হান্নান খান, রাসেলের সাথে প্ররোচনা করে তাকে ফুসলিয়ে রাসেলের বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই নারী শ্রমিক কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা তাকে অকথ্য ভাষায় গাল-মন্দসহ নানানভাবে হুমকি প্রদর্শন করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ মার্চ সকালে হান্নানের কাছে তার পাওনা বেতন দাবি করলে সে তাকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে এসএস পাইপ দিয়ে এলোপাথারি জখম করে এবং শ্লীলতাহীনতার চেষ্টা চালায়।
এসময় রুমি আক্তার আয়শার সঙ্গে থাকা একটি ৪ আনি ওজনের স্বর্ণের আংটি, একটি ৭ আনি ওজনের স্বর্ণের চেইনসহ একটি ব্যাগ রেখে দেয়। এসময় তার ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠায়।
ভুক্তভোগী রুমি আক্তার আয়শা বলেন, আমি তিন মাস ধরেই এখানে কাজ করছিলাম। কিন্তু তারা বেতন নিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করে। একসময় প্রতিতী ট্রেড লাইসেন্সের মালিক আব্দুল হান্নান খান আমাকে কুয়াকাটা নেওয়ার কুপ্রস্তাব দেয়।
আমি এতে রাজী না হলে আমার উপর বর্বর হামলা চালায়। তাদের হামলায় ডান হাত দিয়ে আমি এখন কোনো কাজ করতে পারছি না। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
অভিযুক্ত হান্নান খান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। সিদ্ধিরগঞ্জে এসে বিস্তারিত তথ্য জানাবেন বলে জানান তিনি।
তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পরে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনূর আলম বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দোষীদের কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
দুই বছর আগে রাজধানীর কদমতলী থানার খালপাড় এলাকায় গায়ে গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মিজান সরদার নামে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। রোববার সকালে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার আগে আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত মিজান পিরোজপুরের নাজিরপুর থানার বাবুরহাট গ্রামের মৃত আওয়াল সরদারের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মীম আক্তার রুপার সঙ্গে ঘটনার ১২ বছর আগে মিজান সরদারের বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। কদমতলীর খালপাড়ের ‘ইসলাম টাওয়ার’ নামে একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় বসবাস করতেন তারা। যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগী তার স্বামীর নির্যাতনের শিকার হন। এর আগে আসামি মিজান তার শ্বশুরের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি জমি এবং সাত লাখ টাকা মূল্যের একটি দোকান যৌতুক হিসেবে নেন।
২০২৩ সালের ৬ মে রাত ১০ টার দিকে মিজান সরদার ভুক্তভোগী রুপার কাছে আরও যৌতুকের টাকা দাবি করলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে মিজান তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। রাত তিনটার দিকে যখন ভুক্তভোগী ও তাদের সন্তানরা ঘুমাচ্ছিল তখন মিজান সরদার একটি ফ্রাইং প্যানে সয়াবিন তেল গরম করে তার ওপর ঢেলে দেন। এতে গুরুতর দগ্ধ হয়ে ভুক্তভোগী চিৎকার করেন। এ সময় বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার গিয়ে ভুক্তভোগী ও তার সন্তানদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায়। যেখানে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রুপার বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ৯ মে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে ২৫ মে ভুক্তভোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগে ভুক্তভোগী ১৪ মে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলামের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেন। একই আদালতে আসামি মিজান সরদার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
তদন্ত শেষে পুলিশের উপ-পরিদর্শক সরোজিৎ কুমার ঘোষ একই বছরের ৩১ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলার বিচার চলার সময় আদালত ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।